অগ্নিমূল্য আলু–পেঁয়াজ। হেঁশেলে টান পড়েছে বাংলার মানুষের। এবার এই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সরাসরি কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চার পাতার ওই চিঠিতে তাঁর অভিযোগ, অত্যাবশকীয় পণ্যের তালিকা থেকে বাদ পড়ায় এভাবে দাম বেড়েছে আলু, পেঁয়াজের। আর এই সুযোগে মজুতদাররা নিজেদের ভাঁড়ার ভরছে। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে মোদিকে পরিষ্কার জানিয়েছেন, কেন্দ্র যদি এই কোভিড মহামারী পরিস্থিতিতে দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে তবে রাজ্যের হাতে ক্ষমতা দিক। রাজ্যই আলু, পেঁয়াজ–সহ অন্য বিভিন্ন পণ্যের দাম কমিয়ে দেখাবে। চিঠিতে মমতা জানিয়েছেন, রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করে খুব কম সময়ে তাড়াহুড়ো করে নতুন কৃষি আইন তৈরি করেছে কেন্দ্র। এবং এই কৃষি আইনে অত্যাবশকীয় পণ্যের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে আলু, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল, তৈলবীজের মতো পণ্যকে। এবং এর জেরে সরাসরি প্রভাব পড়েছে বাজারে। বেড়ে চলেছে দাম।
সোমবার রাজ্য তথা কলকাতার বিভিন্ন বাজারে জ্যোতি আলুর দাম ছিল ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। চন্দ্রমুখী ৪৫। আর পেঁয়াজ কোথাও ৬০–৭০, কোথাও আবার ৮০–৯০ টাকা। উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন বাজারে এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ হানা দিলেও লাভ হচ্ছে না। দাম কমছে না আলু, পেঁয়াজের। চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন, ‘২০১৪ ও ২০১৫ সালে ঠিক একইরকম মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা ঘটেছিল, কিন্তু তৎকালীন অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন অনুযায়ী ক্ষমতা ছিল রাজ্য সরকারের হাতে। সে সময় খুব সহজেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছিল।’
এদিনের চিঠিতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন সংশোধনের প্রতিবাদ জানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, নতুন কৃষি আইনের জন্যই আজ এ অবস্থা। নতুন আইনে রাজ্যের হাত থেকে সমস্ত ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আগে পেঁয়াজ, আলুর দাম রাজ্যই নিয়ন্ত্রণ করত। এখন তা করা সম্ভব হচ্ছে না। অবিলম্বে রাজ্যগুলিকে আগের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘নতুন আইন কৃষক ও সাধারণ মানুষের স্বার্থবিরোধী।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, আলু, পেঁয়াজের এত দাম বাড়লেও সেই টাকা চাষীর ঘরে যাচ্ছে না। প্রচুর হাত ঘুরে তা বাজারে আসছে। তিনি বলেন, ‘গভীর উদ্বেগ ও চিন্তার বিষয় যে আজ আলু, পেঁয়াজের দামের ওপর কেন্দ্র কোনও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। আর রাজ্যগুলিকেও তা নিয়ন্ত্রণ করতে দিচ্ছে না।’ আর সেদিনই কেন্দ্রকে চিঠি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।