মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তিন বিরোধী নেতা মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পরই পিছিয়ে গেল ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক। সূত্রের খবর, বুধবার যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, তা আপাতত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৮ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে সেই বৈঠক হতে পারে বলে সূত্রের খবর। তারপর স্বভাবতই বিরোধী জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, হিন্দি বলয়ে ভরাডুবির জেরে কংগ্রেস যে ধাক্কা খেয়েছে, তা শুধুমাত্র তিনটি রাজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকল না। বরং সেটার প্রভাব যে অন্যান্য ক্ষেত্রেও পড়েছে, তা ইন্ডিয়া জোটের অন্দরে ফাটল থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। বিরোধীদের জোটে একধাক্কায় গুরুত্বও কমে গিয়েছে কংগ্রেসের। সেই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের ‘দাদাগিরি’ যে কোনও দল মেনে নেবে না, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। আর সেইসব টানাপোড়েনের দৃশ্য যে বিজেপি চুটিয়ে উপভোগ করছে, তা নিয়েও কোনও সন্দেহ নেই। ইতিমধ্যে বিরোধী জোটকে খোঁচা দিতে ছাড়েনি বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। অমরাবতীর সাংসদ নভনীত রানার খোঁচা, ‘এটা তো সবে শুরু। পিকচার আভি বাকি হ্যা।’
যদিও ইন্ডিয়া জোটে ফাটলের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন শিবসেনার (উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী) প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী। তিনি বলেন, ‘ইন্ডিয়া জোট একত্রিত আছে। সবাই জোটবদ্ধ আছেন। যে যে খামতি আছে, যে যে সমস্যা আছে, সেগুলি আমরা সবাই মিলে সমাধান করব। কারণ দারিদ্র্য, কৃষক দুর্দশা, মহিলাদের উপর অপরাধমূলক ঘটনা, বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতির মতো বিষয়ের সমাধান করার ব্রত নিয়ে আমরা একই মঞ্চে এসেছি। সংবিধানের অবহেলা করা হচ্ছে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ লঙ্ঘন করা হচ্ছে। সেগুলির বিরুদ্ধে আমরা জোটবদ্ধ হয়েছি।'
সেইসঙ্গে শিবসেনার প্রিয়াঙ্কা দাবি করেন যে অল্প সময়ের মধ্যে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে সম্ভবত নিজের পূর্ব-নির্ধারিত সূচি পালটাতে পারেননি মমতা। প্রিয়াঙ্কার কথায়, 'অল্প সময়ের নোটিশে বৈঠকের দিন নির্ধারিত হয়েছে। উনি মুখ্যমন্ত্রী। নিজের পূর্ব-নির্ধারিত সূচি পালটাতে পারছেন না। তো সেটা আমরা দেখে নেব যে কীভাবে দ্রুত বৈঠক করা যায়। সব বিষয় নিয়েই বৈঠকে আলোচনা করা হবে।’
মমতা অবশ্য অল্প সময়ের ভিত্তিতে বৈঠক ডাকার বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। বরং সোমবার তিনি বলেন, কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের বাসভবনে যে বৈঠক হবে, সেটা নিয়ে ‘আমার কাছে কোনও তথ্য় নেই। কেউ জানায়নি। কেউ ফোনেও বলেনি। আমি জানি না।’ সেইসঙ্গে তিনি জানান, মঙ্গলবার থেকে উত্তরবঙ্গে থাকবেন। ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেখানেই থাকবেন বলে জানান মমতা। আর তারপরই নীতীশ, অখিলেশও জানিয়ে দেন যে তাঁরা ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে যাচ্ছেন না।
আর সেইসব টানাপোড়েন দেখে নভনীত বলেন, বলেন, ‘এটা তো সবে শুরু। পিকচার আভি বাকি হ্যা। জোট ঠিকমতোই হল না। তার আগেই ভাঙন শুরু হয়ে গেল। কারণ তিনটি রাজ্যে ধামাকা হয়েছে। মোদীজির মুখ দেখে, মোদীজির কাজ দেখে তিনটি রাজ্যে ধামাকা হয়েছে। তাই বিরোধীরা জানেন যে যতই জোট করুন না কেন, মোদীজির বিরুদ্ধে কোনও লাভ হবে না। ৪০০ পেরিয়ে যাবে এনডিএ।’
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: ‘কংগ্রেস ভুলেই হার,’ কেন বিজেপির জয়কে বড় করে দেখতে নারাজ মমতা?