উস্তাদ রাশিদ খানের অকাল মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ সকলে। মাত্র ৫৫ বছর বয়সে থেমে গেল তাঁর সঙ্গীত সফর। দীর্ঘদিন ধরেই প্রস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী। ডিসেম্বরে জানা যায়, দীর্ঘ কয়েক সপ্তাহ ধরে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন রাশিদ খান। তবে শিল্পীর অসুস্থতা নিয়ে প্রকাশ্যে টুঁ শব্দটাও করেনি পরিবার। আরও পড়ুন-‘দু-তিন বছর ধরে ওঁর চিকিৎসাটা আমরাই করিয়েছি’, ‘আপনজন’ রাশিদকে হারিয়ে শোকার্ত মমতা
মঙ্গলবার দুপুরে জানা যায়, ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়েছে উস্তাদ রাশিদ খানকে। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই এল মৃত্যু সংসাদ। মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, দুপুর ৩.৪৫ মিনিটে সুরালোকে পাড়ি দিয়েছেন রাশিদ খান। এই খবর কানে পৌঁছাতেই মন ভেঙেছে পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর। অনুজ শিল্পীর এই অকাল মৃত্যুতে শোকের পাশাপাশি ক্ষোভও রয়েছে তাঁর মনে। কেন রাশিদ খানের অসুস্থতার কথা জানাল না পরিবার? লুকিয়ে গেল!
পরিবারের অবস্থান নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন পণ্ডিতজি। টিভি নাইন বাংলাকে তিনি জানান, ‘পরিবার এই মিথ্যাচার কেন করলেন?’ এদিন দুপুরে মুম্বই থেকে কলকাতা ফিরেছেন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী। শহরে ফিরেই মনভার করা খবর। ক্ষোভের সুরে বলেন, ‘গতকাল রাত পর্যন্ত জানতাম, রাশিদ ভাল আছেন। দুবাইয়ে আছেন। সুস্থ আছেন। আর মুখ্যমন্ত্রী কিছুক্ষণ আগে খবর দিলেন, রাশিদ আর নেই। আমার কিছু করতেই ইচ্ছা করছে না। আমি একটাই কথা জানতে চাই বাড়ির লোক কেন এই মিথ্যাচার করল। মেসেজ দিয়েছেন এতদিন ধরে যে রাশিদ ভাল আছে।’
গত একমাস যাবত নিয়মিত রাশিদের খোঁজ-খবর নিচ্ছিলেন বর্ষীয়ান শিল্পী। শুধু বলেছেন, ‘ও তো আমার হাতেই তৈরি। চলে যাওয়ার বয়স তো এটা নয়।…রাশিদ খান আমার মনে কতটা জায়গা নিয়ে রয়েছে তার কোনও ব্যাখ্যা আমি ভাষায় ব্যক্ত করতে পারব না।’
গত ২২ নভেম্বর ব্রেন স্ট্রোক হয় শিল্পীর। তারপর থেকেই পিয়ারলেস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মাঝে সেরেও উঠছিলেন, তবে ফের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। প্রিয় মানুষের মৃত্যুর খবর পেয়ে সব কাজ ফেলে হাসপাতালে দৌড়ান মমতা। সেখানে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে দিদি বলেন, ‘এত অল্প বয়সে চলে গেল। ওকে ইউকে পাঠিয়েছিলাম চিকিৎসার জন্য। ওকে তো বঙ্গভূষণ দেওয়া হয়েছে। স্পেশ্যাল কেস। আমরা চেষ্টা করেছিলাম বাঁচানোর।’ ব্যক্তিগত স্তরে রাশিদ খানের সঙ্গে নিজের মজবুত সম্পর্কের কথাও এদিন তুলে ধরেন মমতা। জানালেন, ‘ওর সঙ্গে আমার ভীষণ ভালো সম্পর্ক। ফোনে ভয়েস মেসেজ পাঠাতো, রাখা আছে সে-সব। বলত,দিদি একবার বাড়িতে আসো। হাসপাতাল থেকেও পাঠাতো। আমি বলেছিলাম চিন্তার কারণ নেই…’।
গান স্যালুট দেওয়া হবে প্রয়াত শিল্পীকে, পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আগামিকাল (বুধবার) হবে শেষকৃ্ত্য। জানান মুখ্যমন্ত্রী। মমতার জানিয়েছেন, মঙ্গলবার পিস ওয়ার্ল্ডে রাখা থাকবে দেহ, বুধবার সকালে রবীন্দ্রসদনে শায়িত থাকবে শিল্পীর দেহ। সেখানেই শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন তাঁর গুণমুগ্ধরা। তারপর নিয়ে যাওয়া হবে নাকতলার বাড়িতে। সেখান থেকে টলিগঞ্জ মাজারে গোরস্থ করা হবে উস্তাদ রাশিদ খানকে।