মেট্রো রেলের আয় কমছে। তাই তুলে দেওয়া হল ই–পাস। আর ই–পাস উঠে যেতেই মেট্রোর কামরা যেন বনগাঁ লোকালের আকার নিল। অভিযোগ, দূরত্ববিধির তোয়াক্কা না করেই দিনের ব্যস্ত সময় যাত্রীদের একাংশ আসন দখলের লড়াইয়ে নেমে পড়ছেন। আসনে বসা নিয়ে বচসার উপক্রম দেখা গেল। এমনকী একে অপরকে করোনাভাইরাস হবে বলে শাপ–শাপান্ত পর্যন্ত করলেন। এই পরিস্থিতিতে দূরত্ববিধি মানার বালাই না থাকায় বিপন্ন বোধ করছেন যাত্রীদের অনেকেই।
অফিস টাইমে সহযাত্রীদের এই ধরনের আচরণের প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেকেই হেনস্থার মুখে পড়ছেন বলে অভিযোগ। যাত্রীদের অনেকে ঠিকমতো মাস্ক পরছেন না বলেও অভিযোগ। প্রবীণ নাগরিকদের আসন দখল করে নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এই সমস্যার কথা শুনতে হয়েছে স্টেশন মাস্টারকে। কিন্তু তিনি ঘোষণা করতে থাকেন, ‘দয়া করে মাস্ক পরুন। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।’
মহাত্মা গান্ধী রোড স্টেশন থেকে দক্ষিণ কলকাতার একটি মেট্রো স্টেশনে আসছিলেন এক যাত্রী। তিনি নিজে একটি ফাঁকা আসনে বসলেও কিছুক্ষণ পরে সেন্ট্রাল এবং এসপ্ল্যানেড স্টেশন থেকে আরও চার–পাঁচজন যাত্রীর একটি দল উঠে খালি থাকা সব ক’টি আসনে বসে পড়ে। তিনি ঘটনার প্রতিবাদ করতেই ওই যাত্রীরা তাঁকে উপহাস করে নেমে যেতে বলেন বলে অভিযোগ। গন্তব্যে পৌঁছে বিষয়টি নিয়ে স্টেশন মাস্টারের ঘরে অভিযোগ জানাতে যান তিনি। মেট্রো কর্তৃপক্ষ মন দিয়ে সমস্যার কথা শুনলেও তাৎক্ষণিক কিছুই করে উঠতে পারেননি।
মহিলা যাত্রীদের একাংশও দূরত্ববিধির তোয়াক্কা না করেই আসনে বসে পড়ছেন বলে অভিযোগ। প্রতিবাদ করলেও কেউই তা শুনতে চাননি। এখন প্রতিটি আসনে বসার নিয়ম চালু হয়ে গিয়েছে বলেও বোঝানোর চেষ্টা করা হলে দেখে নেওয়ার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে। তখন বাধ্য হয়েই আসন ছেড়ে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ান অন্য মহিলা যাত্রী। তাঁর কথায়, ‘যদি এমন সমস্যার মুখে পড়তে হয়, তা হলে তো মেট্রোয় যাতায়াতই ছেড়ে দিতে হবে।’ এমনকী মহিলা যাত্রীদের ঝগড়া থেকে উঠে এল—এখন তো ভ্যাকসিন বেরিয়ে গিয়েছে। করোনা হলে দিয়ে নেবেন।
মেট্রো কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, যাত্রীরা যাতে দূরত্ববিধি মেনে যাতায়াত করতে পারেন, সে কথা মাথায় রেখেই ট্রেনের সংখ্যা নিয়মিতভাবে বাড়ানো হয়েছে। যাত্রীদের দূরত্ববিধি মেনে চলার কথাও প্রতিনিয়ত বলা হচ্ছে। মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আরপিএফ কর্মীরা মাইকে ঘোষণার মাধ্যমে মেট্রোর কামরায় এই নিয়ে যাত্রীদের সচেতন করছেন। প্রয়োজনে এই উদ্যোগ আরও বাড়ানো হবে। দূরত্ব–বিধি অবশ্যই মানতে হবে।’