লিলি চক্রবর্তীউত্তমকুমারের সঙ্গে আমার প্রথম কাজ 'বিপাশা'য়। কিন্তু সেই ছবিতে ওঁর সঙ্গে আমার কোনও দৃশ্যই ছিল না। সুচিত্রা সেনের বান্ধবীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলাম। ইন্ডাস্ট্রিতে আমি তখন নতুন। সেটে দেখতাম ওঁকে। দেখতাম আর অবাক হতাম। এত বড় অভিনেতা! অথচ কী অমায়িক। অগাধ সাফল্য পেয়েও কাজের দিকে অটুট মনোযোগ!
'দেয়া নেয়া' করতে গিয়ে আলাপ আমাদের। এত বছর পরেও স্মৃতিতে ছবির মতো ভেসে ওঠে দিনগুলি। ইন্ডাস্ট্রিতে তখন সবে কয়েক বছর পার করেছি। অথচ আমাকে একবারও সে কথা বুঝতে দেননি। ভাবতেই পারিনি ওঁর কাছ থেকে এতটা সহযোগিতা পাব। উনি যখন আমার সঙ্গে কথা বলতেন, মনে হত, আমি ওঁর কত দিনের চেনা। সকলকে নিয়ে থাকতে ভালোবাসতেন। সবাইকে কাছে টেনে নিতে পারতেন। এত নম্র, এত ভদ্র সুপারস্টার আমি আগে কখনও দেখিনি। যত দেখেছি, ততই মুগ্ধ হয়েছি।
একবার একটি ছবিতে আমাকে 'বৌঠান' বলতে হয়েছিল। তার পর থেকে ওঁর 'বৌঠান'ই হয়ে গেলাম! পর্দার বাইরেও মজা করে তা-ই ডাকতেন আমায়। এর পর 'দুই পুরুষ' ছবিতে ফের একসঙ্গে কাজ। এ বার কিন্তু আর 'বৌঠান' নয়! ওঁর বান্ধবীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। মনে আছে, প্রত্যেক পদে আমাকে উৎসাহ দিতেন। অভিনয়ের প্রশংসা করতেন। আমিও মনে সাহস পেতাম।
ওই ছবিতে আমাদের সঙ্গে বেণুদিও অভিনয় করেছিলেন। উনি মাঝেমধ্যেই সেটে রকমারি পদ রেঁধে আনতেন। তখন আমারও ডাক পড়ত। মহানায়ক বলতেন, 'চলে আয়, আমরা একসঙ্গে খাব।'
এমনই ছিলেন মানুষটা। সবাইকে আপন করে নিতেন। আগলে রাখতেন। ইন্ডাস্ট্রির দু:স্থ শিল্পীদের জন্য কত কাজ করেছেন! কার কী লাগবে, কেউ কোনও সমস্যায় পড়ল কি না- সব দিকে নজর তাঁর। সারা জীবন শুধু দান করে গিয়েছেন। কাউকে কিচ্ছুটি জানতে দেননি কখনও। দেখতাম, অনেক তারকাই কিছু দান করতে গেলে একজন ফটোগ্রাফার সঙ্গে নিয়ে যেতেন। পর দিন কাগজে তাঁদের ছবি বেরতো। কিন্তু ওঁকে কখনও এমন প্রচার করতে দেখিনি। এমন মানুষের কি আদৌ প্রচার লাগে?
উনি বলেছিলেন, ওঁর একটি ছবিতে আমাকে নেবেন। কিন্তু শেষমেশ তা সম্ভব হয়নি। কথা দিয়েছিলেন, আবার আমায় ডেকে নেবেন। কথা রেখেছিলেন। 'ভোলা ময়রা'র সময় ফের ডাক পড়ে আমার। ওঁর স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করি আমি। এর পর আরও একটি ছবির শ্যুট শুরু হয়েছিল। কিন্তু আচমকাই উনি চলে গেলেন। সেই শূন্যতা পূরণ হল না আজও। তারকা হয়েও যে মাটির এত কাছাকাছি থাকা যায়, তা ওঁকে না দেখলে জানতাম না।