আমি এক বেসরকারি কলেজে পড়াই। আমার বয়স ৩২ বছর। সাড়ে চার বছর আগে আমার বিয়ে হয়। বর তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত। আমাদের ৩ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে।
এমনিতে আমাদের সুখের পরিবার। বরের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো। কাজের সূত্রে বরকে মাঝে মাঝে অন্য শহরে যেতে হয়। এমনকী কখনও কখনও মাস খানেকের জন্য বিদেশেও যেতে হয়। কিন্তু সেটি আমাদের ক্ষেত্রে কখনও সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়নি। এখনও পর্যন্ত আমার বরের সঙ্গে আমার শারীরিক সম্পর্কের জায়গাটিও পুরোপুরি স্বাভাবিক।
কিন্তু সমস্যা দেখা দিল কয়েক মাস আগে। আমার কলেজের এক ছাত্রর সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা বাড়তে শুরু করে সেই সময় থেকে। ছেলেটিকে আমার অনেক আগে থেকেই ভালো লাগত। কারণ আমার বিষয়ের প্রতি ওর আগ্রহ, আর ভাবনাচিন্তা দেখে ওকে ভালো লেগেছিল। তবে সেটি একেবারেই বৌদ্ধিক স্তরের ভালোলাগা। কিন্তু বিষয়টি অন্য মাত্রা নিতে শুরু করল কয়েক মাস আগে।
ছেলেটি এখন তৃতীয় বর্ষে পাঠরত। হালে অনলাইনের বদলে অফলাইনে ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় সব ছাত্রছাত্রীরাই কলেজে আসছে। ফলে দেখাসাক্ষাৎ বাড়ছে।
এরই মধ্যে ছেলেটি অল্প অল্প করে আমার ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিল। মানে, বেশি বেশি করে কথা বলত। ক্লাসের শেষে আমার সঙ্গে এসে দেখা করে যেত। সেই সময়ে পড়াশোনা নিয়েই কথা বলত।
কিন্তু বিষয়টি আস্তে আস্তে অন্য মাত্রা পেতে শুরু করে। বিশেষ করে এক দিন আমায় একটি বই ফেরত দেওয়ার সময় ওর আঙুল আমার হাত অল্প করে ছুঁয়ে যায়। সেটি সচেতনভাবে করা কি না, আমি জানি না।
এর পরে আমরা ফোনে কথা বলা শুরু করি। মেসেজেও কথা চলতে থাকে। মাসখানেক আগে, সেই সময়ে আমার বর বাড়িতে ছিল না, আমার সেই ছাত্র বাড়িতে আসে। তখন বাড়িতে আমার মেয়েও ছিল না। সেই সময়ে আমরা শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হই।
এখন নিজের প্রচণ্ড দুশ্চিন্তা হচ্ছে। ছেলেটিও অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে। ও কথা বলতে চায়। আমি এড়িয়ে যাচ্ছি। দেখে মনে হচ্ছে, ও অবসাদে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। এক্ষেত্রে কী করা উচিত?
বিশেষজ্ঞের জবাব:
সম্পর্কবিদ মৌমিতা গুপ্ত এই বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য:
আপনি যে কাজটি করেছেন, সেটিকে ভুল বলে ধরে নেওয়াই ভালো। বৈবাহিক বা প্রেমের সম্পর্কে থেকে অন্য কারও সঙ্গে এমন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া কাঙ্ক্ষিত নয়। কিন্তু তবু কখনও কখনও মানুষের ভুল হয়েই যায়। আপনারও তাই হয়েছে। এবার এই ভুল থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এবং সেটিও অন্যের ক্ষতি না করেই।
প্রথমত, আপনার ছাত্রের সঙ্গে কথা বলুন। তাঁর যাতে কোনও মানসিক সমস্যা না হয়, সেদিকটাই নজর দিন। বোঝান, এই সম্পর্কে যদি কোনও ভুল হয়ে থাকে, তাহলে সেটি শুধু তাঁর একার নয়, আপনারও। আর তিনি যদি আপনার প্রেমে পড়ে থাকেন, তাহলে আপনাকে হারানোর ভয় তাঁকে পেয়ে বসতে পারে। সেই বিষয়টিও আপনাকেই সামলাতে হবে। তাঁকে বোঝান, প্রেমের ভবিষ্যৎ নেই, কিন্তু আপনাদের বন্ধুত্বের ভবিষ্যৎ থাকতেই পারে। আর তিনি যদি নিজের ক্ষতি করার কথা ভাবেন, তাহলে অবশ্যই তাঁর বাড়ির লোকজন, কলেজের কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসনকে জানাতেই হবে। এক্ষেত্রে চক্ষুলজ্জার ভয় করলে চলবে না। কারণ এটি জীবনমরণের সমস্যা।
দ্বিতীয়ত, সম্ভব হলে বিষয়টি নিয়ে আপনার বরের সঙ্গে কথা বলুন। কথা বলবেন আর কতটা বলবেন না— সেটিও আপনারই হাতে। তবে মনে রাখবেন, কেউ যদি আপনাকে ভালোবাসেন, তাহলে আপনার কোনও কোনও ভুল হয়তো তিনি উপেক্ষা করেই যাবেন।
তৃতীয়ত, একটি কথা আপনার মনে রাখা দরকার। কোনও সম্পর্ক আপনার কাছে দামি হলে, তাকে টিকিয়ে রাখার দায়ও আপনারই। ফলে ভবিষ্যতেও সেই বিষয়ে সতর্ক থাকা ভালো।