ভাঙড় বিধানসভায় এবারের তৃণমূলের প্রার্থী হলেন মহম্মদ রেজাউল করিম।এই কেন্দ্র বিজেপির তরফে দাঁড়াচ্ছেন সৌমি হাতি।অন্য দিকে, বাম-কংগ্রেস-ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) তরফে এই কেন্দ্রে দাঁড়াচ্ছেন সিপিআইএমের হাসান মির্জা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা প্রেসিডেন্সি বিভাগের অন্তর্ভুক্ত জেলা। জেলার সদর আলিপুরে। এই জেলার উত্তর দিকে কলকাতা এবং উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব দিকে বাংলাদেশ, পশ্চিম দিকে হুগলি নদী ও দক্ষিণ দিকে বঙ্গোপসাগর রয়েছে। ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্র হল দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার একটি বিধানসভা কেন্দ্র। এই বিধানসভা কেন্দ্রটি গঠিত হয়েছে যথাক্রমে ভাঙড়-২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, জাগুলগাছি, নারায়ণপুর ও প্রানগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি ভাঙড়-১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের অন্তর্গত। ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্রটি যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা জয়ী হয়েছিলেন৷ তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল ১ লক্ষ ২ হাজার ৮৭৷ দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন সিপিএম প্রার্থী আব্দুর রসিদ গাজি৷ তাঁর প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ৮৩ হাজার ৯৬৩৷তৃণমূল প্রার্থী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএম প্রার্থী আব্দুর রসিদ গাজিকে ১৮ হাজার ১২৪ ভোটে পরাজিত করেন।
‘শান্ত’বলে পরিচিত নয় ভাঙড়। থেকে থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত ওঠা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে এই এলাকায়। সৌজন্যে আরাবুল—রেজ্জাক দ্বন্দ্ব শিরোনামে উঠে এসেছে বারবার।এমনকী, এলাকার দুই তাবড় নেতার বিবাদ মেটাতে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কেও একাধিকবার আসরে নামতে হয়েছে। আরাবুল গড় বলে পরিচিত ভাঙড়ের পরিস্থিতি আয়ত্তে আনা যায়নি বলেই অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের অন্দরেই।
এবারের তৃণমূলের টিকিট না—পাওয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন আরাবুল ইসলাম। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার পোস্টকে ঘিরে জল্পনা তুঙ্গে ওঠে। তিনি দলে থাকবেন কি না—তা নিয়েও বিস্তর জলঘোলা হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। তবে সমস্ত জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছেন আরাবুল ঘনিষ্টরা।তিনি এবারের প্রার্থী রেজাউল করিমের প্রচার করবেন বলেই দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
এর আগে পাওয়ার গ্রিড বসানো নিয়ে আরাবুল—রেজ্জাক দু’পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে বারবার উত্তপ্ত হয়েছে ভাঙড়। দীর্ঘ লড়াই আন্দোলনে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ভাঙ্গড়ের পোলেরহাট-২ পঞ্চায়েতের নতুন হাটের কাছে পাওয়ার গ্রিড স্থাপনের কাজ। পাওয়ার গ্রিড বিরোধী ওই আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছিলেন বেশ কয়েকজন। মাস কয়েক আগে জেলা প্রশাসনের তৎপরতায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জট কাটে পাওয়ার গ্রিড সমস্যার। বৈঠকে ঠিক হয়েছিল পাওয়ার গ্রিড-এর পরিবর্তে পাওয়ার সাবস্টেশন তৈরি হবে ভাঙড়ে। সাবস্টেশন তৈরি পাশাপাশি এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ করবে রাজ্য সরকার। হাসপাতাল, হিমঘর, নদীবাঁধ সংস্কার-সহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়িত করার প্রতিশ্রুতিও দেয় প্রশাসন।
এই নিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনায় বসেছে প্রশাসন। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত পোলেরহাট ২ নম্বর পঞ্চায়েত এলাকার রাস্তা, পথবাতি, ১০০ দিনের কাজ-সহ পঞ্চায়েত ও ব্লক স্তরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করবে প্রশাসন। ২০১১ সালে সিপিআইএমের বাদল জামদার তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল কংগ্রেসের আরাবুল ইসলামকে পরাজিত করেন।
২০০৬ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের আরাবুল ইসলাম ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন। তিনি সিপিআইএমের মোশারফ হোসেন লস্করকে পরাজিত করেন।২০০১ সালে সিপিআইএমের বাদল জামদার তৃণমূল কংগ্রেসের আব্দুস সাত্তার মোল্লাকে পরাজিত করেন। পাশাপাশি ১৯৯৬ সালে কংগ্রেসের আজীবর রহমান ও ১৯৯১ সালে কংগ্রেসের নুজুজ্জামান মোল্লাকে পরাজিত করেন তিনি।১৯৮৭ সালে তৎকালীন সিপিআইএমের প্রার্থী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা কংগ্রেসের শেখ শাহীদর রহমানকে এই আসনে পরাজিত করেন। ১৯৮২ সালে সিপিআইএমের দাউদ খান কংগ্রেসের সেরিফুল আসলাম ইশাক ও ১৯৭৭ সালে জনতা পার্টির আমির আলী মোল্লাকে পরাজিত করেন।১৯৭২ সালে সিপিআইএমের আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা এই আসনে জয়ী হয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে নির্দলের এ.কে.এম হাসান উজ্জামান জয়ী হন। ১৯৬৯ সালে কংগ্রেসের এ.কে.এম.ইশাক জিতেছিলেন। তারও আগে ১৯৬৭ সালে বাংলা কংগ্রেসের এ.মোল্লা এই আসনে জয়ী হন।১৯৬২ সালে কংগ্রেসের এ.কে.এম.ইশাক জিতেছিলেন।১৯৫৭ সালে কংগ্রেসের হেমচন্দ্র নস্কর ভাঙড় আসনে জয়ী হয়েছিলেন।১৯৫১ সালে দেশের প্রথম নির্বাচনে কংগ্রেসের হেমচন্দ্র নস্কর ও সিপিআইয়ের গঙ্গাধর নস্কর ভাঙড় যৌথ আসনে জয়ী হয়েছিলেন।