গায়ত্রী দেবী, জয়পুর রাজ ঘরনার এই সুন্দরী একজন সফল রাজনীতিবিদ। রাজ মাতা গায়েত্রী দেবীর বর্ণময় জীবন হামেশাই থেকেছে কৌতুহলের বিষয়বস্তু হয়ে।যুগের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিলেন গায়েত্রী দেবী। তাঁর আধুনিক চিন্তা-ভাবনা নাড়িয়ে দিয়েছে সমকালীন সমাজব্যবস্থাকে। এবার তাঁর জীবন পর্দায় তুলে ধরার প্রস্তুতি চলছে। সেই প্রকল্পে নাম জুড়ল লেখক ভাবানি আইয়ারের। যিনি রাজি, ব্ল্যাক এবং লুটেরার মতো ছবির কাহিনি লিখেছেন। তবে নাম ভূমিকায় কে অভিনয় করবেন তা এখনও স্পষ্ট নয়।
ভাবানি তাঁর ইনস্টাগ্রাম পেজে ঘোষণা করেন, ‘এটি বিশেষ আনন্দদায়ক মুহূর্ত যখন কোনো এক নেত্রী, প্রগতিশীল নারী, নারীবাদী- ওহ, এমনকি বিশ্বের অন্যতম সেরা সুন্দরী- মন্ত্রমুগ্ধ মহারানি গায়ত্রী দেবী। এবং এই জার্নিতে বেশ কিছু দারুণ মানুষ রয়েছে যাঁদেরকে আমি চিনি এবং ভালবাসি’।
তিনি আরও যোগ করেন, এগুচ্ছ দারুণ মানুষের সঙ্গে কাজ করতে চলেছেন তিনি। এমনকি রয়েছেন খ্যতনামা স্ক্রিন প্লে লেখক, কৌসর মুনির।
কৌসর তাঁর ইনস্টাগ্রাম পেজে জানিয়েছেন, ‘মহারানি গায়েত্রী দেবীর গল্প পর্দায় তুলে ধরার ক্ষেত্রে অনেক সন্মানিত বোধ করছি। আধুনিক রাজকন্যা যিনি নিয়মকে অস্বীকার করেছেন, লাবণ্যের সংজ্ঞা দিয়েছে এবং পরিবর্তনের উত্তরাধিকার রেখে গেছে'। জাগারনট প্রোডাকশনস এবং ম্যাঙ্গো পিপল মিডিয়া যৌথ ভাবে প্রযোজনা করছে এই ড্রামা সিরিজ।
কে এই গায়ত্রী দেবী?
কোচবিহারের রাজকুমারী ছিলেন এই সুন্দরী। পরে তিনি মহারাজ দ্বিতীয় সাওয়াই মান সিং -এর তৃতীয় স্ত্রী হন। রাজনৈতিক কেরিয়ারে তিনি ছিলেন সফল, প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিপরীত নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারীর স্বতন্ত্র পার্টির সদস্য ছিলেন গায়ত্রী দেবী এবং ইন্দিরা গান্ধীর ঘোর বিরোধী ছিলেন।
পড়াশোনায় দারুণ ভালো ছিলেন তিনি। জয়পুরে অনেক স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য সুখ্যাতি কুড়িয়েছেন। ১৯৪৩ সালে মহারানি গায়েত্রী দেবী গার্লস পাবলিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় জয়পুরের মৃৎ শিল্পীরা নতুন পথের দিশা খুঁজে পেয়েছেন। এমনকি, সেই সময়কার ভোগ ম্যাগাজিনে বিশ্বের সেরা দশ সুন্দরী মহিলার মধ্যে নাম স্থান করে নিয়েছিলেন তিনি। হয়েছিলেন সেরা স্টাইল আইকন।
চক্রবর্তী রাজা রাজাগোপালাচারীর স্বতন্ত্র পার্টির প্রার্থীর হয়ে গায়ত্রীদেবী কংগ্রেসের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ১৯৬২ সালের লোকসভা নির্বাচনে। জয়ী হয়েছিলেন রেকর্ড ব্যবধানে। এমনকি গিনেস বুক অফ রেকর্ডে সবথেকে বেশি ব্যবধানে ভোট পেয়ে জয়ী হিসেবে নাম করেছিলেন। ১৯৬৭ এবং ১৯৭১-এর লোকসভা নির্বাচনেও তিনি কংগ্রেস প্রার্থীর বিরুদ্ধে জয় ধরে রাখতে পেরেছিলেন।
১৯৭১-এ জরুরি অবস্থার সময়ে আয়কর আইন অবমাননার দায়ে তাঁকে কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়েছিল, কেড়ে নেওয়া হয়েছিল সমস্ত রাজকীয় সুযোগ সুবিধা। তিহার জেলে পাঁচ মাস বন্দিজীবন কাটিয়েছিলেন তিনি। এরপরই ধীরে ধীরে রাজনীতির ময়দান থেকে সরে যান গায়ত্রী দেবী।