মহামারির পরে বিনোদন জগতের যে বেশ হাঁড়ির হাল অবস্থা, মূলত বলিউডের ক্ষেত্রে সেটা ২০২২ বেশ হাড়ে হাড়ে টের পাইয়ে দিয়ে গিয়েছে। হাতে গোনা দু একটা ছবি ছাড়া বাকি সবই ফ্লপ করেছে। দক্ষিণী ছবি অবশ্য সেই তুলনায় বেশ ভালো ফল করেছে। বাংলা ছবির ক্ষেত্রেও মোটামুটি দর্শক হলে এসেছেন। কিন্তু সেই দর্শক সংখ্যা যে আগের থেকে কমেছে সেটা বেশ স্পষ্ট। এবার তাতে সিলমোহর দিল সমীক্ষার রিপোর্ট।
হালে মুক্তি পাওয়া ছবি পাঠান বক্স অফিস কাঁপিয়ে ব্যবসা করছে। ঠিকই। বাংলায় মুক্তি পাওয়া প্রজাপতি, ফেলুদা, হামি ২, ইত্যাদি ছবিগুলোও দারুণ সাড়া পেয়েছে। দর্শকরা ধীরে ধীরে ভয় কাটিয়ে ফের হলমুখী হচ্ছেন। কিন্তু সেই আগের মতো নয়। সংখ্যাটা কমছে। করোনার আগের সময় এবং করোনার পরের সময়ের যদি একটা তুলনা টানা যায় দেখা যাবে ১৬ শতাংশ মানুষ এখন আর হলে যান না, যাঁরা কিনা একটা সময় যেতেন।
ভারতীয় সিনেমা জগৎ ২ কোটির বেশি দর্শককে হারিয়েছে এই ২-৩ বছরে। এমনই জানানো হয়েছে অরম্যাক্সের তরফে। এই মিডিয়া কন্সালটিং সংস্থার তরফে একটি রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে যেখানে ধরা পড়েছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
এই রিপোর্টে জানানো হয়েছে যে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ১২.২ কোটি মানুষ অন্তত ১টি করে ছবি দেখেছেন। ২০১৯ সালে এই সংখ্যাটা ছিল ১৪.৬ কোটি । ২০২০ এবং ২০২১ সালের একটা ব্যাপক সময় সিনেমা হল, থিয়েটার, ইত্যাদি বন্ধ ছিল। ফলে তখন সংখ্যাটা আরও ভীষণই কমে গিয়েছিল। তবুও যখন মহামারীর ছড়াচ্ছে, ঠিক তার আগে আগেই জানুয়ারি মাসে এই সংখ্যাটা ১৪.৬ কোটি ছিল। যেটা কিনা গত বছর কমে হয়েছেন ১২.২ কোটি।
ভারতে মানুষ সব থেকে বেশি যে ভাষার ছবি দেখে সেটা হল হিন্দি। এই ভাষার দর্শক সংখ্যা মহামারির পরবর্তী সময়ে কমেছে ২১.৫ শতাংশ! এমনই জানানো হয়েছে সেই রিপোর্টে। তবে হিন্দির অবস্থা শোচনীয় হলেও আগেও যেমনটা বলা হল দক্ষিণী ছবি কিন্তু দর্শক সংখ্যা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে এই কঠিন সময়েও। শুধু ধরে রাখা নয়, কন্নড় ভাষার ছবির ক্ষেত্রে তো সেটা বেড়েওছে! তাও ২৫ শতাংশ। মহামারির আগে যে সংখ্যা ছিল ১.১৬ কোটি সেটাই এখন বেড়ে হয়েছে ১.৪৫ কোটি। আর এটার পুরো কৃতিত্ব যায় কান্তারা এবং কেজিএফ ২ এর মতো ছবিগুলোর কাছে।
তবে কেবল কন্নড় ছবি নয়, ভারতে মহামারি পরবর্তী সময়ে হলিউডি ছবির দর্শক বেশ বেড়েছে। আগে যেটা ২.২ কোটি ছিল সেটা এখন ২.৪ কোটি হয়েছে। অন্যদিকে তেলুগু ছবির ক্ষেত্রে দর্শক সংখ্যা কমেছে ৭.৮ শতাংশ এবং বাংলার ক্ষেত্রে ৪১.৭ শতাংশ! হিন্দির থেকেও বেশি দর্শক হারিয়েছে বাংলা। তামিলের ক্ষেত্রে কোনও বদল দেখা যায়নি।
তবে আশার কথা এই যে ভারতীয় বক্স অফিসের মোট আয় ১০,০০০ কোটির গণ্ডি টপকেছে। আর এখন যে ঘাটতি বা মহামারির পরের সময়ে যে অসুবিধাগুলো দেখা যাচ্ছে সেগুলো ২০২৪ এর মধ্যে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে দাবি করা হয়েছে এই রিপোর্টে।
কিন্তু কেবলই কি মহামারি দায়ী দর্শক বিমুখতার কারণে? সমীক্ষা বলছে আরও একটি কারণ আছে, টিকিটের দাম। সিনেমার টিকিটের দাম দিন দিন মহার্ঘ্য হয়ে উঠছে যা অনেকেরই সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে।