পঞ্চায়েত ভোট চলাকালীন জেলায় জেলায় ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ভাঙচুর চলেছে। সাধারণত স্কুল বা মাদ্রাসা গুলিকেই ভোট গ্রহণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। দুষ্কৃতী তাণ্ডবের ফলে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে চেয়ার, টেবিল ভাঙচুর করা হয়েছে। প্রতিবার ভোটেই ভাঙচুর করা হয়ে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ইতিমধ্যে স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকারা ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং শিক্ষা দফতরের কাছে চিঠি দিয়েছে। শিক্ষকদের অভিযোগ, প্রতিবার নির্বাচনে এই ছবি দেখা গেলেও কেউই সেগুলি মেরামতির দায়িত্ব নেয় না। ফলে ক্লাস করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় পড়ুয়াদের। ভোটের অশান্তি নিয়ে জনস্বার্থ মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলি মেরামত করে পুনরায় চালু করতে হবে। বুধবার বিচার প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে।
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোটে দুষ্কৃতী তাণ্ডবে বহু স্কুলের সম্পত্তি নষ্ট, ক্ষতিপূরণের দাবি শিক্ষকদের
হাইকোর্টের নির্দেশ ওই সমস্ত স্কুল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি মেরামতির খরচ বহন করতে হবে রাজ্য সরকারকে। এর জন্য দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির তথ্য যোগাড় করার জন্য রাজ্য সরকার এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সেই সঙ্গে আদালত এও জানিয়েছে ভাঙচুরে সঙ্গে যুক্তদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনে তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে পারবে রাজ্য সরকার।
উল্লেখ্য, ভোটে সন্ত্রাসের পরেই প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস ক্ষতপুরণের দাবি জানিয়েছিল। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতির বক্তব্য, সাধারণত নির্বাচনের কাজে স্কুল এবং মাদ্রাসাগুলিকে ব্যবহার করা হয়। নির্বাচনের সময় স্কুল বন্ধ রেখে ভোটগ্রহণ চলে। ভোট পর্ব মিটতেই আবার স্কুল, মাদ্রসা খুলে যায়। কিন্তু, ভোট গ্রহণ পর্বে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবে স্কুলের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। এবারও পঞ্চায়েত নির্বাচনে বহু স্কুলে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবে চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ এবং অন্যান্য আসবাবপত্র ভাঙা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, প্রতিবার নির্বাচনে এরকম ক্ষতি হয়ে থাকে। অথচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা পূরণ করা হয় না। রাজ্য নির্বাচন কমিশনও ক্ষতিপূরণ করার ব্যবস্থা করে না। কোথাও আবেদন জানিয়ে কোনও সুরাহা মেলে না। ফলে ক্লাস করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় পড়ুয়াদের। এর ফলে স্কুলে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট হয়। এর জন্য রাজ্য সরকার এবং শিক্ষা দফতরকে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকারা।
এদিকে, ভোটে অশান্তি নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন ফারহাদ মল্লিক নামে এক ব্যক্তি। তাঁর হয়ে মামলা লড়েন আইনজীবী শমিক বাগচী সহ অন্যান্যরা। মামলা চলাকালীন আইনজীবী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাঁর বক্তব্য, এগুলি দ্রুত মেরামত না করা হলে পড়ুয়ারা সমস্যায় পড়বেন। সেই অভিযোগ কার্যত মেনে নিয়ে রাজ্য সরকারকে এই নির্দেশ দিয়েছে আদালত। হাইকোর্টের এই নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষকরা। তাঁদের বক্তব্য, দ্রুত এই নির্দেশকে কার্যকর করা হোক।