কীভাবে নভেল করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ হঠাৎ করে উঠে এল, তা নিয়ে এখনও ধারণা পরিষ্কার নয় বিজ্ঞানীদের মধ্যে। কিন্তু হালের নতুন গবেষণা এই বিষয়ে আলোকপাত করেছে। বলা হয়েছে, এর সূত্র লুকিয়ে রয়েছে মানুষের জিনের মধ্যেই। এবং এর পিছনে ভূমিকা রয়েছে নিয়ানডার্থাল মানবের।
হালে Proceedings of the National Academy of Sciences (PNAS)-এ একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, নিয়ানডার্থাল মানবের সঙ্গে আধুনিক মানুষের পূর্বসূরীদের সঙ্গমের ফলেই করোনার মতো ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করার শক্তি হারিয়েছে মানুষ।
সব সময়েই ধরে নেওয়া হয় Evolution বা বিবর্তন যে কোনও প্রাণীকে আরও শক্তিশালী করে। তাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা জোগায়। এর মধ্যে রয়েছে ক্ষতিকারক জীবাণুদের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতাও।
বহু যুগ ধরেই ধারণা ছিল, নিয়ানডার্থাল মানবের সঙ্গে বর্তমান মানুষের পূর্বপুরুষের রীতিমতো লড়াই ছিল। ক্রমে ক্রমে নিয়ানডার্থাল মানব সেই লড়াইয়ে পরাজিত হয়ে হারিয়ে গিয়েছে। কিন্তু হালের বেশ কিছু গবেষণা বলেছে, বিষয়টি মোটেও তা নয়। এণন বহু প্রমাণ রয়েছে, যেখানে দেখা গিয়েছে, একই এলাকায় নিয়ানডার্থাল মানব এবং আধুনিক মানুষের পূর্বসূরীরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করেছে। শুধু তাই নয়, তারা পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়েছে, তার ফলেও জিনে বদল এসেছে। ক্রমে ক্রমে নিয়ানডার্থাল মানবের সংখ্যা কমতে থেকেছে। এবং তারা অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।
নিয়ানডার্থাল মানবের সঙ্গে সঙ্গম এবং পরবর্তী প্রজন্ম তৈরি ফলে আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষের মধ্যেও বিবর্তন হয়েছে। যদিও নিয়ানডার্থাল মানবের জিনের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য আজও সাধারণ মানুষের মধ্যে অল্প পরিমাণে বর্তমান।
এই বিবর্তন সাধারণ মানুষকে আরও শক্তিশালী করেছে। HIV বা একই ধরনের ক্ষতিকারক জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করার শক্তি দিয়েছে। কিন্তু কোনও কিছুই বিনামূল্যে আসে না। বিবর্তনের ক্ষেত্রেও তা সত্যি। সেই কারণেই বিবর্তনের এই ধারায় কিছু মূল্য দিতে হয়েছে মানুষকে। করোনাভাইরাসের মতো কিছু জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা হারিয়েছে আধুনিক মানুষ। এমনই বলছে হালের গবেষণাটি।
গবেষকদলটির অন্যতম সদস্য হুগো জেব্রেগ বলেছেন, বর্তমানে যাঁদের মধ্যে কোভিডের আশঙ্কা বেশি, তাঁদের মধ্যে HIV-র মতো ভাইরাস সংক্রমণের বা AIDS-এর মতো অসুখের আশঙ্কা কম। এর কারণ কারও কারও মধ্যে থেকে যাওয়া নিয়ানডার্থাল মানবের জিন।
এর আগেও নিয়ানডার্থাল মানবের জিনের নানা প্রভাব মানুষের শরীরে টের পাওয়া গিয়েছে। দেখা গিয়েছে, নিয়ানডার্থাল মানবের একটি বিশেষ জিন, যেটিকে CCR5 জিন বলা হয়, সেটি মানুষের রক্ত দ্রুত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষের কেটে গেলে রক্ত জমাট বাঁধতে অনেক দেরি হত। ক্রমে ক্রমে নিয়ানডার্থাল মানবের জিন তাদের শরীরে মেশায়, রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াটিও দ্রুত হয়।
নানা রকমভাবে নিয়ানডার্থাল মানবের জিন আধুনিক মানুষের রূপটির পূর্ণতা পেতে সাহায্য করেছে। যত দিন যাচ্ছে গবেষণায় তত নতুন দিক উঠে আসছে।