রণবীর ভট্টাচার্য
কিংবদন্তি আবদুল গাফফার চৌধুরী আর নেই। ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র রচয়িতা আবদুল গাফফার চৌধুরী ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক। তবে আজকের দিনটির সঙ্গে বাংলা ভাষার জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ দিন। আসামের বরাক উপত্যকায় ১১ জন মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন আসাম পুলিশের গুলিতে। তাই এই দিন শহিদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
কী হয়েছিল বরাক উপত্যকায়?
বরাক উপত্যকার ভাষার লড়াইয়ের সূচনা হয় সেই ১৯৪৭ সালেই। দেশভাগের পর সিলেটে গণভোটের পর সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলা ভাষাভাষী সম্পন্ন সিলেট যোগ দেয় পূর্ব পাকিস্তানে আর করিমগঞ্জ ভারতের আসামের কাছাড় জেলায় যোগ দেয়। বলাই বাহুল্য, করিমগঞ্জের মানুষের সাথে অসমীয়া সংস্কৃতির কোন সম্পর্ক ছিল না বললেই চলে। ১৯৮০র পরবর্তী সময়ে বরাক উপত্যকা তৈরি হয় কাছাড়, করিমগঞ্জ, হয়লাকান্দি নিয়ে। অনেকের মতে বরাক উপত্যকার বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার অসমীয়া জনজাতির ভাষা ও সংস্কৃতির মিল কম।
স্বাধীনতার পর অসম সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে শুধুমাত্র অসমীয়া ভাষাকেই রাজ্যের একমাত্র ভাষাকেই সরকারি ভাষা করা হবে। ১৯৬১, ১৯৭২, ১৯৮৬— বারবার ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে বাঙালি এই বরাক উপত্যকায়। ভাষা আন্দোলনের জন্য কাছাড় গণসংগ্রাম পরিষদ তৈরি হয় ১৯৬১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। ১৯৬১ সালের ১৯ মে ভাষা আন্দোলনে প্রতিবাদী ১১ জন বাঙালির উপর গুলি চালায় অসম পুলিশ। আজও বরাক উপত্যকার বহু জায়গায় ভাষা আন্দোলনের সৌধ দেখা যায়।
পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা আন্দোলন ও পরবর্তী কালে বাংলাদেশের জন্ম— এখানে বাংলা ভাষার ভূমিকা অনস্বীকার্য। আবদুল গাফফার চৌধুরীর ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না কোনও মতেই। তাই আজকের ঐতিহাসিক দিনে ওঁর জীবনাবসান তারিখ, সময় ও আবেগ মিলিয়ে দিয়ে গেল।