মা আসছেন । অতিমারীর আতঙ্কের মাঝেও বাঙালির শ্রেষ্ঠ উত্সবের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। বাঙালিও ধীরে ধীরে ঢুকে পড়ছে পুজোর মুডে। বাদ যাননি মীরও।
পুজোর আগে একটি চ্যানেলের জন্য বিজ্ঞাপনী শুটিংয়ে অংশ নিয়েছিলেন মীর। তার সাজ পাজামা-পাঞ্জাবি, জহর কোট। নিজের ছবির ক্যাপশনে এই জনপ্রিয় রেডিও জকি, সঞ্চালক লিখেছিলেন, ‘ধীরে ধীরে পুজো মুডে ঢুকছে দেখো কে... ! ’কিন্তু একজন মুসলমান হয়ে হিন্দু উৎসবের উদযাপনের শরিক হওয়ার বিষয়টিকে মেনে নিতে পারেননি মৌলবাদী নেটাগরিকদের একটা বড় অংশ ।
কিছুক্ষনের মধ্যেই শুরু হয়ে যায় , ট্রোলিং , চোখা চোখা ছাপার অযোগ্য শব্দের ব্যবহার । এমনকি রেহাই দেওয়া হয়নি অভিনেতার মা বাবাকেও । একজন মুসলিম কেন হিন্দুদের পরব উদযাপন করবেন ? এটাই ছিল আক্রমণের মূল সুর। একই সঙ্গে মন্তব্য ভেসে আসে , ‘ইদের সময় আপনার তো এত আদিখ্যেতা দেখি না ! ’
কিন্তু একুশ শতকের আধুনিক ভারতেও কেন এই ধর্মীয় বিদ্বেষ ? উত্তরে আনন্দবাজার ডিজিটালকে মীর জানিয়েছেন , এগুলো নিছকই অসহিষ্ণুতার বহিঃপ্রকাশ । ‘আবহ এর জন্য দায়ী। দায়ী এখনকার মানসিকতা। অসহিষ্ণুতা ছড়িয়ে গিয়েছে ছোট থেকে বড়,সবার মধ্যে। সবেতেই বিরক্তি। এবং মনপসন্দ কোনও কিছু না হলেই ‘বুলিং’, ‘ট্রোলিং’। আমিও শিষ্টতা মেনে এর জবাব দিয়েছি। যদিও সবাই বলেন, এ সব উপেক্ষা করাই ভাল ’ , এমনটাই মত তাঁর ।
কিন্তু কেমন জবাব দিলেন সানডে সাসপেন্সের অন্যতম কণ্ঠশিল্পী। অপর একটি ফেসবুক পোস্টে মাথায় ফেজ টুপি পরে এবং হাতে অমৃতির থালা নিয়ে মিষ্টি মুখে প্রতিবাদ জানালেন মীর। ক্যাপশন লেখেন কিছু গুরুত্বপূর্ন লাইন, যে কয় মোরে বেশ্যার পোলা/ তারে বুকেই জড়িয়ে ধরি/ বেশ্যাও যে মায়ের জাত / তারে সমান সজদা করি / ধর্ম বিভেদ ভরাবে কি পেট / শুধায় আপনজনে/ যাহা মসজিদ, তাহাই মন্দির/ ভক্তি রবে মনে/ আজানের ডাকে নামাবলী পরি/ আবেগ মানবরূপী/ যে শিরে বরিষে গঙ্গার জল/ সেই মাথাই ঢাকে টুপি।’
আগেও একাধিকবার ধর্মীয় কারণে আক্রান্ত হয়েছেন এই শিল্পী । তবে এ জন্য কোনো বিশেষ তারে বাঁধা রাজনৈতিক মতাদর্শকে একমাত্র দায়ী করতে রাজি নন তিনি । মানুষের মানসিকতার উন্নতি সকলের আগে প্রয়োজন বলেই তাঁর অভিমত । আজও মনের গভীরে মানুষের আগে একজন হিন্দু বা একজন ইসলাম ধর্মাবলম্বীর পরিচয় বেশি প্রাধান্য পায় । সংবিধানের পাতায় , মুখে ধর্মনিরপেক্ষতার বার্তা কপচালেও অন্তরের স্বরূপ বেরিয়ে আসে যখন একজন হিন্দু ঈদে আর একজন মুসলমান মেতে ওঠেন শারদীয়ায় , কিছুটা আক্ষেপই ঝরে পরে তাঁর কণ্ঠে । তবে মীর যে মানবতার ধর্মেই দীক্ষিত তা ফের বুঝিয়ে দিলেন তিনি।