চ্যাপলিন, টাইগার, লাইটহাউস, নিউ এম্পায়ার, রক্সি, প্যারাডাইস, এলিট, মেট্রো, হিন্দ, সোসাইটি, লোটাস, জ্যোতি, ক্রাউন, নিউ সিনেমা, অপেরা শো হাউস, ম্যাজেস্টিক-এর মতো একের পর এক সিঙ্গেল স্ক্রিন বন্ধ হয়েছে গত কয়েক বছরে বা টিকে থাকার জন্য ক্রমাগত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। আর এসবের মাঝেই রিগাল সিনেমার চারপাশের ছাউনি দেখে শহরের অনেক সিনেপ্রেমীই ভয় পাচ্ছিলেন এটিও কি তবে বন্ধ হতে চলেছে! ভেঙে ফেলা হবে না তো? যদিও রিগালের মালিক জানালেন তিনি শুধুমাত্র সিনেমাহলটিকে সংস্কার করাচ্ছেন, যা ১৩২ সালে তৈরি হয়েছিল। মেট্রোর রাস্তায় যাবে না এটি, বানানো হবে না কোনও মাল্টিপ্লেক্স। সব ঠিক থাকলে সিঙ্গেল স্ক্রিন হিসেবেই ফের চালু হবে ইদের সময় থেকে।
১৯ শতকে কলকাতায় ভীষণ জনপ্রিয় ছিল রিগাল। যদিও সেইসময় নাম ছিল আলবিয়ন। তারও আগে নাম ছিল ইলেকট্রিক থিয়েটার। ম্যাডনরা এর দায়িত্ব নেন ১৯১৫ সালে। সেইসময় এটিকে ইলেকট্রিক থিয়েটারই বলা হত। এরপর লেখক কালিপ্রসন্ন সিংহ রায়ের ছেলে বিজয়ের নাম অনুসারে এটার নাম বির্জু থিয়েটার রাখা হয়। ১৯২০-তে নাম হয় আলবিয়ন। ১৯৩২ সালে এরপর নাম রাখা হয় রিগাল।
এরপর বাগারিয়া-রা রিগালের দায়িত্ব নেন ১৯৬২ সালে। তখন দর্শকাসন ছিল ৫৭৫। প্রথম বড় মুক্তি ছিল শিকার (১৯৬৮)। যা প্রায় ৭৫ সপ্তাহ চলেছিল। হাতি মেরে সাথি, জয় সন্তোষি মা-ও খুব ভালো ব্যবসা করে। তবে সেই সময় আশেপাশের বড় সিনেমা হলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উঠতে পারছিল না রিগাল। তখন সিনেমাহলের মালিকরা সিদ্ধান্ত নেন পৌরাণিক সিনেমার উপর নির্ভর করে এটি চালানো হবে। ১৯৯৮ থেকে ২০০১ অবধি এখানে দেখানো হত অ্যাডাল্ট সিনেমা। ‘আমরা বুঝতে পেরেছি এটা একটা ভুল পদক্ষেপ ছিল। কারণ এটার ফলে সিনেমার নামের উপরেও একটা খারাপ প্রভাব পড়ে। ২০০৪ থেকে আমরা বাংলা সিনেমা দেখানো শুরু করি।’, জানালেন মালিক রাজেন্দ্র বাগারিয়া।
করোনার ঠিক আগে রিগাল শুরু করে হিন্দি ও বাংলা সিনেমা দেখানো মুক্তি পাওয়ার ১-২ সপ্তাহ পর থেকে। করোনার সময় বন্ধ করে দেওয়া হয় আর পাঁচটা হলের মতোই। বাগারিয়া জানান, ‘এটা একটা পুরনো হল আর সংস্করণ দরকার। মাঝে মাঝেই ছাদ থেকে জল পড়ে। বর্ষার সময় একাধিক অভিযোগ আসে দর্শকদের থেকে। আর শীতকালই হল এই সংস্করণের কাজ করার সেরা সময়।’
সঙ্গে জানান, সবাই পারে না পুরনো বাড়ির সংস্করণ করতে। এবার যেহেতু যোগ্য লোক পেয়েছেন তাই কাজ করিয়ে ইদের আগে ফেরত আসার কথা ভাবছেন। আর ছাউনি দেওয়ার কারণ যাতে কাজের সময় ব্যস্ত রাস্তায় থাকা পথচারীদের কোনও ক্ষতি না হয়।
বাগারিয়ার মতে, ডবল স্ক্রিন বানানো হবে না রিগালকে। কারণ তাঁদের কাছে সেই পরিকাঠামো নেই। তবে ইদে খোলার পর থেকে জাতীয় স্তরে মুক্তি পাওয়া সিনেমা নিয়ে আসার কথা ভাবা হচ্ছে।