রাজস্থানের বাঁশওয়ারায় এক নির্বাচনী জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাবি করেছিলেন, কংগ্রেস তাদের ইস্তাহারে দাবি করেছে যে দেশের সম্পদ মুসলিমদের মধ্যে পুনর্বণ্টন করবে। তিনি মনমোহন সিংয়ের ২০০৬ সালের এক মন্তব্যকেও হাতিয়ার করেন কংগ্রেস তোপ দাগতে। যদিও মোদীর দাবি খারিজ করে কংগ্রেস। নরেন্দ্র মোদীর মন্তব্য এবং ডঃ মনমোহন সিংয়ের উল্লেখিত সেই মন্তব্যের কোলাজ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে কংগ্রেস। সেখানে কংগ্রেস ক্যাপশনে লেখে, 'মিথ্যে বলার বাজে অভ্যেস আছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। একবার ফের তিনি মিথ্যা বলতে গিয়ে ধরা পড়লেন।' (আরও পড়ুন: বসিরহাটে রামভক্তদের জল খাওয়ালেন মুসলিমরা, সম্প্রীতির সুরে উঠল 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনি)
আরও পড়ুন: 'বাড়ি ফিরতে পারবেন না…', এবার IPAC নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের
এদিকে মনমোহন সিংয়ের যে ভিডিয়োটি কংগ্রেস পোস্ট করেছে, সেই একই ভিডিয়োর থেকে নেওয়া এক ২২ সেকেন্ডের ক্লিপ ফের বিজেপি পোস্ট করে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কংগ্রেসকে তোপ দেগে পদ্ম শিবির প্রশ্ন করে, 'কংগ্রেস কি নিজে প্রধানমন্ত্রীকেও ভরসা করে না এখন?' মনমোহনের বক্তব্যের অংশ তুলে ধরা হয় ক্যাপশনেও। সেখানে লেখা, 'সংখ্যালঘুরা, বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যালঘুরা যাতে উন্নয়নের ফল সুষমভাবে ভাগ করে নিতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের উদ্ভাবনী পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। দেশের সম্পদের উপর তাদের প্রথম অধিকার থাকতে হবে।' (আরও পড়ুন: এবার কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ বঙ্গ বিজেপির, শমীক বললেন…)
আরও পড়ুন: 'বহিরাগতদের নিয়ে মিছিল', নিজের গড়ে তৃণমূলেরই বাধার মুখে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
কিন্তু আসলে কী বলেছিলেন মনমোহন সিং? ২০০৬ সালের ৯ ডিসেম্বর মনমোহন সিং জাতীয় উন্নয়ন কাউন্সিলের সভায় বলেছিলেন, 'তফসিলি জাতি এবং উপজাতিদের উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনাগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। সংখ্যালঘুরা, বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যালঘুরা যাতে উন্নয়নের ফল সুষমভাবে ভাগ করে নিতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের উদ্ভাবনী পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। সম্পদের উপর তাদের প্রথম অধিকার থাকা উচিত। কেন্দ্রের অগণিত অন্যান্য দায়িত্ব রয়েছে। এই সব আমাদের কছে সামগ্রিক ভাবে যে সম্পদ আছে, তার মধ্যে থেকেই এই সব চাহিদা মেটাতে হবে।' ২০০৬ সালে মনমোহে রসেই ভাষণের পরও রাজনৈতিক তরজ শুরু হয়েছিল। সেই সময় প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল, মনমোহন সিং বলেছেন, তফসিলি জাতি এবং উপজাতি, ওবিসি, নারী, শিশু, সংখ্যালঘুদের উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
কিন্তু মোদীর কোন মন্তব্য ঘিরে এত বিতর্ক? কংগ্রেসকে তোপ দেগে মোদী দাবি করেছিলেন, 'ক্ষমতায় এলে কংগ্রেস সাধারণ মানুষের সম্পদ ছিনিয়ে নিয়ে তা মুসলিমদের মধ্যে বণ্টন করবে।' মোদী বলেন, 'এই শহুরে নকশাল মানসিকতায় মা-বোনদের মঙ্গলসূত্রকেও ছাড়বে না ওরা। কংগ্রেস যে কোনও পর্যায়ে নীচে নামতে পারে। কংগ্রেসের ইস্তাহারে বলা হয়েছে, তারা মা-বোনদের সোনার গয়নার পরিমাণ খতিয়ে দেখে সেই সম্পদ পুনর্বণ্টন করবে। আর তারা কাকে সেই সম্পদ দেবে? মনমোহন সিংয়ের সরকারই বলেছিল, দেশের সম্পদের ওপ রপ্রথম অধিকার আছে মুসলিমদের। তাহলে ওরা এই সম্পদ অনুপ্রবেশকারীদের দেবে? আপনাদের কষ্টার্জিত টাকা কি অনুপ্রবেশারীদের দেওয়া উচিত? আপনারা কি এটাই চান? কারও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অধিকার কি সরকারের আছে? আমাদের মা-বোনেদের কাছে যে সোনার গয়না আছে, সেটা আত্মসম্মানের প্রতীক। মঙ্গলসূত্রের দাম এর সোনার ওজনে নির্ধারণ করা যাবে না। এটা একজন স্ত্রীর স্বপ্নের সঙ্গে জড়িয়ে।'
এদিকে কংগ্রেসের অভিযোগ, আসল ইস্যু থেকে মানুষের নজর ঘোরাতেই এই ধরনের বিভাজনমূলক ভাষণ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এই আবহে মোদীর মন্তব্য নিয়ে রাহুল গান্ধী সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টে লেখেন, 'ভোটের প্রথম দফার হতাশার পর নরেন্দ্র মোদীর মিথ্যাচারের মাত্রা বেড়ে গিয়েছে। ভয়ের চোটে তিনি এখন আসল বিষয়গুলো থেকে জনগণের দৃষ্টি সরাতে চান। কংগ্রেসের 'বৈপ্লবিক ইস্তাহার' যে বিপুল সমর্থন পাচ্ছে সে সম্পর্কে ট্রেন্ড আসতে শুরু করেছে। দেশ এখন এই সব ইস্যুর ওপরে ভোট করবে। চাকরির জন্য, নিজের পরিবার, ভবিষ্যতের জন্য ভোট করবে।'