সিনেমা হলে গিয়ে টিকিট কাটার পাশাপাশি আগে থেকে অনলাইনে টিকিট কাটার প্রবণতা গত কয়েক বছরে ভালোই বেড়েছে। এমনই এক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ‘বুক মাই শো’ থেকে কেউ যদি ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ দেখার জন্য কলকাতার কোনও সিনেমাহলের টিকিট কাটতে চান, তাহলে পুরোটাই ভোঁভাঁ! কোথাও এখনও পর্যন্ত কোনও শো নেই। অন্তত এই ওয়েবসাইটের টিকিট বুকিং মাধ্যম সেটিই বলছে। তাহলে কি এখনও কলকাতা বা তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় এই ছবি প্রদর্শনের উপর অদৃশ্য নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে? কী বলছেন প্রেক্ষাগৃহের মালিকরা?
পশ্চিমবঙ্গে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ দেখানো নিয়ে জলঘোলা হয়েই আছে। এর আগে রাজ্য সরকার ছবিটি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। শীর্ষ আদালত সেই নিষেধাজ্ঞায় স্থগিতাদেশ দিয়েছে। কিন্তু তার পরেও সেভাবে ছবিটির প্রদর্শন শুরু হয়নি। রাজনৈতিক চাপ? নাকি অন্য কিছু?
(আরও পড়ুন: ‘বাংলায় দ্য কেরালা স্টোরি চালানো যাবে না, হুমকি ফোন আসছে হল মালিকদের কাছে’, বোমা ফাটালেন পরিচালক সুদীপ্ত সেন)
এই বিষয়ে অশোকা সিনেমাহলের মালিক প্রবীর রায়কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বলেন, ‘আমার কাছে কোনও রাজনৈতিক ফোন আসেনি। কেউ বলেননি, এই ছবি দেখানো যাবে না।’
তাহলে সিনেমাহলে এখনও এই ছবি দেখানো হচ্ছে না কেন? নবীনা সিনেমাহলের মালিক নবীন চোখানিকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের এই ব্যবসায় কমিটমেন্ট খুব দামি। আমরা ইতিমধ্যেই বহু ছবির নির্মাতা এবং ডিসট্রিবিউটরদের কথা দিয়ে ফেলেছি। তাই এখনই সেই সব ছবি নামিয়ে আমাদের পক্ষে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ দেখানো সম্ভব নয়।’
ছবির প্রচারে শুক্রবার কলকাতায় এসেছিলেন ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র পরিচালক সুদীপ্ত সেন। রীতিমতো ক্ষোভ উগরে দেন বাঙালি পরিচালক। ভেবেছিলেন শহরে এসে হল ভিজিটে যাবেন। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরেও কোনও হলে দেখানো হচ্ছে না ছবিটি। দেখে হতাশ হলাম, আপনারা পারলে আমাকে একটু বুঝিয়ে বলুন প্লিজ।’
তাঁর এই কথা প্রসঙ্গে প্রবীরবাবুর মত, ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ দেখানো হবে না— এমন কোনও কথা হয়নি। তাঁর কথায়, ‘বৃহস্পতিবার আদালতের রায় এসেছে। তত ক্ষণে হলে কোন ছবি চলবে, তা ঠিক হয়ে গিয়েছিল। আমাদের এক সপ্তাহ আগেই ঠিক হয়ে যায় কোন সিনেমা চলবে। ফলে সেগুলি বন্ধ করা সম্ভব নয়।’ ইতিমধ্যেই ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র ডিসট্রিবিউটরদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আগামী সপ্তাহে একটা-দুটো শো দেওয়া যায় কি না, সেই নিয়েও কথা বলছেন তাঁরা। জানিয়েছেন প্রবীরবাবু।
(আরও পড়ুন: 'পদ্মাবৎকে সমর্থন, দ্য কেরালা স্টোরিকে নয়! কেন?' মমতাকে প্রশ্ন সুদীপ্তর)
প্রায় একই কথা নবীনবাবুর মুখেও। ‘ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি সিনেমা দেখানোর ক্ষেত্রে আমরা কমিটেড। ‘বিবাহ অভিযান’ আসছে। ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ আসছে। এর মধ্যে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিয়ে রায় এল। ফলে এখনই কিছু বলতে না পারলেও আমরা আলোচনা করছি। আগে তো দেখানো হচ্ছিল। এবারও সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই দেখানো হবে।’
সম্প্রতি সুদীপ্ত সেন আর এক সাংবাদিক বৈঠকে গিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘যখন গোটা দেশ জুড়ে পদ্মাবৎ ছবি নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে, তখন তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই ছবির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তাহলে আজ আমি আর বিপুল কোন দোষ করলাম?’ এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে নবীনবাবুর বক্তব্য, ‘এর আগে আমরা ‘পাঠান’কেও সেভাবে জায়গা দিতে পারিনি। কারণ ‘প্রজাপতি’ খুব ভালো চলছিল। তাছাড়া ওই ছবির ডিসট্রিবিউটরদের প্রতিও আমাদের দায়িত্ব আছে। তাই সেই ছবিকে নামিয়ে ‘পাঠান’কে সেভাবে জায়গা দিতে পারিনি। তখন তো কোনও প্রশ্ন ওঠেনি! তাহলে এখন কেন?’
(আরও পড়ুন: আদালত রায় দিলেও পশ্চিমবঙ্গে এখনই হয়তো দেখা যাবে না ‘দ্য কেরালা স্টোরি’, জানুন কারণ)
রাজনৈতিক চাপ বা প্রভাবশালী কারও কোনও চাপ কি তাহলে সত্যিই নেই? হলমালিকরা বলছেন, তাঁরা এমন কোনও ফোন পাননি। ‘এত দিন এই কাজের সঙ্গে যুক্ত আছে। আমার কাছে আজ পর্যন্ত এমন কোনও ফোন আসেনি’, বলছেন নবীনবাবু। একই বক্তব্য প্রবীর রায়েরও।
এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক https://htipad.onelink.me/277p/p7me4aup