দিল্লির পেডিয়াট্রিক এন্ডোক্রিনোলজিস্ট বৈশাখী রাস্তোগি বলছেন, কোভিড সময়কালের আগে, নির্দিষ্ট বয়সের আগে মহিলাদের বয়ঃসন্ধিজনিত বিভিন্ন শারীরিক পরিবর্তন সচরাচর দেখা যেত না, বা দেখা গেলেও তা 'আনকমন' হিসাবে পরিগণিত হত। তবে কোভিডকালের পর থেকে মহিলাদের স্বাস্থ্যের দিক থেকে একাধিক জটিলতার সমস্যা নিয়ে অনেকেই দ্বারস্থ হচ্ছেন চিকিৎসকের। কোভিডযুগে ক্রমেই বাড়ছে মহিলাদের নানান ধরনের সমস্যা।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
উল্লেখ্য, মেয়েদের ক্ষেত্রে ৮ বছরে বয়ঃসন্ধির সময়কালকে পরিগণিত করা হয়, আর ছেলেদের ক্ষেত্রে তা ৯ বছর। তবে বহু সময় এই বয়সের হেরফের হতে পারে পারিবারিক মেডিক্যালগত কোনও ইতিহাস, বা জেনেটিক সমস্যা সহ একাধিক কারণে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, ভারত সহ গোটা বিশ্বে দেখা যাচ্ছে কোভিডের সময়কালে খুব অল্প বয়সেই আসছে বয়ঃসন্ধি। বহু ক্ষেত্রে শিশুকন্যার ৫ বছর বয়সে স্তনের গঠন দেখা যাচ্ছে, অনেকের ৭ বছর বয়সেই আসছে পিরিয়ড। এমন ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। উল্লেখ্য, সন্তানের মধ্যে এমন পরিবর্তন খুব অল্প বয়সে দেখে বহু মা চমকে উঠছেন। কন্যা সন্তানের সঙ্গে যে বয়সে একজন মা পিরিয়ড বা ঋতুকাল নিয়ে কথা বলার কথা ভেবে থাকেন, তার বহু আগেই এই সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হচ্ছে মাকে। স্বভাবতই এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের কাছে দৌড়চ্ছেন অনেকেই।
সমস্যায় পড়ছেন বহু মা!
খুব অল্প বয়সে কন্যা সন্তানকে পিরিয়ড বা তার সম্মন্ধীয় বিষয় বুঝিয়ে তুলতে বহু মা বা কন্যা সন্তানটির পরিবার বিপাকে পড়ছে। বহু শিশুই স্কুল যেতে অস্বস্তি বোধ করছে এমন পরিস্থিতিতে। বহু কন্যা সন্তান প্রাথমিকভাবে ভয় বা অস্বস্তি, লজ্জার শিকার হয়ে পড়ছে। ফলে স্বাস্থ্যগত দিক থেকে একাধিক জটিলতা তৈরি হচ্ছে। ২০২১ সালে একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ইতালির বহু পেডিয়াট্রিক সেন্টারে ৩২৮ জন কন্যা শিশুর আগাম বয়ঃসন্ধি শুরু হয়েছে, যেখানে ২০১৯ সালে ওই সম পরিমাণ সেন্টারে ১৪০ জন কন্যা শিশুর মধ্যে এই লক্ষণ দেখা গিয়েছিল। দেখা যাচ্ছে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে আগাম বয়ঃসন্ধির ঘটনা বাড়ছে। মার্কিনি চিকিৎসক আদিয়া স্প্রিংস ফ্র্যাঙ্কলিন বলছেন, লকডাউনের পর বহু শিশুকন্যার মধ্যে তিনি পিরিয়ড অল্প বয়সেই আসতে দেখেছেন। তিনি বলছেন, 'মহিলাদের ব্রেস্ট বাড আসার সময় ১০ থেতে ১১ বছর বয়স। তার ২ বছর পর আসে পিরিয়ড। আর সেচা স্বাভাবিক প্রসেস।' তিনি বলছেন, 'অতিমারীর স্ট্রেস শিশুকন্যাদের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলছে। সামাজিক ও আবেগের দিক থেকে তারা যদিও এখনও শিশু।' দিল্লির চিকিৎসক বৈশাখী রস্তোগীও মনে করেন যে, অতিমারীর সঙ্গে আগাম বয়ঃসন্ধির সম্পর্ক রয়েছে। অস্বাস্থ্যকর খাওয়া দাওয়া , ও প্রবল পরিমাণে ইলেকট্রনিক গ্যাজেট ব্যবহারও লকডাউনের সময় এই সমস্যাকে তরান্বিত করেছে। এছাড়াও লকডাউনে কম ব্যায়াম, বা শারীরিক কসরত সমস্যা আরও বাড়িয়েছে।
গবেষণা যা বলছে…
পরিসংখ্যান বলছে, আগাম বয়ঃসন্ধি প্রতি ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার শিশুর মধ্যে একজনের হয়ে থাকে। যা কোভিডকালের আগে পর্যন্ত অত্যন্ত বিরল ঘটনা ছিল। তবে কোভিডসময়কালে তা বাড়ছে। চিকিৎসকদের মতে এই সমস্যার ৯০ শতাংশ ভুক্তভোগী মহিলা। বহু ক্ষেত্রেই এমন বিরল ঘটনা দেখলে চিকিৎসকরা অ্যাবডোমিনাল আলট্রাসাউন্ড বা এমনআরআইয়ের পথে হাঁটছেন। চিকিৎসক অলোক সারদেশায়ী বলছেন, গত দশকের থেকে এই দশকের শুরুতেই এমন বিরল ঘটনাগুলি বেড়েই চলেছে। এর কারণ হিসাবে তিনি পারিপার্শ্বিক আবহাওয়া ও পরিস্থিতিকে দায়ী করছেন। বলা হচ্ছে, লকডাউনের ফলে এন্ডোক্রাইন ডিসরাপ্টিং ক্যামিক্যালের দিকে ঝুঁকছে বহু শিশু। যা ওবেসিটি সহ একাধিক সমস্যাকে শিশুর মধ্যে জন্ম দিচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এই ধরনের সমস্যা ইডিওপ্যাথিক হিসাবে গণ্য করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক এক তুরস্কের গবেষণা বলছে, অল্প বয়সে বসঃসন্ধিগত সমস্যা ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের মার্চের মধ্যের সময়কালে হু হু করে বাড়তে দেখা গিয়েছে। আর শিশুকন্যারাই এর সবচেয়ে বেশি শিকার।২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে শিশুকন্যারা আগাম বয়ঃসন্ধি সমস্যায় রয়েছে, তারা আত্মমর্যাদার সমস্যায় রয়েছে,তাদের নেতিবাচক ভাবনা অনেকটাই বেশি তুলনায় যাদের নির্দিষ্ট সময়ে বসঃসন্ধি এসেছে তারা অনেকটাই স্বাভাবিক।
উল্লেখ্য, কোভিডকালে দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে মহিলা স্বাস্থ্য অনেককেই উদ্বেগে রেখেছে। মহিলাদের স্বাস্থ্যের ধারায় নানান ধরনের পরিবর্তন দেখা গিয়েছে এই সময়কালে। চিকিৎসকরা বলছেন, মনের বিভিন্ন সংস্কার মুছে ফেলে এই সমস্যা সমাধানে চিকিৎসাবিজ্ঞানের সহায়তা নেওয়া জরুরি।