বিজেপির নবান্ন চলে কর্মসূচিকে ঘিরে দিনভর ধুন্ধুমারের পর ফের একবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হুঁশিয়ারি দিলেন দলের যুব মোর্চার কেন্দ্রীয় সভাপতি তেজস্বী সূর্য। এদিন রাজ্য পুলিশেরও তুমুল সমালোচনা করেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘গুন্ডা’ বলে সম্মোধন করে বলেন, পশ্চিমবঙ্গের যুবা তাঁর মতো দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাকে অনুসরণ করবে না।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বিজেপির রাজ্য সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠকে তেজস্বী বলেন, ‘বাংলার রাজনীতির ইতিহাসের অন্যতম কালো দিন। গণতন্ত্র ও সংবিধানকে প্রকাশ্য দিবালোকে খুন করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। ভারতের সব থেকে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার রয়েছে এই পশ্চিমবঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হবে। তাই আমি এখানে এসেছি। রাজ্যের সমস্ত জাতীয়তাবাদী যুবাকে আমি আশ্বস্ত করতে এসেছি, ভারতের সমস্ত যুবা আপনাদের পাশে একজোট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিজেদের একা ভাববেন না’।
মমতার নবান্ন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করে তেজস্বী বলেন, ‘লড়াইয়ের এই শুরু। মমতা দিদি যুবা মোর্চাকে ভয় পেয়েছেন। তাই নবান্নকে ২ দিনের জন্য বন্ধ রেখেছেন। এই এই ভয় ভাল। এই ভয় থেকে নতুন বাংলা ও নতুন ভারতের জন্ম হবে’।
আগামীতে রাজ্যে বিজেপির ক্ষমতায় আসছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঁধার সরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি সরকার গঠিত হবে। নতুন সূর্যের উদয় হবে। আজকের রাজনৈতিক আন্দোলন গণআন্দোলনে পরিণত হয়েছিল। দেওয়াল লিখন স্পষ্ট। আগামী সরকার, বিজেপির সরকার’।
এর পরই পুলিশের উদ্দেশে আক্রমণ শানান তেজস্বী। বলেন, ‘রাজ্যের পুলিশের আইনের শাসনে ভরসা নেই। তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুতুলে পরিণত হয়েছে। তৃণমূলের গুন্ডারা তাদের ইচ্ছামতো নাচাচ্ছে। তাদের নির্দেশেই আমাদের কর্মীদের ওপর নির্মম – বর্বর আচরণ হয়েছে। আমাদের ১,০০০-এর বেশি কর্মী আহত হয়েছেন। ৫০০-র বেশি কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে’।
বিজেপি কর্মীদের ওপর পুলিশি আক্রমণের অভিযোগ তুলে বলেন, ‘গত রাত থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ বাস, ট্রেন ও ফেরি পরিষেবা বন্ধ করে রেখেছে। এভাবে কি কোনও গণতান্ত্রিক সমাজ চলে? এদেশে কি কোনও রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরার অধিকার নেই? মানুষ যাতে কর্মসূচিতে যোগ না দিতে পারে সেজন্য গোটা হাওড়া ব্রিজ আজ বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। কয়েক জায়গায় পুলিশ বর্বরভাবে লাঠি চার্জ করেছে’।
জলকামান থেকে যে নীল রঙের জল ছেটানো হয়েছিল তা নিয়ে এদিন তদন্ত দাবি করেন তেজস্বী সূর্য। তিনি বলেন, ‘এদিন আমাদের কর্মীদের ওপর জলকামান থেকে যে জল ছেটানো হয়েছে তাতে গাঢ় নীল রঙের কোনও রাসায়নিক মেশানো ছিল। গোটা পৃথিবীতে এত জায়গায় জলকামান থেকে জল ছেটানোর ছবি দেখেছি, কিন্তু কোথাও এমন রাসায়নিক দেখিনি। এই রাসায়নিক মেশানো জল গায়ে লাগলেই জ্বালা করছে, মানুষ বমি করছে। ওই জলে কী মেশানো হয়েছিল তা রাজ্য সরকারকে তদন্ত করে দেখার আবেদন জানাচ্ছি। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অনুরোধ, এর তদন্ত করুন। এভাবে মানুষের ওপর রাসায়নিক ছেটানো মানবাধিকারের নির্মম হত্যা’।
এদিন নাম করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ শানান তেজস্বী। তিনি বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের যুবারা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো একজন গুন্ডাকে অনুসরণ করবেন না। তাঁরা অনুসরণ করবেন স্বামী বিবেকানন্দের পদচিহ্ন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একজন পরিবারতন্ত্রের ধ্বজাধারী দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা। আম বাঙালির দুঃখ – কষ্টে সমবেদনাহীন তিনি’।
এর পরই তৃণমূলনেত্রীকে সরাসরি হুঁশিয়ারি দেন তেজস্বী। বলেন, ‘আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে চাই। এটা ছিল আমার প্রথম আন্দোলন। আমরা ভবিষ্যতে এই লড়াই চালিয়ে যাব। পশ্চিমবঙ্গ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বৈরাচারী শাসন শেষ করে বিজেপির সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে’।