তিনি ভারতীয় মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির ‘অমর সঙ্গী’। বলিউডের ‘ডিস্কো কিং’ বাপ্পি লাহিড়ি আজ বেঁচে থাকলে বয়স হত ৭১ বছর। গলায় এক গোছা সোনার হার, জমকালো পোশাক আর দরাজ গলা দিয়ে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী আর কলকাতা থেকে কচ্ছ মাতিয়ে রেখেছিলেন বাপ্পিদা।
শোনা যায়, মাইকেল জ্যাকসনও বাপ্পিদার গুণমুগ্ধ ছিলেন। বাঙালি গায়ক শুধু সঙ্গীতের মামলায় সেরা ছিলেন তা নয়, বাপ্পিদার রসবোধও প্রশংসনীয়। বেশ কয়েক বছর আগে, হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তাঁকে ঘিরে হওয়া ট্রোলিং নিয়ে মুখ খুলেছিলেন বাপ্পিদা। নেতিবাচক মন্তব্যকে কী করে সামলান তিনি? তাও খোলসা করেছিলেন।
বাপ্পিদার ভারী চেহারা নিয়ে কম কটাক্ষ বা হাসাহাসি করা হত না। ইন্ডাস্ট্রির অন্দরেও অনেকসময় খিল্লি করা হত তাঁকে নিয়ে। সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার মনে হয় তাকে নিয়েই হাসিঠাট্টা করা হয়, যে বিখ্যাত। লোকে তো সোনিয়া গান্ধীকেও ছাড়েনি। তবে অনেকেই হাস্যরসের নামকরে আমাকে কটাক্ষ করেছে, বলতে পারেন আমাকে অপমান করেছে। সম্প্রতি একজন সংবাদপত্রে লিখেছে আমার হাতে নাকি কাজ নেই, তাই আমি আরাম করে টিভি শো-তে বসে রয়েছি। এটা থেকে ওই মানুষটা আমার প্রতি হিংসাটা জাহির করল, আমার অভিজ্ঞতার অর্ধেক অভিজ্ঞতাও ওঁর নেই। তাঁরা কটাক্ষ করার যোগ্য নয়, তবুও করবে’।
আশির দশকে হিন্দি ছবির গানের দিশা বদলে দিয়েছিলেন এই বাঙালি সংগীত পরিচালক। একটানা ২৯দিন মুম্বইয়ের ক্রিটিকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর ২০২২ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি মৃত্যু হয় বাপ্পি লাহিড়ির। অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (OSA) এবং বুকে সংক্রমণের জেরে মৃত্যু হয় তাঁর। ২০২১ সালে কোভিড আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারপর থেকেই অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় ভুগছিলেন তিনি’।
শেষবার বিগ বস ১৫-র মঞ্চে দেখা গিয়েছিল বাপ্পি দাকে। নাতি রোগো-র গানের প্রচারে সেখানে হাজির হন বাপ্পি দা। মিউজিক্যাল সফরের ৫০ বছর পার করার খুশিতে সলমন-সহ অনান্যরা ডিস্কো ডান্সার গানে জমিয়ে নেচেও ছিলেন।
আশির দশকের বলিউডে উল্কা গতিতে তাঁর উত্থান। পরপর হিন্দি ছবিতে কম্পোজ করা সুর থেকে তাঁর গানে বুঁদ হয়েছিল আসমুদ্রহিমাচল। মিঠুন চক্রবর্তীর ‘ডিস্কো ডান্সার’ ছবির মিউজিক কম্পোজ করে রাতারাতি সুপারস্টারে পরিণত হয়েছিলেন বাপ্পি লাহিড়ি। তাঁর জনপ্রিয়তা ভারতের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিদেশে। এরপর থেকেই ডিস্কো কিং' নামে পরিচিতি লাভ করেন এই বাঙালি গায়ক।
বাপ্পিদা রেখে গিয়েছেন তাঁর সংগীতের বিশাল ভাণ্ডার। বরাবরই ফ্যাশন আইকন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন তিনি। সশরীরে উপস্থিত না থাকলেও তার গানগুলি আজীবন সঙ্গীতপ্রেমী মানুষের মনে গেঁথে থেকে যাবে।