বর্তমানে সকলের প্রশংসা অর্জন করছেন ভারতীয় দলের উইকেটরক্ষক সেনসেশন ধ্রুব জুরেল। এবার তিনি অজানা এক কাহিনি জানিয়েছেন। রাঁচি টেস্টে ভারতীয় দল যেদিন সমস্যায় পড়েছিল এবং ইংল্যান্ড দলের দেওয়া টার্গেটের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে ছিল, সেই রাতে ধ্রুব জুরেল ঠিক মতো ঘুমাতেই পারেনি। রাঁচি টেস্টে ইংল্যান্ড দল প্রথম ইনিংসে স্কোর বোর্ডে ৩৫৩ রান তুলেছিল, যার জবাবে দ্বিতীয় দিনের শেষে ভারতের স্কোর ছিল ২১৯/৭ রান। সে দিন ৩০ রানে অপরাজিত ছিলেন জুরেল এবং কুলদীপ যাদব ১৭ রানে ব্যাটিং করছিলেন। তখনও ভারত ১৩৪ রানে পিছিয়ে ছিল এবং টিম ইন্ডিয়ার হাতে ছিল মাত্র তিন উইকেট।
এমন অবস্থায় জুরেল ও কুলদীপের মধ্যে ৭৩ রানের পার্টনারশিপ গড়ে উঠেছিল। এবং এই জুটি ইংল্যান্ডকে চাপে ফেলে দিয়েছিল। নিজের কেরিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টেই সেরা ৯০ রান করেছিলেন ধ্রুব জুরেল। একটা সময়ে যখন ভারতের ১৭৭ রানে ৭ উইকেট পড়ে গিয়েছিল তখন সেখান থেকে জুরেল-কুলদীপ জুটি ২৫৩ রান তোলে, এরপরে আকাশদীপকে সঙ্গে নিয়ে স্টোরকে ২৯৩ এ নিয়ে যান জুরেল। শেষ পর্যন্ত ভারতীয় স্কোরকে ৩০৭ রানে নিয়ে যেতে সফল হন জুরেল।
এই ইনিংস সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে ধ্রুব জুরেল জিও সিনেমার 'ম্যাচ সেন্টার লাইভ'-এ একটি অজানা কাহিনি শুনিয়েছেন। ২২ বছর বয়সী এই তরুণ ক্রিকেটার জানান, শনিবার রাতে তিনি ঘুমাতেই পারেননি এবং ভারতকে ৩৫৩ রানের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার চিন্তায় ডুবে ছিলেন।
ধ্রুব জুরেল বলেন, ‘সে দিন রাতে আমি ঘুমাতেই পারিনি। আমি শুধু ভাবছিলাম কীভাবে আমি আরও কিছুক্ষণ পিচে থাকতে পারি এবং দলের জন্য আরও রান যোগ করতে পারি। দলকে কীভাবে সহায়তা করতে পারি সে কথাই ভাবছিলাম। আমি যত বেশি রান করব, রান তাড়া করার সময় দলের প্রয়োজন তত কম হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাট করতে নেমেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল টেল-এন্ডারদের উপর বিশ্বাস রাখা। আপনাকে তাদের ব্যাটিং সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে হবে, ক্রিজে থাকতে হবে এবং তাদের বিশ্বাস করাতে হবে যে এটি সম্ভব।’
প্রথম ইনিংসের পুনরাবৃত্তি করে দ্বিতীয় ইনিংসেও ভালো ব্যাটিং করেন তিনি। জুরেল যখন জয়সূচক রানটি হিট করেন তখন সকলেই নিজিদের ক্যামেরাতে সেই মুহূর্তটি ধরে রাখেন। তখন রোহিত অ্যান্ড কোম্পানি দল সহ গোটা ভারত আনন্দিত হয়েছিল। তাদের মধ্যে ছিল আরও দু'জন মানুষ, যাদের সুখের সীমা ছিল না। তারা হলেন ধ্রুবের মা, যিনি তার ছেলের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নিজের গয়না বিক্রি করেছিলেন এবং তার বাবা, যিনি যুদ্ধ করেছিলেন, হজম করেছিলেন এবং পাড়ার কটাক্ষ সহ্য করেছিলেন।
জুরেলের বাবা-মা কেমন প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন
জুরেল নিজের মাকে নিয়ে বলেন, ‘যখন আমাকে স্কোয়াডে নাম দেওয়া হয়েছিল, আমি আমার বাবা-মাকে ফোন করেছিলাম এবং তাদের খুশি আমাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় এটি প্রকাশ করতে বাধ্য করেছিল। আমার মা খেলা সম্পর্কে বেশি কিছু জানেন না, তবে তিনি জানতেন যে এটি ভারতের জন্য। আমার মা খুব বেশি ক্রিকেট দেখেন না, আমার আউট হওয়াটা দেখতে ভয় পান এবং তিনি খুব আবেগপ্রবণ। তিনি শুধু জানেন আমি কত রান করেছি আর কতগুলো ক্যাচ নিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুহূর্তটি আমার জন্য খুব মূল্যবান ছিল, সেই মুহূর্তে সবকিছু ধীর গতিতে ছিল এবং আমি কেবল তাকিয়ে ছিলাম। আমার বাবা-মা খুব খুশি এবং আবেগপ্রবণ ছিলেন। টেস্ট ক্রিকেট খেলা শৈশবের স্বপ্ন ছিল এবং এটি সত্যি হতে চলেছে। আমার বাবা-মা খুব আধ্যাত্মিক। আমি যখন আমার বাবাকে ম্যাচের জন্য ফোন করেছিলাম, তখন তিনি অবাক হয়েছিলেন। তিনি বলেন, যে রান তুমি করবে, সেটিকে তুমি ঈশ্বরকে উৎসর্গ করবে।’