২০১৮ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি কাকভোরে এক দুঃসংবাদ নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দেশকে। দুবাইয়ের সাত তারা হোটেলের বাথটাবে ডুবে মৃত্যু হয়েছে অভিনেত্রী শ্রীদেবীর! দু-দিন আগেই পারিবারিক বিয়ের আনুষ্ঠানে নাচের তালে মেতে থাকা ৫৪ বছরের শ্রীদেবীর এই অকাল মৃত্যু হজম করতে পারেনি কেউ। ঘটনার ঘনঘটা ক্রমেই জটিল রূপ ধারণ করে। বাথরুমের টাবে ডুবে মৃত্যু? মেনে নিতে পারেনি শ্রীদেবীর ভক্তরা। অভিযোগের আঙুল উঠেছিল তাঁর স্বামী বনি কাপুরের দিকে। ঘটনার সময় হোটেল রুমেই মজুত ছিলেন বনি।
মিডিয়ার কাটাছেঁড়া, শ্রীদেবী ভক্তদের হাজারো অভিযোগ, তবুও এই মৃত্যু নিয়ে গত পাঁচ বছর টুঁ শব্দটি করেননি বনি। প্রথমবার নীরবতা ভাঙলেন শ্রীদেবীর স্বামী। ‘দ্য নিউ ইন্ডিয়ান’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বনি কাপুর বলেন, 'শ্রী-র মৃত্যুটা স্বাভাবিক ছিল না, ওটা দুর্ঘটনার জেরে মৃত্যু'। স্ত্রীকে হারানোর যন্ত্রণার মাঝেই দুবাই পুলিশের ম্যারাথন জেরার মুখে পরার দুর্বিসহ অভিজ্ঞতা নিয়ে সরব হলেন প্রযোজক।
মিডিয়ার একটা বড় অংশ কাঠগড়ায় তুলেছিল বনি কাপুরকে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও ‘ভিলেন’ রূপেই দেখানো হয়েছিল তাঁকে। এই অভিযোগ নিয়ে প্রথমবার জবাব দিলেন বনি। তিনি জানান, ‘হ্য়াঁ, ওটা স্বাভাবিক মৃত্যু ছিল না। দুর্ঘটনার জেরে মৃত্যু হয় শ্রী-র। আমি এটা নিয়ে কথা না বলার প্রতীজ্ঞা করেছিলাম কারণ আমি এই ঘটনা নিয়ে একটানা ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা কথা বলেছি। আমাকে দুবাই পুলিশ একটানা জেরা করেছিল। তারপর আমাকে ক্লিনচিট দেয়। অফিসাররা আমাকে বলেছিল ভারতীয় মিডিয়ার তরফে প্রচণ্ড চাপ রয়েছে। আমি যা বলেছি, তার চেয়ে বেশি আর কিছু বলার নেই। তারা তদন্ত করে দেখেছিল, কোনও ফাউল প্লে ছিল না। আমাকে সব পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। লাই ডিটেক্টর টেস্টও হয়েছে। আর তারপর যে রিপোর্ট এসেছে তাতে আমাকে নির্দোষ বলা হয়েছে, জানানো হয়েছে দুর্ঘটনার জেরে জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছিল ওর’।
শ্রীদেবীর স্বাস্থ্য নিয়েও কথা বলেন বনি। জানান, না খেয়ে দিন কাটাতেন শ্রীদেবী। সুন্দর দেখানোর তাগিদ তাড়া করে বেড়াত অভিনেত্রীকে। পর্দায় সুন্দর ফিগার তুলে ধরতে না-খেয়েই থাকতেন বেশিরভাগ সময়, চিকিৎসকের পরামর্শও মানতেন না। শুরু থেকেই রক্তচাপ জনিত সমস্যা ছিল অভিনেত্রী। ব্লাডপ্রেসার কম থাকায় অনেকসময়ই অজ্ঞান হয়ে যেতেন। বনি বলেন, ‘ও সবসময় সচেতন থাকত যাতে ওর গড়ন সুন্দর থাকে। যাতে অন-স্ক্রিনে ওকে সুন্দর লাগে।’ নুন ছুঁতেন না শ্রীদেবী। তাঁর ডায়েট থেকে নুন বাদ রাখাতেন, ৪৬-৪৭ কেজির বেশি ওজন ছিল না-পসন্দ।
বনি বলেন, ‘বিয়ের পর থেকেই অনেকবার শ্রীদেবী অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ও বিপি-র সমস্যা আছে, তাই নুন না খেয়ে ক্রাশ ডায়েট ফলো না করার উপদেশ পেয়েছেন কিন্তু কথা শোনেননি’। বনির কথায়, শ্রীদেবীর মৃত্যুর পর নাগার্জুন তাঁকে জানিয়েছিলেন অতীতে একবার মাথাঘুরে বাথরুমে পড়ে গিয়ে দাঁত ভেঙে ফেলেছিলেন শ্রীদেবী।
১৯৯৬ সালে সদ্য ডিভোর্সি বনিকে বিয়ে করেন শ্রীদেবী। প্রথম স্ত্রী মোনা সৌরী ও দুই সন্তান অর্জুন ও অনশুলাকে ছেড়ে শ্রীদেবীর হাত ধরেছিলেন বনি। তাঁদের দুই সন্তান জাহ্নবী ও খুশি।