রবিবার কুলতলির সভায় শুভেন্দুকে ‘ঘুষখোর’ বলে আক্রমণ শানিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছিলেন, ‘১০ বছর খেয়ে মধু মীরজাফর এখন সাজছে সাধু’। প্রতিক্রিয়ায় গতকালই শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘সোমবার সভা আছে, ওখানেই জবাব দেব।’ সেই কথা রেখে এদিন নিজের খাসতালুক তমলুকে জনসভায় অভিষেকের প্রতিটি অভিযোগ ধরে ধরে ‘উত্তর’ দিলেন শুভেন্দু অধিকারী।
এদিন শুভেন্দু বলেন, ‘কাল ‘তোলাবাজ ভাইপো’ তিনটে কথা বলেছে। এক, শুভেন্দু ঘুষখোর। দুই, মধুখোর, যে আমি ১০ বছর মধু খেয়েছি। তিন, বিশ্বাসঘাতক।’ ঘুষখোর প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, ‘তিনি বলেছেন, আমাকে খবরের কাগজ মুড়ে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে। আমার কথা ভাবতে হবে না। ও বরং ভাবুক ওর বড় জ্যাঠা সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মেজো জ্যাঠা মাস্টারমশাই সৌগত রায়ের কী হবে। আর ভাবুক তাঁর পিসিমণি কাকলি ঘোষদস্তিদার, কাকু ববি হাকিমের কী হবে!’
আদালতে দেওয়া সারদা কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের চিঠির প্রতিলিপি হাতে নিয়ে কুলতলির সভা থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করে বলেছিলেন, ‘সুদীপ্ত সেন বলেছেন তিনি শুভেন্দু অধিকারীকে ৬ কোটি টাকা দিয়েছিলেন। আদালতে চিঠি লিখে সে কথা জানিয়েছেন তিনি।’
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুভেন্দুর জবাব, ‘২৭ নভেম্বর আমি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছি। ১ ডিসেম্বর জেলে–থাকা সুদীপ্ত সেনকে দিয়ে চিঠি লিখিয়েছে। কে লিখিয়েছে? জেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন আইপিএস মিস্টার পান্ডে। পুরো নামটা বললাম না। তাঁকে লিখতে বলেছে কে? নবান্নে বসে–থাকা জিবি সিং নামে একজন আইপিএস অফিসার। আর এ সবের পেছনে রয়েছে তোলাবাজ ভাইপো।’
সুদীপ্ত সেনের ওই বিতর্কিত চিঠিতে নাম রয়েছে রাম, কংগ্রেস নেতাদেরও। সেই কথা তুলেও এদিন এ সবের পেছনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘অভিযুক্ত’ করেছেন শুভেন্দু। তিনি বলেছেন, ‘বিমান বসুর নামও লিখিয়েছে তোলাবাজ ভাইপো। বিমান বসুর ব্যাপারে এই তোলাবাজ ভাইপো জানে না। বিমানবাবু এখনও নিজের কাপড় নিজে কাচে। দুপুরবেলা আমরা সবাই ভাত, রুটি খাই। বিমানবাবু এখনও দুপুরে মুড়ি আর শশা খান। রাতের বেলা গণশক্তি অফিস থেকে ফেরেন। তাঁর নাম পর্যন্ত লিখিয়েছে। একুশের ভোটে যাঁরা যাঁরা বিরোধিতা করতে পারে, যেমন বিমান বসু, অধীর চৌধুরী, সুজন চক্রবর্তী, মুকুল রায়–সহ আমার নাম লিখিয়েছে।’
শুভেন্দু একেবারে ব্যক্তিগত আক্রমণের পর্যায়ে পৌঁছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে এদিন বলেন, ‘আমি ১০ বছর মধু খেয়েছি কিনা জানি না। কিন্তু আমার কি কোনও পরিবর্তন হয়েছে? আমার পাসপোর্টে কাঠমান্ডু–ঢাকা যাওয়ারও দাগ নেই। আর আপনি তো বছরে চারবার বিদেশে যান। অসুখ হলে তমলুক হাসপাতালে দেখাই, বড় কিছু হয়ে গেলে অ্যাপোলোকে জিজ্ঞেস করি। আর আপনার তো সিঙ্গাপুরে না গেলে চিকিৎসা হয় না। মধু তো আপনি খাচ্ছেন।’
শুভেন্দু আরও বলেন, ‘আমার বাড়ি ২০১১–র আগে যা ছিল তাই আছে। একটা তলাও বাড়েনি। ১০ বাই ১০ ঘরে ঘুমোই। আর আপনি তো এক গরিব লোককে তুলে চারতলা বাড়ি বানিয়েছেন। হরিশ মুখার্জি আর হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে ৩৫টা প্লটের মালিক। বজবজে জলের কারখানা, দুর্গাপুরে মেডিক্যাল কলেজ, পুরীতে হোটেল। তার পর তো কয়লার টাকা, বালির টাকা, গরুর টাকা— কী নেননি আপনি বাংলা থেকে। আমাকে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে হিসেব নিতে হবে না। জনগণ এ সবের হিসেব নেবে।’
নারদ কেলেঙ্কারির এক ভিডিও–তে দেখা গিয়েছে শুভেন্দু অধিকারীকে টাকা নিতে। সেই ঘটনা তুলেও আক্রমণ করেছিলেন অভিষেক। তবে শুভেন্দুর কথায়, ‘আমি প্রথম থেকেই বলেছি, ম্যাথু স্যামুয়েলকে টাকা দিয়েছে কেডি সিং। আর কেডি সিং–কে এই কাজে লাগিয়েছে তোলাবাজ ভাইপো।’