দুয়ারে বিধানসভা নির্বাচন। আর সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এবার তফসিলি জাতি–উপজাতি এবং পিছড়ে বর্গের জন্য পৃথক সেল বা কমিটি গঠন করল তৃণমূল কংগ্রেস। শুধু তাই নয়, এই প্রথমবার দলের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে কমিটির সদস্যদের নাম উল্লেখ করা হল। যদিও বিজেপির এই ধরনের মোর্চা আগে থেকেই রয়েছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আসন কমে যাওয়ার পরও ভার্চুয়াল জগতে তেমন অগ্রগতি দেখাতে পারেনি বাংলার শাসকদল। হিন্দুদের ভোট পেতে মরিয়া বিজেপি। তবে সেই ভোটব্যাঙ্ক ভাঙতে কোমর বেঁধে প্রস্তুতি নিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসও। তাই এই পদক্ষেপ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
বিজ্ঞপ্তি জারি করে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পৃথক পৃথকভাবে তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির জন্য কমিটি গঠন করা হল। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের নেতাদের এই কমিটিগুলির মাথায় বসানো হয়েছে। যাতে পিছিয়ে পড়া শ্রেণি মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ আরও বাড়ানো যায়। এদিন তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি কমিটির সদস্যদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এই বিষয়ে তৃণমূলের এক নেতা বলেন, ‘কমিটি গঠন করা আগেই হয়েছিল। এবার পৃথক পৃথকভাবে করা হল। কারণ অনেকের অনেক অভিযোগ, পরিষেবা জানার এবং জানানোর থাকে। সেগুলি যাতে সুচারুভাবে করতে পারেন তাই এই পদক্ষেপ।’
তালিকা অনুযায়ী, তফসিলি জাতি কমিটির সভাপতি হয়েছেন ড. তাপস মণ্ডল, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে রয়েছেন প্রতিমা মণ্ডল, অসিত কুমার মণ্ডল, নবীন চন্দ্র বাগ। এছাড়াও কমিটিতে রয়েছেন ছায়া দলুই, স্বপন বাউড়ি, মনোদেব সিনহা–সহ বহু সদস্য। তফসিলি উপজাতি কমিটির মাথায় রয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের দেবু টুডু। কমিটির অন্যান্য পদে রয়েছেন জেমস কুজুর, সুকুমার মাহাতো, পরেশ মুর্মূ, জোসেফ মুণ্ডা–সহ আরও অনেকে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে তৃণমূল কংগ্রেস ২২টি আসন পেয়েছে। সেখানে আগে পেয়েছিল ৩৪টি। আবার বিজেপির আসন বেড়ে ১৮টি হয়েছে। এই পরিসংখ্যান সম্ভব হয়েছে এই পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর ভোট গেরুয়া শিবিরে গিয়ে পড়ার জন্য। এবার তা আর হতে দিতে চায় না ঘাসফুল শিবির। ৮৪টি আসন তফসিলি জাতি–উপজাতি সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত। সেখানে ৪৬টি আসনে বিজেপি এগিয়ে আছে।
এবারের বির্বাচনে সমাজের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ভোটকে আলাদা আলাদাভাবে টার্গেট করছে গেরুয়া শিবির। তাদের সেই মাস্টার প্ল্যানের পালটা দিতে তৈরি তৃণমূল কংগ্রেসও। সেই দিকে নজর রেখেই এবার দলের তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির কমিটিকে আলাদা করা হল। যাতে আলাদা আলাদা সম্প্রদায়ের মানুষকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া যায়। এই পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়কে নিয়ে কাজ করছে আরএসএস। বনবাসী কল্যাণ আশ্রম, শ্রী হরি সৎসঙ্গ সমিতি, সেবা ভারতী এবং বাস্তুহারা সহায়তা সমিতির মাধ্যমে তারা কাজ করছে।
তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য পৃথক তিনটি কমিটি করেছে। এছাড়া রাজবংশী, মতুয়া এবং নমঃশূদ্রদের নিয়ে কাজ করছে। এই বিষয়ে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেস মানুষকে বোকা বানাতে এইসব করছে। এই সমস্ত পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। তৃণমূল কংগ্রেস এখন শেষের দিকে এগিয়ে গিয়েছে।’