বলিউডের বক্স অফিসে ২০১৯ সালটা যদি একটি মাত্র শব্দ দিয়ে বর্ণনা করতে হয় সেটা হবে-অপ্রত্যাশিত। এই বছর বক্স অফিসে সাফল্যের নতুন সংজ্ঞা দিয়েছে উরিঃদ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মতো ছোট বাজেটের ছবি, পাশাপাশি জাতীয় পুরস্কারও পটেকে পুরেছে ভিকি কৌশল অভিনীত এই ছবি। আর্টিকেল ১৫, বদলা, লুকা ছুপি-র মতো তথাকথিত স্মল বাজেট ফিল্মগুলোর সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে নি কলঙ্ক, পানিপথের মতো বিগ বাজেট ছবি।
স্টার পাওয়ার:
বলিউডের প্রথম সারির বেশ কিছু তারকা এবছর তাদের কেরিয়ারের সবচেয়ে বড় হিট ছবি উপহার দিয়েছেন। তালিকায় রয়েছেন হৃতিক রোশন, অক্ষয় কুমার, শাহিদ কাপুররা। সুপার থার্টি এবং ওয়ার- বছরে ডবল ধামাকা উপহার দিয়েছেন হৃত্বিক রোশন। অন্যদিকে কবীর সিংয়ে অ্যাংরি ইয়াংম্যানের চরিত্রে নজর কেড়েছেন শাসা। বক্স অফিসের আসল খিলাড়ি যে অক্ষয় কুমার তা আবারও প্রমাণ করেছেন আক্কি- কেশরি, মিশন মঙ্গল, হাউস ফুল ফোর, তিনটি হিট ছবির সঙ্গে। বছরের শেষ শুক্রবার মুক্তি পাওয়া গুড নিউজও বেশ ভালো শুরু করেছে। সলমন খানের ভারতও বক্স অফিসে ভালোই সাড়া ফেলেছে। ১০০ কোটির গণ্ডি পার করে এগিয়ে চলছে ভাইজানের দাবাং থ্রিও।
বিষয়বস্তুই আসল রাজা:
টার পাওয়ারকে অতিক্রম করে দিনের শেষে বিষয়বস্তুই আসল রাজা, গত কয়েক বছর ধরেই বলিউডের বক্স অফিস সে কথা প্রমাণ করে আসছে। এবছরও তাঁর অন্যথা হল না। রণবীর-আলিয়া জুটি গল্লি বয়(১৪০.২৫ কোটি) থেকে আয়ুষ্মান খুরানার আর্টিকেল ১৫(৬৫.৪৫ কোটি) কিংবা ড্রিম গার্ল (১৪২.২৬ কোটি)-প্রত্যেকটি ছবিই বক্স অফিসে ভালো ফল করেছে। গল্লি বয়তে ধরা পড়েছে মুম্বইয়ের এঁদো বস্তি থেকে উঠে আসা এক ব়্যাপারের লড়াইয়ের গল্প, অন্যদিকে আর্টিকেল ১৫-এ ভারতীয় সমাজব্যবস্থার অন্দরে লুকিয়ে থাকা অভিশাপ- জাতিভেদ প্রথাকে সংবেদশনীলভাবে তুলে ধরেছেন অনুভব সিনহা। সমালোচকদের মতে উত্তরপ্রদেশের এক সত্য ঘটনাকেই এই ছবিতে তুলে ধরেছেন অনুভব সিনহা।
ড্রিম গার্ল ছবিতে আয়ুষ্মান খুরানাকে আবারও নতুন করে আবিষ্কার করেছেন দর্শকরা। একাকীত্বে ভোগা মানুষদের স্বপ্নচারিনী আয়ুষ্মানের ব্যক্তিগতজীবন কেমনভাবে প্রভাবিত হবে তাঁর পেশাগত জীবনের দ্বারা-মজার ছলে সেই গল্পই ওঠে এসেছে ড্রিম গার্লে। তাশখন্দ ফাইলস,বালার মতো বিষয়বস্তু নির্ভর ছবিগুলোও বক্স অফিসের রিপোর্ট কার্ডে ডিসটিংশন নিয়ে পাশ করেছে।
নারীশক্তির জয়জয়কার:
নারীকেন্দ্রিক ছবিও প্রধান্য পেয়েছে গোটা বছর জুড়ে। একদিকে যেমন সোনাক্ষী সিনহাকে সেক্স ক্লিনিং চালাতে দেখা গিয়েছে খানদানি সাফাখানায়, তেমনই প্রচলিত সব ধ্যানধারণা ভেঙে সান্ড কি আঁখ ছবিতে ষাটোর্দ্ধ শার্প শ্যুটারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ভূমি পেদনেকর এবং তাপসী পান্নু। সাহু ছবিতে প্রভাসের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে টক্কর দিয়েছেন শ্রদ্ধা কাপুর, ছিঁছোড়ে ছবিতেও গুরুত্বপূর্ন চরিত্রে দেখা মিলেছে শ্রদ্ধার। রানি মুখোপাধ্যায় ফিরেছেন মর্দানি টু নিয়ে। শিবানি শিবাজি রায়ের চরিত্রে আবারও নজর কাড়া আদিত্য ঘরনি। অক্ষয় কুমারের উপস্থিতি সত্ত্বেও মিশন মঙ্গলে উজ্বল বিদ্যা বালান, তাপসী পান্নুরা। এ প্রসঙ্গে ট্রেড অ্যানালিস্ট তরণ আদর্শ জানিয়েছেন, 'আমি সবসময়ই বলি বক্স অফিস হামেশাই অপ্রত্যাশিত। এটাই বক্স অফিসের সবচেয়ে বড়ো বিষয়! তুমি কোনওদিনই জানবে কোন ছবিটা চলবে আর কোনটা মুখ থুবড়ে পড়বে। এই বছর ছিল অনেক চমকে ভরপুর। এমন অনেক ছবি লাভের মুখ দেখেছে যেগুলো কেউ আশা করেনি। শুধু তারকাদের ছবি হিট হয়েছে বলা যাবে না, তারকা আর বিষয়বস্তুর যৌথ মিশেলেই লক্ষ্মী লাভ হয়েছে প্রযোজকের। বদলা, লুক ছুপি, পতি পত্নী অউর ওহ-এগুলোর আদর্শ উদাহরণ। সব মিলিয়ে এটা দুর্দান্ত একটা বছর’।
হিটের নিরিখে সেরা পাঁচ:
ওয়ার (৩৭১.৯১ কোটি)
কবীর সিং (২৭৮.২৪ কোটি)
উরি: দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক (২৪৫.৩৬ কোটি)
ভারত (২১১.০৭ কোটি)
মিশন মঙ্গল (২০২.৯৮ কোটি)
সেরা ৫ ফ্লপ ছবির তালিকা:
কলঙ্ক (৮০.৩৫ কোটি)
পানিপথ (৩৩.৩৯ কোটি)
সোনচিড়িয়া (৬.৬০ কোটি)
জাবাড়িয়া জোড়ি (১৬.৩৩ কোটি)
দ্য জোয়া ফ্যাক্টর (৩.১২ কোটি)
( সর্বভারতীয় পরিসংখ্যান, বলিউড হাঙ্গামা অনুসারে)