রাত ১২টা ১৩ মিনিট। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে বিক্ষোভ তুলে নেওয়ার জন্য আন্দোলনকারীদের শেষবার অনুরোধ করেছিল বিধাননগর পুলিশ। মাইকে ঘোষণা হল, ‘দু’মিনিট সময় দেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যে এলাকা খালি করে দিন।’ কর্ণপাত করেননি গত চারদিন ধরে ধর্না–অনশনে বসে থাকা চাকরিপ্রার্থীরা। আর সিপিআইএম এবং বিজেপির নেতারাও ততক্ষণে হাজির ঘটনাস্থলে। তুমুল স্বরে উঠল রাজ্য সরকার বিরোধী স্লোগান। তারপর রাত ১২টা ১৭ মিনিটে আসরে নামলেন পুলিশ কর্মীরা। তবে লাঠি বা অন্য কোনও অস্ত্র ছাড়াই। কয়েকজনের মাথায় হেলমেট ছিল। কোনওরকম মারধর বা অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের রাস্তাতেই গেলেন না তাঁরা। ঠাণ্ডা মাথায় আন্দোলনকারীদের এনে তোলা হল পুলিশের গাড়িতে। ঠিক ১০ মিনিট, রীতিমতো পেশাদারি কায়দার গোটা অপারেশন শেষ করলেন উর্দিধারীরা। ফাঁকা হয়ে গেল করুণাময়ী থেকে সেক্টর ফাইভ যাওয়ার রাস্তা। এই ঘটনা নিয়ে টুইট আক্রমণ করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আর উপযুক্ত জবাব দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ।
ঠিক কী টুইট করেছেন শুভেন্দু? এই ইস্যুতে কড়া নিন্দা করে টুইট করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি টুইটে লিখেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ সল্টলেকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অফিসের সামনে ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণদের অবস্থানকে নির্মমভাবে বলপ্রয়োগ করে তুলে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, না কি, হিটলারের জার্মানি?’ মিডনাইট অপারেশনে আন্দোলনকারীদের আটক করে বিধাননগর কমিশনারেটের বিভিন্ন থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ২০১৪ সালের প্রাথমিক টেট উত্তীর্ণ আন্দোলনকারীদের এই হাল দেখে অদূরে সার্ভিস রোডে ধর্নায় বসেছিলেন ২০১৭ সালের টেট উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীরা। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে তাঁরাও আন্দোলন তুলে নেন।
কী জবাব দিয়েছেন কুণাল ঘোষ? একদিকে টেট আন্দোলনকারীদের সরানো এবং অন্যদিকে শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তিনি পাল্টা টুইট করে জবাব দেন, ‘তাহলে রেল, সেনাবাহিনী–সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় যাঁরা পাশ করেও চাকরি পাননি, তাঁদের সকলকে অবিলম্বে নিয়োগের দাবিতে কেন্দ্রের অফিসগুলির সামনে ধর্ণা অবরোধে বসলে সেটাও যুক্তিসম্মত হবে তো? বছরে ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি কোথায় গেল? ২০১৪ সাল থেকে ৮×২=১৬ কোটি চাকরির তালিকা প্রকাশ হোক।’
উল্লেখ্য, পুলিশকে আন্দোলনস্থলে ১৪৪ ধারা কার্যকরের বার্তা দেয় আদালত। সেই মতোই ব্যবস্থা নেয় প্রশাসন। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ পুলিশকর্তারা পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে জানান, এক ঘণ্টার মধ্যে উঠে যেতে হবে আন্দোলনকারীদের। নাছোড় আন্দোলনকারীরা তাতে সাড়া দেননি। উল্টে ১৪৪ ধারা যাতে লঙ্ঘিত না হয়, সেটা নিশ্চিত রেখে চারজনের ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। যদিও তা বেআইনি বলে জানিয়ে দেয় পুলিশ। এদিন বেলায় টেট ২০১৪ উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীদের পাশাপাশি অবস্থানে বসে যান ২০১৭ সালের প্রার্থীরাও।