'রোজ কত কী ঘটে যাহা তাহা, এমন কেন সত্যি হয় না আহা!' রবি ঠাকুরই লিখে গেছেন। আর এমন এক মন ভালো করা, সাহস জোগানোয় এমন ঘটনার সাক্ষী থাকলেন খোদ শিলাজিৎ। নিজের বয়ানে ভক্তদের শোনালেন সেই অনন্য অভিজ্ঞতার কথা।
অনেকেই বলেন শহরটা নাকি নিষ্প্রাণ হয়ে গিয়েছে। সবাই যে যার মতো ছুটে চলেছে। কেউ কারও জন্য ফিরে তাকায় না। কিন্তু এত সবের মাঝেও তিলোত্তমার বুকে এমন কিছু মানুষ আছেন যাঁরা আজও স্বপ্ন দেখান, সাহস জোগান। এমনও কিছু ঘটনা এই শহরের বুকে ঘটে হামেশাই যার গল্প বারবার শুনতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সবসময় শোনা হয় না। সবসময় সেই ঘটনা সামনে আসে না। তবে এবার এমনই এক অদ্ভুত ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আনলেন ‘জলফড়িং’-এর গায়ক।
আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় বা নবপ্রজন্মের মুখে একটা কথা ভীষণই শোনা যায়, 'ডাউন লাগছে', 'ভালো লাগছে না, অ্যাম গিভিং আপ।' সামান্য লড়াইয়েই ক্লান্ত হয়ে পড়েন অনেকেই। তাঁদের সাহস জোগাতে নিজের এক অভিজ্ঞতার কথা লিখলেন শিলাজিৎ। তাঁর কথায়, 'খুব ডাউন লাগছে? শোনো তাহলে। রাত পৌনে বারোটা, গিয়েছিলাম বহুদিন বাদে একটা পার্টিতে ।ভক্তের জন্মদিন। প্রিয়া সিনেমার বাইরে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ উদয় হলেন এই ভদ্রলোক। নাম রাজু। এ শহরে অনেক কিছুই হয়।হতে থাকে। যা নিয়ন আলোতেও পান্ডুর , দিনের বেলাতেও ফ্যাকাশে, আউট অফ ফোকাস। খুব মন খারাপ হয় নিজেদের কাজের মূল্য পাই না বলে, মন্ত্রীরাও দুঃখ করেন, আমি-তুই কোন হরিদাস। আমরাও করি।'
তারপরই গায়ক তাঁর কথায় কথায় লিখলেন সেই ভদ্রলোক ওই মাঝরাতে শিলাজিতের কাছে আচার বিক্রি করতে গিয়েছিলেন। গায়কের পোস্ট অনুযায়ী, 'এই মানুষটা মধ্যরাতে প্রিয়া সিনেমা হলের বাইরে আমাকে দেখে এগিয়ে এলেন অল্প হাসি মুখে। বললেন, আচার নেবেন ভালো বাড়ির তৈরি আচার আছে। আচার! মধ্যরাতে এ কলকাতায় ব্ল্যাকে মদ বিক্রি হতেই পারে বা অন্য কিছু। কিন্তু আচার! আমি খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলাম ওঁর দিকে। ভাবলাম যা বলেও ফেললাম। জিজ্ঞাসা করে ফেললাম আপনি এই মাঝরাতে এটা ভাবলেন যে একটা মানুষ সিনেমা হলের বাইরে নিভে যাওয়া একটা শহরে আপনার কাছ থেকে আচার কিনতে পারে। আপনি এটা ভাবলেন কিভাবে? ওঁর বললেন, বললেন দুটো মেয়ে আছে ক্লাস সেভেন আর নাইন, তাদের পড়াশোনা, সংসার খরচ চালাতে হয় তো।সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ফিরতে মাঝরাত হয়ে যায় তাঁর। কথা শুনে আমি লঙ্কা আর রসুনের আচার কিনলাম দু শিশি।'
জানালেন তিনি যেচেই সেই ভদ্রলোকের সঙ্গে ছবি তুলেছেন। তাঁর কাছে সেই আচার বিক্রেতা একজন আদর্শ বাবা, স্বামী এবং মানুষ। তিনি তাঁকে দেখেই বুঝেছেন মধ্য রাতের এই শহরে অনেক মানুষ হেরে গিয়ে বাড়ি ফেরেন না। গায়কের কথায়, 'উনি যদি এভাবে ভাবতে পারেন, উনি যদি হাসিমুখে রাতের ব্যবসার মধ্যে আচারকে বেছে নিয়ে সেটা বিক্রি করার জন্য রাস্তা পেরোতে পারেন। তাহলে আমিও পারব। রাজু ভাই আপনি আমার থেকে অনেকটাই বয়সে ছোট হবেন, আপনি আমাকে অনুপ্রাণিত করলেন।'
শিলাজিৎ তাঁর পোস্টে আরও লেখেন, 'আপনার মানসিকতা আমার মধ্যে ভর করুক। ভর করুক আমার ভক্তদের মধ্যে, বন্ধুদের মধ্যে, আত্মীয়দের মধ্যে,তাহলে না পাওয়ার গল্প বলে জীবন নষ্ট না করে আমরাও লড়তে শিখব। আমরাও রাস্তা পার হব অন্ধকারের শহরে এই ভেবে ওই তো একটা মানুষ আছে। আশা আছে। আলো আছে। সব ঘুটঘুটে হয়ে যায়নি।'