সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর থেকে প্রশ্নের মুখে মুম্বই পুলিশের তদন্ত। ১৪ই জুন সুশান্তের মৃত্যুর প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার আগেই সুশান্তের মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’র বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। সুশান্তের পরিবারের তরফে পাটনা পুলিশের কাছে রিয়া চক্রবর্তী ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের পর থেকে যে ঘটনাক্রম সামনে এসেছে তাতে মুম্বই পুলিশের উপর ভরসা হারিয়েছেন সুশান্ত ভক্তরা। এর মাঝেই শুক্রবার সামনে এল বিস্ফোরক তথ্য। রিপাবলিক টিভির তদন্তে রিয়া চক্রবর্তীর কল ডিটেলস রিপোর্ট উঠে এসেছে। সেখানে স্পষ্টই দেখা গিয়েছে সুশান্তের মৃত্যুর তদন্তে থাকা বান্দ্রা পুলিশের প্রধান, মুম্বইয়ের জোন ৯-এর ডিসিপি অভিষেক ত্রিমুখের সঙ্গে গত ২০ই জুন থেকে ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে ৫ বার ফোনে যোগাযোগ রয়েছে রিয়ার। চারবার কল এবং একবার টেক্সট মেসেজের আদান-প্রদান হয়েছে।
২০শে জুন রিয়াকে মেসেজ করেন ডিসিপি মুম্বই (জোন-৯) অভিষেক ত্রিমুখে। এরপরের চারবার ফোনে কথা হয়েছে তাঁদের মধ্যে, দুবার ইনকামিং এবং দু বার আউট গোয়িং। অর্থাত্ রিয়া চক্রবর্তীর সম্পর্কিত সব তথ্য ছিল মুম্বই পুলিশের এই উচ্চ পদস্থ আধিকারিকের কাছে। এই খবর সামনে আসবার পর থেকেই নেটিজেনদের প্রশ্ন কেন এবং কীভাবে একজন ডিসিপি ফোনে ব্যক্তিগত যোগাযোগ রাখছেন এই মামলার সঙ্গে জড়িত এবং অন্যতম সন্দেহভাজন ব্যক্তি রিয়া চক্রবর্তীর সঙ্গে। কোথাউ কোনও লিখিত নিয়ম না থাকলেও, একথা কারুরই অজানা নয়, কেস সংক্রান্ত কোনও বিষয় নিয়ে কাউকে ডেকে পাঠাতে হলে কিংবা তথ্য প্রয়োজন পড়লে খুব বেশি হলে একজন সাব-ইন্সপেক্টর ব়্যাঙ্কের অফিসার ফোনে যোগাযোগের কাজ করে থাকেন। তাহলে হঠাত্ কী কারণে মুম্বইয়ে ডিসিপির প্রয়োজন হল রিয়া চক্রবর্তীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করবার? উঠছে প্রশ্ন।
বিহার পুলিশ এই মামলার তদন্ত হাতে পাওয়ার পর থেকেই মুম্বই পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁদের সঙ্গে অসহযোগিতা করবার অভিযোগ আনা হয়েছে। বিহার পুলিশের ডিজিপি গুপ্তেশ্বর পাণ্ডে সরাসরি জানিয়েছেন, মুম্বই পুলিশের তরফে বলা হয় রিয়া চক্রবর্তী সম্পর্কে তাঁদের কাছে কোনও তথ্য নেই। অথচ সেই রিয়াই কিনা ফোনে যোগাযোগ রেখেছিলেন মুম্বই পুলিশের ডিসিপির সঙ্গে!
গত ১৪ জুন বান্দ্রার অ্যাপার্টমেন্ট রহস্যজনক অবস্থায় উদ্ধার হয় সুশান্তের দেহ। অস্বাভাবিক মামলার তদন্ত শুরু করে মুম্বই পুলিশ। কিন্তু মৃত্যুর চল্লিশ দিন পরেও কোনও এফআইআর দায়ের না করায়, এবং তদন্ত সঠিক দিকে এগোচ্ছে না এ কথা দাবি করে সুশান্তের বাবা কেকে সিং পাটনার রাজীব নগর থানায় এফআইআর দায়ের করেন রিয়া চক্রবর্তী ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে। পাটনা পুলিশের দল এই মামলার তদন্তে মুম্বই পৌঁছালে ‘বাধা’র মুখে পড়তে হয় তাঁদের। বিহারের পুলিশের সর্বোচ্চ কর্তা দাবি করেন জোর করে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে পাটনার এসপি বিনয় তিওয়ারিকে। এরপরই মঙ্গলবার সিবিআইয়ের হাতে এই মামলা তুলে দেওয়ার সুপারিশ করে বিহার সরকার। পরের দিনই সেই সুপারিশে মঞ্জুরি দেয় কেন্দ্র। সেইমতো বৃহস্পতিবারই সিবিআই সুশান্তের মৃত্যু মামলার তদন্ত নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে।