নয়া প্রজন্মের অভিনেতাদের কাছে তিনি অভিনয়ের 'পাওয়ার হাউজ'।তিনি নাসিরুদ্দিন শাহ। আজ তাঁর জন্মদিন। মঙ্গলবার ২০ জুলাই ৭১-এ পা দিলেন 'পার, 'কান্দাহার'- এর নায়ক। নিজের দীর্ঘ বছরের ফিল্মি কেরিয়ারে তাবড় তাবড় সব ভারতীয় পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন। তাঁদের সঙ্গে জুটি বেঁধে দর্শকদের উপহার দিয়েছেন অবিস্মরণীয় সব ছবি। ১৯৮৪ সালে গৌতম ঘোষ পরিচালিত ছবি 'পার' এবং তাতে 'নৌরাঙ্গি' রূপে নাসিরুদ্দিনের অভিনয় দুইই জায়গা করে নিয়েছে ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে। জন্মদিনে তাঁর অন্যতম প্রিয় 'নায়ক'-কে নিয়ে মুখ খুললেন গৌতম ঘোষ। ফোনের ওপর থেকে হিন্দুস্তান টাইমস-এর সঙ্গে শেয়ার করে নিলেন তাঁর 'নাসির'-এর ব্যাপারে নানান জানা-অজানা কথা।

প্রথমেই জানালেন নাসির আর তাঁর বয়স একেবারে সমান।তাই তাঁদের দু'জনের চারিত্রিকগত বৈশিষ্ট্যেও রয়েছে অনেক মিল। ‘নাসির প্রচন্ড একগুঁয়ে। মানে যে কাজটা নিয়ে পড়ব সেটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ছাড়বে না। তাছাড়া একেবারেই মিডিয়া কনশাস নয়।'যতটুকু ওঁকে চিনি তার থেকে বলতে পারি, হি ইজ আ ভেরি প্রাইভেট পার্সন', জানালেন এই খ্যাতনামা পরিচালক।
সামান্য থেমে 'মনের মানুষ' এর নির্দেশকের গলায় ফের উঠে এল 'নাসির-কথা'। ' পার ছবির জন্য ডাক পেয়ে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে গেছি। গিয়ে দেখি মার্টিন স্করসেসি পরিচালিত বিশ্ববিখ্যাত ছবি 'রেজিং বুল'-এর জন্য উৎসবে হাজির হয়েছেন ওই ছবির নায়ক তথা কিংবদন্তি অভিনেতা রবার্ট ডি নিরো। আলাপ হলো। কথায় কথায় ওঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কী করে রেজিং বুল ছবির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন? মানে ছবির জন্য ওরকম ভয়ঙ্কর মোটা হয়ে যাওয়া, আবার পাক্কা প্রফেশনাল বক্সারদের মতো চেহারা তৈরি করা। এই দারুণ ফিজিক্যাল ট্রান্সফরমেশন-এর ব্যাপারেই আর কী। আমাকে জানিয়েছিলেন আগে মোটা হয়েছিলাম। সেসব অংশের শুটিং সেরে তারপর ওরকম বক্সারদের মতো চেহারা তৈরি করেছিলাম। অর্থাৎ পুরো উল্টো ব্যাপার। ফিরে এসে নাসিরকে বলেছিলাম এই ঘটনাটা। শুনে বেশ খানিকক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর বলেছিল, আমাদের দেশে যদি প্রযোজকদের এত ধৈর্য্য, সাহস ও টাকার জোর থাকত যে একটি ছবির জন্য ৩ বছর আর কোনও কাজ করব না। তাহলে আমিই সবার এগিয়ে আসতাম এইরকম ছবি করার জন্য! আমিও করতে পারি!'

নাসিরুদ্দিন অবশ্য সে সুযোগ পাননি। তবে গৌতম ঘোষের 'পার' ছবির জন্য ১১ কেজির ওপর ওজন কমিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। এ খবর জানালেন স্বয়ং পরিচালক। তাঁর কথায়,'সেইসময় এত অল্প বাজেটের মধ্যে এত ফিজিক্যাল ছবি করা সম্ভব হয়েছিল তার অন্যতম কারণ নাসিরের অদম্য মনোভাব। আমার এখনও দৃঢ় বিশ্বাস সত্তর পেরিয়েও ওই স্পিরিটটা বেঁচে রয়েছে ওঁর মনে।' পরিচালককে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তেমন কোনও গল্প মাথায় এলে এবং সুযোগ হলে নাসিরের সঙ্গে জুটি বেঁধে 'পার'-এর সিক্যুয়েল তৈরি করবেন কি না। একমুহূর্ত সময় না নিয়ে বেশ জোর গলায় 'না' বলে গৌতমবাবু জানালেন আজও তাঁর নাসিরের সঙ্গে ছবি করার ভীষণ ইচ্ছে। তবে সে ছবি 'পার' এর সিক্যুয়েল না হলেও বলবে প্রান্তিক জনের জলছবি। গরিবি, ক্ষুধা, ছিন্নমূল মানুষের গল্প, নয়তো ফেলে আসা সময়ের কষ্টের কথা।