পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন থেকে শুরু করে ভোট গ্রহণ পর্বে প্রশ্নের মুখে পড়েছে শাসক দল। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদ কার্যত বিরোধীশূন্য। যার কারণে এই ফল আগামী লোকসভা ভোটে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তৃণমূলের অনেকেই। সামগ্রিকভাবে এই ফলকে দলের পক্ষে রায় বলে মনে করা হলেও গা জোয়ারির অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে পঞ্চায়েত ভোটে ব্যাপক গা জোয়ারির অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। আর তার ফল ভুগতে হয়েছিল ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে। এনিয়ে তৃণমূলের অন্তরে চর্চা শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: নির্বাচনে তৃণমূলকে নিরাশ করল না সিঙ্গুর, পঞ্চায়েতে সবকটি আসনেই জয়ী ঘাসফুল
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা পরিষদের ব্যালট গণনার সময় বহু জেলায় বিরোধীদের কোনও প্রতিনিধি ছিলেন না। ফলে সেই সুযোগে ব্যালট পেপারে কারচুপি হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আর সেরকম হলে স্বাভাবিকভাবেই জনমনে প্রশ্ন তুলতে পারে। গত বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচনে যে সমস্ত জায়গায় বিরোধীরা ভালো ফল করেছে এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেই সমস্ত জায়গায় ভালো ফল করতে পারেনি বিরোধীরা। সেই সমস্ত জায়গায় তৃণমূলের একচেটিয়া জয় নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিরোধীরা এ নিয়ে সরব হয়েছেন। তবে জনপ্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে বিরোধীশূন্য হওয়া কাম্য নয় বলেই মনে করছেন তৃণমূলের অনেকেই। তৃণমূলেরই এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, জনপ্রতিনিধিত্বের কোনও স্তরেই বিরোধী শূন্য হওয়া উচিত নয়। জেলা পরিষদ একেবারে বিরোধী শূন্য হলে স্বচ্ছতার অভাব থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে আগামী দিনে জনসমর্থন পাওয়া মুশকিল।
গত পঞ্চায়েত ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাই বহু আসনে জয়ী হয়েছিল শাসক দল। তার প্রভাব পড়েছিল লোকসভা ভোটে। ২০১৮ পঞ্চায়েতের প্রায় ৩৪ শতাংশ আসনে বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারেনি। তবে লোকসভা ভোটে দেখা যায় ১৮ টি আসন পেয়েছিল বিজেপি। এবার জেলা পরিষদ বিরোধীশূন্য হওয়ায় স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে শাসক দলের অন্দরেই।
বিরোধীদের ভালো প্রভাব রয়েছে এরকম একটি জেলা হল আলিপুরদুয়ার। এই জেলার সমস্ত সাংসদ এবং বিধায়ক বিজেপির। অর্থাৎ বলা চলে এখানে বিজেপির ভালো প্রভাব রয়েছে। তা সত্ত্বেও দেখা যায়, জেলা পরিষদের ১৮ টি আসনের মধ্যে সবকটিই শাসক দলের ঝুলিতে রয়েছে। এখানে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে একটি নির্বাচন আসন বিজেপির হাতে ছিল। কিন্তু এবার কোনও বিরোধীই আসন পায়নি। আবার পুরুলিয়া জেলাতে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধীরা বেশ কয়েকটি আসন পেয়েছিল। আর এবার বিরোধীরা সেখানে মাত্র দুটি আসন পেয়েছে। উল্লেখ্য, পুরুলিয়ায় জেলা পরিষদের আসন সংখ্যা ৩৮ টি। যার মধ্যে ৯ টি পেয়েছিল বিজেপি এবং ৩ টি কংগ্রেস পেয়েছিল। ২৬ টি পেয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। আর এবার একটি আসন পেয়েছে বিজেপি এবং একটি পেয়েছে নির্দল। আবার এই জেলায় মোট ১৫ টি বিধানসভার আসন রয়েছে সেখানে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছিল ৭ টি আসন। গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে বিরোধীরা আসন বার করতে পারলেও জেলা পরিষদের সবকটি আসনে তৃণমূলের দখলে রয়েছে।যদিও নির্বাচনের এই ফলকে মানুষের রায় বলেই দাবি করেছেন আলিপুরদুয়ার জেলা তৃণমূলের সভাপতি প্রকাশ চিক বরাইক। একই দাবি করেছেন পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া।