মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবার অসমে নির্বাচনী প্রচারে যোগ দিতে এসে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'এবারের লোকসভা নির্বাচন ইতিহাসের সব থেকে কালো নির্বাচন। নরেন্দ্র মোদী পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হলে ভারতে আর নির্বাচন হবে না। বিজেপি গোটা দেশের মানুষকে ভয় দেখিয়ে রাজত্ব করতে চায়। গোটা ভারতবর্ষকে ডিটেনশন ক্যাম্প বানিয়ে রেখেছে রেখেছে তারা।'
অসমের ১৪টি লোকসভা আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস শিলচর, কোকরাঝাড়, বরপেটা এবং লখিমপুরে প্রার্থী দিয়েছে। শিলচরের প্রার্থী প্রাক্তন সাংসদ রাধেশ্যাম বিশ্বাসের হয়ে প্রচার করতে বুধবার অসমে আসেন মমতা। তিনি জানান, এটা ট্রেলার, পুরো ছবি তাঁরা দেখাবেন ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে। সেই বছর অসমের ১২৬টি বিধানসভা আসনে প্রার্থী দেবে তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের সরকার হলে অসমে এনআরসি, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) এবং অভিন্ন দেওয়ানি বিধি (ইউসিসি) বাতিল করা হবে।
মমতা জানান, বিজেপি অসমের বাংলাভাষী লোকেদের হিন্দু এবং মুসলমান- দুই ভাগে ভাগ করে রেখেছে। এই দুই সম্প্রদায় যদি একসঙ্গে মিলে যায়, তাহলে এই রাজ্যের ৭০ শতাংশ ভোট একত্রিত হয়ে যাবে। এখানে অসমিয়া এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের ভোট ৩০ শতাংশ। তিনি বলেন, 'আমরা এই বিভাজন মিটিয়ে সবাইকে সমান অধিকার দিতে চাই। আমরা জয়ী হলে অসমে এনআরসি, সিএএ, ইউসিসি তুলে দেবে। এই রাজ্যে নিরীহ লোকেরা ডি'ভোটার সমস্যায় ভুগছেন, আমরা তাঁদের সমস্যাও সমাধান করব। বিজেপি এগুলোর মাধ্যমে জনগণকে ভয় দেখিয়ে রাখছে। আমরা যখন এনআরসির বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গে আন্দোলন করেছি, তখন ওরা অসমে আমার নামে ছয়-সাতটি মামলা করেছে, আমরা ভয় পাই না। নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ মিলে গোটা ভারতবর্ষকে একটা জেলখানা বানিয়ে রাখতে চান যেখানে ভয় দেখিয়ে রাজত্ব করা যায়। আমাদের লড়াই এর বিরুদ্ধে।'
তিনি জানান, তৃণমূল কংগ্রেস সর্বভারতীয় স্তরে ইন্ডিয়া জোটের সদস্য হলেও পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির বিরুদ্ধে একাই লড়তে হচ্ছে তাদের। তিনি বলেন, 'সেখানে কংগ্রেস এবং সিপিএম বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। আমরা একাই লড়ছি, কারণ আমাদের লড়াই জনগণের স্বার্থে। নির্বাচনের পরেও আমরা ইন্ডিয়া জোটের সদস্য থাকব এবং এই বিরোধী জোটকে জাতীয় স্তরের নেতৃত্ব দেবে তৃণমূল কংগ্রেস।'
মণিপুর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ওই রাজ্যে দু'শোর বেশি গির্জা জ্বালিয়ে দিয়েছে বিজেপি, মেয়েদের নগ্ন করে প্রকাশ্য রাস্তায় ঘুরানো হয়েছে। সেই মেয়েরা আজও বিচার চাইছে এবং ভাবছে মোদী তাদের ন্যায় দেবেন। আমি বলছি, আজ যদি শোনেন, আমি মারা গিয়েছি, সেটা বিশ্বাস করতে পারেন। তবে মোদী আপনাদের জন্য কিছু করবেন এটা বিশ্বাস করবেন না।'
বুধবার দুপুর ১২ টা ৪০ মিনিটে কলকাতা থেকে বিশেষ বিমানে শিলচর এসে পৌঁছান মমতা। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানান তৃণমূল কংগ্রেসের সুস্মিতা দেব, দলের অসম রাজ্য কমিটির সভাপতি রিপুন বোরা, শিলচর কেন্দ্রের প্রার্থী রাধেশ্যাম বিশ্বাস-সহ দলের অন্যান্য কর্মীরা। তাঁরা সড়কপথে শিলচর শহরে আসেন এবং রাস্তায় একাংশ বিজেপি কর্মীরা তাঁকে দেখে জয় শ্রীরাম ধ্বনি দেন। মঞ্চে দাঁড়িয়ে এই প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, 'ওরা আমাকে দেখে স্লোগান দিচ্ছে, ভাবছে এতে আমি বিচলিত হব। আমি এতটাও ছোট মাপের রাজনীতিবিদ নই। আমরা অনেক বড় সংকল্প নিয়ে মাঠে নেমেছি এবং সেটা হচ্ছে বিজেপিকে উৎখাত করা।'
মঞ্চে দাঁড়িয়ে সুস্মিতা দেব বলেন, 'এবার অসমের লোক বিজেপিকে বিসর্জন দেবেন এবং এ রাজ্যে ঘাসফুল ফুটবে।' মমতা বলেন, অসমের লোক তৃণমূলকে ভোট না দেওয়া সত্ত্বেও তিনি এই রাজ্যের কন্যা সুস্মিতা দেবকে রাজ্যসভায় সাংসদ করেছেন। যদি রাজ্যের মানুষ তাঁদের ভোট দেন, তাহলে তৃণমূল তাঁদের আরও বেশি উপহার দেবে।
শিলচর ছাড়াও কোকরাঝাড়, বরপেটা এবং লখিমপুরে প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিলচরের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাকি তিন আসনের প্রার্থীদের শুভেচ্ছা জানান। এরপর তিনি মঞ্চে স্থানীয় শিল্পীদের সঙ্গে বিহু নৃত্য, মণিপুরী নৃত্য এবং ধামাইলে অংশ নেন। অনুষ্ঠান শেষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশেষ বিমানে কলকাতা ফিরে যান।
আরও পড়ুন: Mamata in Assam: অসমে বিধানসভা নির্বাচনে সব আসনে প্রার্থী, লোকসভা ভোটের প্রচারে ইঙ্গিত মমতার