প্রার্থী তালিকা নিয়ে গণ্ডগোল জোর পেকেছে বিজেপিতে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জরুরি বৈঠকে ডেকে পাঠানো হয়েছে বঙ্গ–বিজেপির প্রথমসারির নেতাদের। আজ রাতেই তাঁরা দিল্লি যাচ্ছেন বলে খবর। বিজেপির তৃতীয় ও চতুর্থ দফার প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর রাজ্যজুড়ে চলছে বিক্ষোভ। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, প্রার্থী হতে না পারার আশঙ্কায় রেললাইনে শুয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন হুগলির ত্রিবেণী এলাকার বিজেপি নেতা নিরুপম মুখোপাধ্যায়। এবার ওই জেলারই বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথা রাজ্য কমিটির সদস্য ভাস্কর ভট্টাচার্য টিকিট না পাওয়ার ক্ষোভে দল ছাড়লেন। বিজেপির প্রাক্তন হুগলি জেলা সভাপতিও ছিলেন তিনি। দলত্যাগী ভাস্কর ভট্টাচার্য এদিন দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, ‘দলের নীতি আদর্শ শুধু বইয়ের পাতাতেই শোভা পাচ্ছে। বাস্তবে নেই।’
হুগলির শ্রীরামপুর কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী করেছে কবীর শঙ্কর বসুকে। চাঁপদানীতে প্রার্থী করা হয়েছে দিলীপ সিংকে। আবার চুঁচুড়ায় প্রার্থী করা হয়েছে দলের সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কে। ওই প্রার্থীদের মেনে নিতে না পেরে দলের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্কে ইতি টানলেন ভাস্কর ভট্টাচার্য। ২১ বছর ধরে করা বিজেপি নেতা এদিন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে চিঠি লিখে তাঁর ইস্তফার কথা জানান। ভাস্কর ভট্টাচার্য মনে করেন, জনপ্রিয়তা এবং ভারে দুই প্রার্থীর চেয়ে তিনি অধিক যোগ্য। কিন্তু তাঁকে এড়িয়ে প্রার্থী করা হয়েছে ওই দুই নেতাকে। এই ক্ষোভেই বিজেপির সঙ্গে দীর্ঘ ২১ বছরের সম্পর্কে ইতি টানলেন তিনি।
ঠিক কী লিখেছেন ভাস্কর ভট্টাচার্য? তিনি লিখেছেন, ‘নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছি ২১ বছর ধরে। এবার আমার শেষ সুযোগ ছিল শ্রীরামপুর বা চাঁপদানি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার। যাঁদের টিকিট দেওয়া হল যোগ্যতার নিরিখে তাঁদের থেকে কোনও অংশে আমি কম ছিলাম না। অথচ আমার দল আমাকে অযোগ্য বিবেচনা করে আমার দীর্ঘদিনের বিশ্বাসকে টলিয়ে দিল। এরপর পার্টির কাছে আর কিছু আশা করা নিরর্থক। আমি আমার সমস্ত দায়িত্ব থেকে নিজেকে মুক্ত করলাম। এই পত্র আমার ইস্তফা হিসেবে গ্রহণ করে বাধিত করবেন।’
উল্লেখ্য, হুগলির বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী ঘোষণা হতেই অশান্তির আগুন তীব্রভাবে ছড়িয়েছে। হুগলি জেলা অফিসে ভাঙচুর থেকে রাস্তা অবরোধ, কোনও কিছুই বাদ রাখেননি কর্মী ও সমর্থকদের একাংশ। উত্তরপাড়া, চুঁচুড়া, চন্দননগর, সিঙ্গুর, হরিপাল, তারকেশ্বর—সব কেন্দ্রেই ছবিটা প্রায় একইরকম। সিঙ্গুরে রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, উত্তরপাড়ায় প্রবীর ঘোষাল, চুঁচুড়ায় লকেট চট্টোপাধ্যায়কে প্রার্থী করার বিরোধিতা হয় দলের অন্দরেই। প্রার্থী হতে না পেরে ইতিমধ্যেই দল ছেড়েছেন হুগলির প্রাক্তন সভাপতি সুবীর নাগ।