বিগত বেশ কিছু বছর ধরেই ইভিএম বা বৈদ্যুতিক ভোট মেশিনের বিরোধিতায় সরব হয়েছেন বিরোধীরা। বারংবার অভিযোগ উঠেছে ইভিএম হ্যাকের। নির্বাচন কমিশন অবশ্য 'প্রমাণ' দিয়েছে যে ইভিএম হ্যাক করা যায় না। তবে তা সত্ত্বেও কংগ্রেস, তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি সহ তাবড় বিরোধী দলগুলি দাবি করে এসেছে, ইভিএম হ্যাক করে বিজেপি বহু জায়গায় জয়লাভ করেছে। এই আবহে ব্যালটে ভোট করানোর দাবি বিরোধীদের। আর একান্তেই ইভিএম-এ ভোট করাতে হলে ১০০ শতাংশ ভিভিপ্যাট পরীক্ষার আর্জি তাদের। আর এই সব দাবি, অভিযোগের মাঝেই এবার চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করলেন গান্ধী পরিবার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কংগ্রেস নেতা স্যাম পিত্রোদা। বৃহস্পতিবার স্যাম দাবি করলেন, 'ইভিএম যদি ঠিক না করা হয়, তাহলে বিজেপি আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ৪০০-র বেশি আসনে জয়লাভ করতে পারে।' সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্যাম পিত্রোদা দাবি করেন, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোট ভারতের ভবিষ্যৎ নির্ণয় করবে।
এর আগে একাধিকবার জাতীয় নির্বাচন কমিশন দাবি করে এসেছে, ইভিএম হ্যাক করা যায় না। নিজেদের দাবি প্রমাণ করতে 'হ্যাকাথন'-এর আয়োজন করেছে তারা। তবে সদ্য সমাপ্ত পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের পর ফের নতুন করে ইভিএম বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। হিন্দি বলয়ে বিজেপি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে। ২০১৮ সালে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ে জিতেছিল কংগ্রেস। তবে ২০২৩ সালে এই তিন রাজ্যই গিয়েছে বিজেপির ঝুলিতে। এই আবহে উত্তর ভারতে আরও দুর্বল হয়েছে কংগ্রেস। এখন হিন্দি বলয়ে মাত্র একটি রাজ্যে (হিমাচলপ্রদেশ) একক ভাবে সরকার গঠন করে আছে কংগ্রেস। দুই রাজ্যের সরকারে তারা 'জুনিয়র পার্টনার'। আর এই আবহে অনেক কংগ্রেস নেতারই অভিযোগ, সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা ভোটে ইভিএম কারচুপি হয়েছে। এই আবহে কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলির দাবি, ইভিএম-এ ভোট হলেও ভিভিপ্যাট-এর স্লিপ যেন সব ক্ষেত্রেই ভোটারদের হাতে দেওয়া হয়। আর স্যাম পিত্রোদাও এই দাবিই করলেন।
ইভিএম নিয়ে নিজের উদ্বেগ প্রকাশ করে 'দ্য সিটিজেনস কমিশন অন ইলেকশনস' নমাক একটি এনজিও-র দাবির কথা তুলে ধরেন স্যাম। প্রাক্তন সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি মদন বি লকুরের এই এনজিও সুপারিশ করেছিল, ভিভিপ্যাটের ডিজাইন যেন এমন ভাবে বদলানো হয়, যাতে কোথায় ভোট পড়ছে, তা ভোটার নিজেই যাচাই করতে পারে এবং তার কাছে তার প্রমাণ থাকে। এই বিষয়ে স্যাম বলেন, 'এই বিষয়ে আমি নির্বাচন কমিশনের জবাবের অপেক্ষা করছিলাম। তবে যখন এই নিয়ে কমিশন কোনও বাক্যব্যয় করল না, তখন আমাকেই মুখ খুলতে হচ্ছে। পাঁচ রাজ্যের ভোট হয়েছে এবং ২০২৪ সালে লোকসভা ভোট হবে বলে আমি এখন এই কথা বলছি না।'
এদিকে সাম্প্রতিককালে স্যাম পিত্রোদাকে উদ্ধৃত করে রামমন্দির সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল। যা নিয়ে বেশ বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। দাবি করা হয়েছিল, স্যাম নাকি বলেছেন, 'গোটা দেশ যেভাবে রামমন্দির নিয়ে মেতে উঠেছে, তাতে আমি উদ্বিগ্ন।' এই প্রসঙ্গে স্যাম দাবি করলেন, তাঁর মন্তব্যকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরিবেশন করা হয়েছে। তাঁর কথায়, ধর্ম অত্যন্ত ব্যক্তিগত একটি বিষয় এবং এর সঙ্গে রাজনীতিকে মিশিয়ে দেওয়া উচিত নয়।
এদিকে রাহুল গান্ধীর মণিপুর-মুম্বই ভারত ন্যায় যাত্রা প্রসঙ্গে স্যাম বলেন, 'আসন্ন লোকসভা নির্বাচন ভারতের ভবিষ্যৎ নির্ণয় করবে। এই নির্বাচনই বাতলে দেবে যে আমরা কেমন ভাবে আমাদের দেশকে গড়তে চাই। আমাদের জনগণ বলবে যে, আমরা কি দেশটাকে সংবিধান অনুযায়ী গড়তে চাই। যেখানে সব ধর্মকে সমান ভাবে সম্মান জানানো হয়েছে। নাকি আমরা চাই, দেশে একটি ধর্মই প্রাধান্য পাবে।'