বাঙালিরা কি দিন দিন বাংলা গান বিমুখ হয়ে উঠছেন? বাংলা ব্যান্ড, অরিজিন্যাল, সিনেমার গান সহ সবেতেই অরুচি হয়েছে তাঁদের? অন্তত মিউজিক অ্যাপ স্পটিফাইয়ের রিপোর্ট তেমনটাই বলছে। এমনই আজকাল অনেক বাঙালির মতে বাংলা জেনে বা পড়ে আর কী লাভ? এই ভাষা দিয়ে তো আর দুনিয়া চলে না, প্রয়োজনও নেই বিশেষ। তার থেকে ইংরেজিটাই ভালো বরং, হিন্দিও বিশেষ পিছিয়ে নেই এই ক্ষেত্রে। আর বাঙালিরা যে দিন দিন বাংলাকে পাশ কাটিয়ে ইংরেজি এবং হিন্দিকে ভালো করে জানা শেখায় আগ্রহী হয়ে পড়ছে সে তো খোদ ভবানীপ্রসাদ মজুমদার আজ থেকে বহু বছর আগেই লিখে গেছেন, অপূর্ব দত্তের 'বাংলা টাংলা' কবিতাতেও একই কথা লেখা। সেই কবিতা যে আজও কতটা প্রসঙ্গিক সেটাই মনে যে। আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল স্পটিফাইয়ের এই লিসেনার্স লিস্ট। আর সেই প্রসঙ্গে মুখ খুললেন রূপঙ্কর বাগচী এবং ঋদ্ধি সেন।
স্পটিফাই অ্যাপ এখন ভীষণই জনপ্রিয়। সম্প্রতি এই অ্যাপের তরফে ১৪ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত একটি লিস্ট প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে মুম্বই, কলকাতা, দিল্লি সহ সমস্ত জায়গার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। আর এই লিস্টেই মিলেছে এক চমকপ্রদ তথ্য। অন্যান্য জায়গায় অবশ্যই হিন্দি গান শোনা হয়, কিন্তু সঙ্গে আছে আঞ্চলিক ভাষার গানও। কিন্তু কলকাতার ক্ষেত্রে নেই একটিও বাংলা গান। এখান থেকেই প্রশ্ন উঠছে তবে কি বাঙালিরা আর বাংলা গান শুনতে চান না?
আরও পড়ুন: 'জনসংযোগ হারাচ্ছে বাংলা ছবি', কেন এমনটা মনে করেন ‘আজকের সাজাহান’-এর সুব্রত ওরফে ঋদ্ধি
রূপঙ্কর বাগচী এই প্রসঙ্গে এই সময়কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, 'এটা অত্যন্ত দুঃখজনক একটি ঘটনা। এটা আমারও ব্যর্থতা। আমিই হয়তো ইন্টারেস্টিং কিছু বানাতে পারছি না তাই মানুষ শুনছেন না। শ্রোতাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। কিন্তু বিষয়টা বেশ ভয়ের। তবে নিজেদের যে ভুল আছে, খামতি আছে সেগুলো দ্রুত শুধরে নিতে হবে, নিজেদের আরও আপ টু ডেট হতে হবে। এটা খুব চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াল। বাঙালিরা বাংলা গান শুনছেন না ভেবেই কেমন কষ্ট হচ্ছে।'
অভিনেতা ঋদ্ধি সেনও রূপঙ্করের মতো একই মত পোষণ করেন। তিনি বলেন, 'আমি বলব আমরা আমাদের নিজস্বতা হারিয়ে ফেলেছি। ওভারঅল সংস্কৃতির জায়গা থেকে এটা বিগত কয়েক বছর ধরেই হয়ে আসছে। সবাই যেন অনুকরণে মত্ত। আমরা সিনেমার বাইরে আর কোনও গানকে শুনি না, সাপোর্ট করি না। তার মানে এটা নয় যে ভালো ভালো কাজ হচ্ছে না। বাঙালিয়ানার অভাব এখন সবেতেই স্পষ্ট। আজকাল তো বাংলা ধারাবাহিকেও ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হিসেবে হিন্দি গান ব্যবহার করা হয়।'