কমবয়সিদের মধ্যে অনেকেই হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হচ্ছেন। এর সঙ্গে করোনা টিকার সম্পর্ক থাকতে পারে বলে বহু দিন ধরেই নানা তত্ত্ব বাতাসে ঘুরছে। কিন্তু আদৌ কি এগুলির কোনও ভিত্তি আছে? বিষয়টি এতই স্পর্শকাতর, এবার এটি নিয়ে তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর তরফে, এমনই জানানো হয়েছে।
কিন্তু বিষয়টির মধ্যে কোনও সংযোগ থাকতে পারে কি? হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের কী মত? কী ভাবছেন তাঁরা? এ প্রসঙ্গে কলকাতার অন্যতম খ্যাতনামা চিকিৎসক সরোজ মণ্ডলকে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি স্পষ্টই বলেন, টিকার কারণে হৃদরোগ হচ্ছে— এমন কোনও তথ্য বা প্রত্যক্ষ প্রমাণ তাঁদের কাছে আসেনি। তবে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ নিজেদের মতো করে বিষয়টি নিয়ে যে রিপোর্ট তৈরি করছে, তা লাভের হবে বলেও মনে করছেন তিনি।
চিকিৎসকের মতে, দু’টি জিনিস মনে রাখা উচিত। প্রথমত, হৃদরোগের ক্ষেত্রে করোনার টিকার ভূমিকা আদৌ আছে নাকি নেই, তা পরীক্ষাসাপেক্ষ। কিন্তু করোনার ভূমিকা আছে, তা মোটামুটি প্রমাণিত। তাঁর বক্তব্য, হার্ট অ্যাটাকের জন্য যে যে রিসেপটরগুলোর হৃদযন্ত্রে পৌঁছোতে হয়, তার মধ্যে কিছু কিছু করোনার কারণেও পৌঁছোয়। ফলে করোনা যে হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই।
পাশাপাশি তাঁর মত, ‘পোস্ট কোভিড অ্যানালিসিস’ করাটাও খুবই দরকারি। সেক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, কোভিড সংক্রমণ থেকে অনেকের শরীরেই এমন কিছু বদল এসেছে, যা হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। কোভিড আক্রান্ত হওয়াক কয়েক মাস পর থেকে সেই সব লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে বলেও মত তাঁর।
সেক্ষেত্রে কমবয়সিদের মধ্যে হৃদরোগের পরিমাণ বাড়ছে— এর কি কোনও কারণ রয়েছে? চিকিৎসক সরোজ মণ্ডল বলছেন, এর সঙ্গে করোনা বা করোনার টিকার সম্পর্ক আছে, এটিও ধরে নেওয়া মুশকিল। গত ২০ বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে, উত্তরোত্তর কমবয়সিদের মধ্যে হৃদরোগের পরিমাণ বাড়ছে। তাঁর কথায়, ‘মানসিক চাপ, উচ্চাশা, শরীরচর্চার অভাব, এক জায়গায় বসে কাজের পরিমাণ যত বাড়বে, হার্ট অ্যাটাকের পরিমাণ তত বাড়বে। তার সঙ্গে রয়েছে খাদ্যাভাস, জিনগত গড়নের মতো নানা বিষয়।’
(আরও পড়ুন: করোনা টিকার জেরে হার্ট-অ্যাটাক হয়েছে কমবয়সিদের? শীঘ্রই রিপোর্ট প্রকাশ করবে ICMR)
তাহলে কি করোনা টিকার সঙ্গে হার্ট অ্যাটাকের কোনও সম্পর্ক থাকার সম্ভাবনা নেই? চিকিৎসক বলছেন, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এ রিপোর্ট প্রকাশ্যে এলে এই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। তাঁর কথায়, ‘এখনও পর্যন্ত ইংল্যান্ডে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি, যেখানে চিকিৎসকরা পরীক্ষার পরে দেখেছিলেন, হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের সঙ্গে টিকার সংযোগ ছিল। কিন্তু এই ঘটনা নিয়ে বিষদে জানা নেই। এবং এমন আর কোনও উদাহরণ কানে আসেনি।’
সব মিলিয়ে এখনই এই বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এ রিপোর্ট এলে এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে বলে বিশ্বাস।