২০১৫ সালে একটি ঘটনা হইচই ফেলে দিয়েছিল গোটা বাংলায়। দিদির কঙ্কাল আঁকড়ে একই বাড়িতে থাকছিলেন ভাই। আজও বাংলার আতঙ্কের মুখ বললে বা কঙ্কালকাণ্ডের কথা উঠলেই উঠে আসে পার্থ দের নাম। কিন্তু তখন যা যা প্রকাশ্যে এসেছিল সেগুলো কি সবই সত্য ছিল? আসলে কী ঘটেছিল ৩ নম্বর রবিনসন স্ট্রিটে? রিসার্চেই বা কী কী জানা গেল? সবটাই এদিন হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে ভাগ করে নিলেন পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়।
হঠাৎ রবিনসন স্ট্রিটের এই ঘটনা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে হল কেন?
কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়: ঘটনাটা যে সময়ে ঘটে অর্থাৎ ২০১৫ সালে কঙ্কালকাণ্ডের কথা এবং ২০১৭ সালে পার্থ দের আত্মহত্যা সবটাই খবরের কাগজ এবং টিভিতে উঠে এসেছিল। নানা তথ্য, নানা কথা জানা গেলেও আমার মনে হয়েছিল কোথাও কিছু ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে। তাছাড়া মনে হয়েছিল মেন্টাল ডিসএবিলিটি নিয়ে এবার কাজ করা উচিত। সেই ভাবনা চিন্তা থেকেই কোভিডের সময় লেখা পত্র শুরু করি, রিসার্চ শুরু করি আমি এবং আমার টিম।
আরও পড়ুন: আলিয়া, বরুণদের মতো স্টারকিড নন, স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ারের আগে কেমন ছিল সিদ্ধার্থের স্ট্রাগল
আরও পড়ুন: ফিরছে ‘অনিন্দ্য দা-জুন আন্টি’র জুটি! কোন প্রজেক্টে ফের দেখা যাবে তাঁদের?
কীভাবে রিসার্চ করলেন আপনারা?
কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়: ওঁর সঙ্গে যাঁরা কাজ করেছেন, কথা বলেছেন তাঁদের কাছে পৌঁছই। কলকাতা পুলিশ, আইনজীবী, এমনকি সমস্ত মনোরোগ বিশেষজ্ঞরাও ভীষণভাবে সাহায্য করেছেন আমাদের। তাঁদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। ফুটেজ জোগাড় করা হয় দুটো জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম থেকে। এরপর গোটা ঘটনাটা কিছুটা পুনঃনির্মাণ করা হয়, আর কিছুটা শ্যুট করা হয়। গোটা তথ্যচিত্র তৈরি হলে আমরা হইচইকে দেখাই, ওদের পছন্দ হয়। তারপর সিরিজ হিসেবে নিয়ে আসা হল এটিকে।
পার্থ বাবুর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছিলেন আপনারা?
কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়: আমরা প্রথমেই ওঁর পরিবার, মানে পার্থ বাবুর কাকাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাঁদের কাছে পৌঁছেও যাই। কিন্তু ওঁরা কিছুই বলতে চাননি।
কোথায় কোথায় শ্যুটিং করেছেন আপনারা?
কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়: মূলত কলকাতায়। রবিনসন স্ট্রিটের সেই বাড়িতে বা তার সামনেও শ্যুটিং করেছি আমরা। আর কিছুটা অংশ মৌসুনী দ্বীপে করা হয়েছে।
হ্যাঁ, এই প্রসঙ্গে যেটা জানার। সিরিজে বারবার সমুদ্রের দৃশ্য, ঢেউ এগুলো উঠে এসেছে। পরিচালক হিসেবে এটার মাধ্যমে কী বোঝাতে চেয়েছেন?
কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়: মনের সমুদ্রকে তুলে ধরতে চেয়েছি। আসলে এটাই তো হল সেই জায়গা যেখানে অনবরত, অজস্র ঢেউ ওঠে। তাই না?
সিরিজের শেষভাগে অনেকেই মিডিয়াকে দায়ী করেছেন পার্থ দের মৃত্যুর জন্য। আপনার কী মনে হয়?
কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়: কে দায়ী, কে দায়ী নয় সেটা বিষয় নয়। এই গোটা ঘটনায় বিভিন্ন মানুষের কী মত, বা যে জায়গাগুলোয় ধোঁয়াশা থেকে গিয়েছিল সেটাই তুলে ধরতে চেয়েছি। এর মধ্যে অনেকে মিডিয়াকে দায়ী করেছেন, অনেকে আবার খুনের তথ্য খাড়া করেছেন। কিন্তু আমার মনে হয় সমাজ পুরোপুরি দায়ী এর জন্য।
আপনি নিজে একজন চিকিৎসক। এই গোটা রিসার্চ বা কাজটা করতে গিয়ে আপনার কী মত পার্থ বাবুকে নিয়ে?
কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়: উনি সাময়িক ভাবে মানসিক স্থিতি হারিয়েছিলেন বলেই আমার ধারণা। যা বলেছেন সবটাই ডিলিউশনাল ওয়ার্ল্ড থেকে বলেছেন।
মুখ্য ভূমিকায় লোকনাথদা'কে দেখা গেল। এটা কি কেবল পার্থ বাবুর সঙ্গে ওঁর শারীরিক গঠনে মিল আছে বলেই?
কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়: হ্যাঁ, এটা তো একটা কারণ অবশ্যই। তবে তাছাড়া লোকনাথ (দে) ভীষণই ভালো অভিনেতা। সেটা নিয়ে কোনও কথাই হবে না।
প্রসঙ্গত রবিনসন স্ট্রিট হরর স্টোরি: মিথ ভার্সেস রিয়েলিটি হইচইতে বর্তমানে দেখা যাচ্ছে। লোকনাথ দে ছাড়াও এখানে অভিনয় করেছেন জয়শ্রী দাশগুপ্ত, অময় দেব রায়। পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়।