ভারত গ্রুপ পর্বে তাদের আধিপত্য শুরু থেকেঅ বিস্তার করেছে এবং এখনও পর্যন্ত যে ভাবে বাকি দলগুলোকে হারিয়েছে, তাতে অনেকেই বলতে শুরু করেছে, তারা বিশ্বকাপের শিরোপা জেতার ক্ষেত্রে এক নম্বর দাবীদার। যাইহোক, ভারতের ক্রিকেট ভক্তরা নিজেদের আবেগ ধরে রেখে কঠোর প্রতীক্ষা করছে, আইসিসি-র ট্রফিতে টিম ইন্ডিয়ার খরা কাটার জন্য। এখন কাপ এবং ভারতের মধ্যে দূরত্ব মাত্র দু'টি ম্যাচের। আর এই ম্যাচে কোনও ভাবে পা হড়কানো যাবে না। সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল জিততে পারলেই, ভারত সব ম্যাচ জেতার রেকর্ড ধরে রেখে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবে।
২০১১ সালে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকে ভারত ওডিআই বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠতে পারেনি। তাছাড়া, তারা কার্যকর ভাবে এই টুর্নামেন্টের পুরো ইতিহাসে মাত্র তিন বার ফাইনালে পৌঁছেছে, ১৯৮, ২০০০৩ এবং ২০১১। তার মধ্যে টিম ইন্ডিয়া দু'বারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ২০০৩ সালে অল্পের জন্য ট্রফি অধরা থেকে গিয়েছে। ভারত ২০১১ সালের পর ২০১৫ এবং ২০১৯- দু'টি সংস্করণের সেমিফাইনাল থেকেই ছিটকে গিয়েছে। ২০১৯ সালে তো আবার নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরেই তারা বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছিল। প্রসঙ্গত, ভারত ২০০৩ সালে বিশ্বকাপের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে শেষ বার পরাজিত করেছিল। তার পর তারা ২০ বছর পর ২০২৩ চলতি বিশ্বকাপে ফের গ্রুপ লিগ পর্বে কিউয়িদের হারান রোহিত শর্মারা। ধর্মশালায় সেই ম্যাচটি ভারতের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। উভয় দলই তখন তাদের প্রথম চারটি করে ম্যাচ জিতে তেতেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত জয় ছিনিয়ে নেয় টিম ইন্ডিয়া।
কে কার জন্য বগি?
নিউজিল্যান্ডের প্রধান টুর্নামেন্টের ম্যাচে ভারতকে হারানোর প্রবণতার কারণে তাদেরকে ‘বগি’ দল হিসাবে দেখা হচ্ছে। তবে মজার বিষয় হল, গত তিনটি বিশ্বকাপের নকআউটে আয়োজক দেশের কাছে হেরেই স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে নিউজিল্যান্ডের।২০১১ সালে সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কা, যারা অন্যতম আয়োজক ছিল, তাদের কাছে হেরেছে। এবং ২০১৫ ও ২০১৯ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের কাছে যথাক্রমে হেরে ছিটকে গিয়েছে।
প্রথম ইনিংসে ব্যাট করাটা গুরুত্বপূর্ণ
এবার কি কিউয়িদের হারাতে পারবে ভারত? নিতে পারবে ২০১৯ সালের বদলা? ভারতীয় কোচিং স্টাফরা ইতিমধ্যেই পিচ ভালো করে দেখেছেন। ২০১১ সালের ফাইনালে ভারত রান তাড়া করে জিতেছিল। তা সত্ত্বেও ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করাটা একেবারেই সহজ বিষয় নয়। এই টুর্নামেন্টে ওয়াংখেড়েতে এখনও পর্যন্ত চারটি ম্যাচ হয়েছে। তার মধ্যে শুধুমাত্র এক বার রান তাড়া করা দল জিতেছে এবং সেটি ছিল অস্ট্রেলিয়া। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে হারতে বসা ম্যাচের রং দায়িত্ব নিয়ে একা বদলে দিয়েছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ১২৮ বলে অপরাজিত ২০১ রান করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন ম্যাক্সি। উল্টোদিকে উইকেট আঁকড়ে দাঁড়িয়েছিলেন প্যাট কামিন্স।তবে সেটি ছিল অলৌকিক ঘটনা। বাকি তিন ম্যাচে ওয়াংখেড়েতে দ্বিতীয় ইনিংসের স্কোর হয়েছে যথাক্রমে ১৭০, ২৩৩, ৫৫। যে তিন ম্যাচের প্রথম ইনিংসের স্কোর হয়েছিল যথাক্রমে ৩৯৯, ৩৮২ এবং ৩৫৭। প্রসঙ্গত, আফগানিস্তান বিরুদ্ধে ম্যাচে ম্যাক্সওয়েলের ম্যাজিক ট্রিকের আগে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছিল ৯১/৭।
এটা বেশ পরিষ্কার যে, টস জিতে প্রথমে ব্যাট করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। যদি ভারত রান তাড়া করে শেষ করে, তাহলে ফাইনালে তাদের জায়গা সত্যিই নির্ভর করবে তাদের ভালো ছন্দে থাকা বোলিং লাইনআপের উপর। তারা যদি নিউজিল্যান্ডকে দ্রুত অলআউট করে কম রানে আটকে দেয়, সে ক্ষেত্রে সুবিধা পাবে ভারত। এর বাইরে নিউজিল্যান্ড যদি ৩০০-এর বেশি স্কোর করে, তবে রোহিত শর্মা যে রকম আক্রমণাত্মক ভাবে শুরু করছে, তাতে তিনি লাগাম টানলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। রোহিতের ঝোড়ো মেজাজ ভারতের শুরুটা নিঃসন্দেহে শক্তিশালী করছে, সঙ্গে দলের আত্মবিশ্বাসও বাড়াচ্ছে।
তবে ম্যাক্সওয়েলের ইনিংস কিন্তু প্রমাণ করেছে, ওয়াংখেড়েতে পরে ব্যাটিং করাটা অসম্ভব নয়। ইএসপিএনক্রিকইনফো অনুসারে, হকইয়ের তথ্য থেকে জানা যায় যে, প্রায় দশ ওভারের পরে সুইং খুব বেশি সমস্যা করতে পারবে না। এবং ১৫তম ওভারের পরে সিমও পাওয়া যাবে না। তবে প্রথম পাওয়ারপ্লে চলাকালীন ছক্কা মারার চেষ্টার নাও হতে পারে এবং এটি আশা করা যুক্তিসঙ্গত যে, রোহিত সেক্ষেত্রে প্রথম ১০ ওভারে বড় শট খেলবেন না। তিনি কিন্তু রবিবারও নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে যথেষ্ট সংযত ছিলেন। তবে ওয়াংখেড়েতে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামলে হয়তো তার চেয়ে বেশি সংযত থাকবেন রোহিত। তাছাড়া ভারতের মিডল এবং লোয়ার-মিডল অর্ডার অনেক বার দেখিয়ে দিয়েছে যে, যদি দলের হাতে উইকেট থাকে এবং ৩৫ ওভারের কাছাকাছি একটি মোটামুটি ভালো স্কোর থাকে, তাহলে কেএল রাহুল, শ্রেয়স আইয়ার, সূর্যকুমার যাদব এবং রবীন্দ্র জাদেজা বাকিটা সামলে নিতে পারবেন।
উইলিয়ামসন এবং রবীন্দ্রকে পাচ্ছেন
নিউজিল্যান্ড কোনও বিগ-হিটার দল নয়, কিন্তু তারা এমন একটি দল, যেখানে কিছু বিগ-হিটার আছে। ডারিল মিচেল প্রয়োজনের সময় দ্রুত স্কোর করতে পারেন এবং নীচের দিকে নেমে দ্রুত স্কোর করেন গ্লেন ফিলিপস। তবে এটি কোন টি-টোয়েন্টি নয় এবং তারা আশার বিপরীতে আশা করবে যে, টপ অর্ডারের ব্যাটাররা ইনিংসকে গভীরতা দেবে। আর রাচিন রবীন্দ্র বা অধিনায়ক উইলিয়ামসন যদি বড় স্কোর করে ফেলে, তবে তা ভারতের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। ২৩ বছর বয়সী রবীন্দ্র দুরন্ত ছন্দে রয়েছেন। এবং কেন উইলিয়ামসনের উইকেটও কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা ভারতের কারও অজানা নয়।