হিমালয়ের প্রেমে পাগল এই সঙ্গীতসাধক। সুর খুঁজতে হামেশাই তিনি বেরিয়ে পড়েন পথে-ঘাটে। ছোট থেকেই গানের ফেরিওয়ালা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বড় হয়েছেন তিনি। কথা হচ্ছে জাতীয় পুরস্কার জয়ী সঙ্গীতশিল্পী শান্তনু মৈত্রর। গোটা বছর যিনি পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ছুটে বেড়ান প্রকৃতির প্রেমে-লকডাউনে তিনিও ঘরবন্দি। সেই ফাঁকেই অংশ নিলেন ফিভার নেটওয়ার্কের 100 Hours 100 Stars অনুষ্ঠানে। সঙ্গীত-জীবনের নানান জানা-অজানা কথা উঠে এল ফিভার এফএম কলকাতার আরজে নীলের সঙ্গে এই আড্ডায়।
করোনার মতো কঠিন পরিস্থিতিকে খুব কাছ থেকে দেখছেন এই শিল্পী, তাঁর পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই চিকিত্সক। তাঁর কথায়, ‘আমার পরিবারে ভর্তি করোনা-যোদ্ধা। বোনেরা ১৫-১৬ ঘন্টা করে প্রতিদিন ডিউটি করছে হাসপাতালে। ওদের এই ডেটিকেশন আমাকে চমকে দেয়’। একই সঙ্গে মুম্বইয়ের বস্তিবাসীদের নিয়েও চিন্তার ভাঁজ শান্তনুর কপালে। 'এক একটা খুপরিতে চার-পাঁচজন করে থাকে,খুবই ভয়াবহ পরিস্থিতি'।
লকডাউন জীবনটা কেমনভাবে কাটছে শান্তনু মৈত্রর? গৃহবন্দি জীবনে নতুন নতুন রান্না করছেন, আর অনলাইনে দু-তিন রকমের কোর্স করছেন শিল্পী। ‘আমার ইতিহাস খুব ভালোলাগে, অনলাইনে ইতিহাসের ক্লাস করছি-বলতে পারেন মুহূর্তগুলোকে বাঁচতে শিখছি নতুন করে। আসলে এত দ্রুত এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত দৌড়েছি…পাঁচ বছর পর,দু বছর পর শান্তনু মৈত্র কী করবে, সেটা জরুরি নয়। আজ সন্ধ্যায় কী করব সেটা খুব জরুরি হয়ে উঠেছে’,অকপটে বললেন পরিণীতার সঙ্গীত পরিচালক।
বাংলায় কেবল অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী এবং বলিউডে প্রদীপ সরকার,সুজিত সরকার,শ্যাম বেনেগাল,সুধীর মিশ্রা, রাজু হিরানি, বিধু বিনোদ চোপড়া- হাতেগোনা পরিচালকের ছবিতে কাজ করেছেন শান্তনু মৈত্র। কাজ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তিনি নাকি খুব চুজি। এমনটাই বলা হয় তাঁর সম্পর্কে। এটা কতটা ঠিক?
শান্তনু মৈত্রর কথায়,'এটা (সঙ্গীত পরিচালনা) আমার জীবনের লক্ষ্য নয়, আমি ট্রাভেল করতে, পাহাড় চড়তে ভালোবাসি। সেটা করতে হলে আমি সারা বছর স্টুডিওর ভিতর কাটাতে পারব না। রোজ এই কাজ করলে আমার ভালোবাসা কমে যাবে। আমি প্রজেক্ট সবসময় স্ক্রিপ্ট ড্রিভেন। পরিচালক যখন ভাবতে শুরু করে তখন থেকে আমি সেটার সঙ্গে যুক্ত থাকি। আমার গোটা বছরের প্ল্যানিংটা আগে হয়ে যায়। কোথায় কখন ঘুরতে যাব। খুব কম পরিচালক আছেন যাঁরা এমন একজনের সঙ্গে কাজ করতে চাইবে যে সারা বছর থাকবেই না! এই কজনই আছেন যাঁরা আমাকে সহ্য করতে পারে। তাই আমি চুজি নই, আমার জীবনের কিছু সিদ্ধান্তের জন্য এটা হয়ে থাকে'।
অ্যাওয়ার্ড নিয়েও একদমই মাথা ঘামান না শান্তনু। ‘পেলে ভালো, না পেলেও ঠিক আছে’-এমনই মনোভাব তাঁর। বর্তমানে বলিউড মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির বাড়বাড়ন্ত নিয়েও কথা বললেন শান্তনু মৈত্র। বললেন, পুরোনো মেলডি নতুন করে করছে কারণ সেটা সে ভালোবাসে। কিন্তু একশো কোটির দেশে নতুন মেলোডি তৈরি করার লোক নেই সেটা আমি বিশ্বাস করি না। নতুন গান তৈরিতে ভয় কোথায়? নস্ট্যালজিয়ার কারণে রিমিক্স গানের ভিউয়ারশিপটা প্রথমে অনেক হয়। কিন্তু ছ'মাস পর তাঁর কোনও অস্তিত্ব থাকে না। মাথায় রাখতে হবে ইমপারফেকশনের মধ্যে দিয়েই আর্ট তৈরি হয়। হয়ত এই সময়টাও কেটে যাবে'।