‘‌টুনির মায়ের নাম কী?’ লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে এবার নতুন ঝড় তুলল সিপিএম

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘লক্ষ্মী ভাণ্ডার’ প্রকল্প ‘ম্যাজিকের’ মতো কাজ করে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস। হ্যাট্রিক করেন মুখ্যমন্ত্রী। বাংলার দু’‌কোটির বেশি মহিলারা প্রকল্প পেয়ে থাকেন। আবার পরিমাণ বেড়ে হাজার টাকা হয়েছে। তফসিলি মহিলাদের জন্য ১২০০ টাকা।

একুশের নির্বাচনে সিপিএম প্যারোডি নিয়ে এসেছিল— ‘টুম্পা সোনা’। তারপর দেখা গেল বিধানসভায় প্রতিনিধি শূন্য। এরপর ২০২৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচন উপলক্ষ্যে সিপিএম প্যারোডি আনল—‘‌বারান্দায় রোদ্দুর’‌। এবার ২০২৪ সাল। টানটান উত্তেজনায় চলছে লোকসভা নির্বাচন। তবে এই লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখেও প্যারোডি এনেছে সিপিএম। ‘‌জামাল কুদু’‌ এই গানের সুর ব্যবহার করেছে লালপার্টি। তবে এখানে তারা থেমে থাকেনি। এবার আলিমুদ্দিন স্ট্রিট লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে জনপ্রিয় গান ‘টুনির মা’ ব্যবহার করতে শুরু করেছে। মুর্শিদাবাদের সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিমের প্রচারে ব্যবহার করা হয়েছে গানটি। এই গানের লাইন পরিবর্তন করে লিফলেট বানিয়ে সেটা সারা মুর্শিদাবাদে বিলি করছে সিপিএম। যার একটি সাবটাইটেল—‘টুনির মায়ের নাম কী?’

এদিকে ওই প্রচারপত্রে মহিলাদের আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। মহিলাদের নিজের পরিচয় দেবে সিপিএম। অথচ টুনির মায়ের নাম কী?‌ বলে সারা মুর্শিদাবাদে লিফলেট বিলি করেছে সিপিএম বলে অভিযোগ উঠেছে। এই সিপিএমের প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, দেশের লক্ষ লক্ষ মহিলা সারা জীবন কারও মা, কারও স্ত্রী বা কারও মেয়ের পরিচয় বহন করে। তার নিজের কোনও পরিচয় নেই। সিপিএম তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের সেই নিজেদের ‘পরিচয়’ দেবে। কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী এসএম সাদির প্রচারেও এমন লিফলেট বিলি করা হয়েছে। রাজ্যের মহিলাদের ভোট ব্যাঙ্কে আধিপত্য রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের। সেটা ভাঙতেই এই পথ অবলম্বন করেছে সিপিএম। যা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে।

অন্যদিকে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘লক্ষ্মী ভাণ্ডার’ প্রকল্প ‘ম্যাজিকের’ মতো কাজ করে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস। হ্যাট্রিক করেন মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর সরকার। বাংলার দু’‌কোটির বেশি মহিলারা এই প্রকল্প পেয়ে থাকেন। এখন আবার তার পরিমাণ বেড়ে হাজার টাকা হয়েছে। তফসিলি মহিলাদের জন্য তা হয়েছে ১২০০ টাকা। বিজেপিও বুঝেছে এই প্রকল্প বেশ ‘অর্থবহ’। তাই বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী লোকসভা নির্বাচনী প্রচারে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, রাজ্যে ক্ষমতায় এলে প্রত্যেক মাসে প্রকল্পের পরিমাণ ৩০০০ টাকা বাড়িয়ে দেবেন। সিপিএমও একই কথা বলছে। আর প্রশ্ন উঠছে, গত ৩৪ বছর ক্ষমতায় থেকে করল না কেন?‌ বিজেপি শাসিত অন্য রাজ্যে করা হচ্ছে না কেন?‌

এছাড়া পঞ্চায়েত, পুরসভা, বিধানসভা এবং লোকসভায় সবচেয়ে বেশি মহিলা প্রতিনিধি রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের। তাই এবার এভাবে প্রচার কৌশল নিয়েছে সিপিএম। এই বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‌মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মহিলাদের সর্বক্ষেত্রে আত্মসম্মান দিয়েছেন। নারীদের শুধু সরকারি প্রকল্পেই সুবিধা দেননি, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবেও ক্ষমতায়ন করা হয়েছে। পঞ্চায়েত, পৌরসভা, বিধানসভা, লোকসভা—কোনও দলেরই এত মহিলা প্রতিনিধি নেই। তৃণমূল কংগ্রেসের যুগে নারীর কতটা আত্মসম্মানবোধ তৈরি হয়েছে সেটা মানুষ অভিজ্ঞতা থেকে তুলনা করতে পারে।’‌ কিন্তু টুনির মা নিয়ে ভোটে কি প্রভাব পড়বে? টুনি কি অন্ধকার সিপিএম ঘরে জ্বালাবে? জবাব মিলবে ৪ জুন।