আকাশে বাতাসে এখন কেবলই পুজো পুজো গন্ধ। শিউলি ফুল ঝরে পড়ছে ইতিউতি। কাশফুলে চারিদিক ভরে রয়েছে। আকাশে পেঁজা পেঁজা তুলোর মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। সবাই এখন মাকে বরণ করে নেওয়ার জন্য ব্যস্ত। চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা, প্যান্ডেল শেষ করার কাজ। কেউ আবার ইতিমধ্যেই ঠাকুর দেখতেও বেরিয়ে গিয়েছে! হবে নাই বা কেন, উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে তো!
আজ দেবীপক্ষের সূচনা হল। কাল থেকে শুরু হবে নবরাত্রি পালন। পিতৃপক্ষের অবসান ঘটে গিয়েছে। কিন্তু এই মহালয়া দিনটিকে নিয়ে নানান লোকগাঁথা প্রচলিত আছে বাংলায়। আপনি কি জানেন সেগুলো? আসুন দেখে নেওয়া যাক।
পুরাণ মতে মহিষাসুর তার ধ্যান, পূজার মাধ্যমে ব্রহ্মার বর লাভ করেছিলেন। এর সেই বরে তিনি একপ্রকার অমরত্ব পেয়ে গিয়েছিলেন। কোনও পুরুষ তাকে হত্যা করতে পারবে না। তিনি কেবল পরাজিত হতে পারেন এক নারীর কাছেই। আর এই অসুরদের অত্যাচারে যখন দেবলোক ভীত, অতিষ্ট তখন ত্রিদেব একত্রে তৈরি করলেন এক নারী শক্তিকে। সেই মহামায়ায় দেবী দুর্গা রূপে অবতীর্ণ হন। তাঁকে সমস্ত দেব অস্ত্র এবং অলঙ্কার দিয়ে সাজিয়ে তোলেন। দেবী দুর্গা তখন যুদ্ধ করে মহিষাসুরকে বধ করেন। তাই এই উৎসবকে মনে করা হয় খারাপের বিনাশ ঘটিয়ে ভালোর সূচনা হওয়া।
মহালয়ার দিন পূর্বসূরিদের উদ্দেশ্যে জল প্রদান করা হয় যাকে আমরা তর্পণ বলে থাকি। শুধু তাই নয়, এই দিন দেবী দুর্গাকে চক্ষুদান করা হয়ে থাকে। দেবী দুর্গা হচ্ছেন সেই মহান আলয়, যার থেকেই মহালয় কথাটি এসেছে। মহালয়া নিয়ে নানান গল্প আছে, কী দেখে নিন।
পুরাণ অনুযায়ী: এইদিন যদি কোনও মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধ করা হয় তাহলে মনে করা হয় তাঁর আত্মা শান্তি পায় এবং মুক্তিলাভ করে। এছাড়া এদিন তর্পণ করলে পূর্বসূরিরা খুশি হন। জীবনের নানান বাধা বিপত্তি দূর হয়। তাই দেবীপক্ষের শুরুর আগেই পূর্বপুরুষদের জন্য তর্পণ করা উচিত।
মহাভারত অনুযায়ী: স্বর্গে থাকাকালীন কর্ণকে কেবল সোনা এবং মণি রত্ন খেতে দেওয়া হতো কারণ তিনি কখনই তাঁর পিতৃপুরুষকে জল বা খাবার খেতে দেননি। কেবল সোনা দান করেছেন। কারণ তিনি তাঁর পিতৃ পরিচয় জানতেন না। তাঁর মৃত্যুর পর তিনি মর্ত্যে ফেরত আসেন এবং ভুল সংশোধন করেন।
দেবরাজ ইন্দ্রের অনুসারে: যমরাজ দেবরাজ ইন্দ্রকে ১৬ দিনের জন্য মর্ত্যে পাঠিয়েছিলেন তর্পণ করার জন্য। এই ১৬ দিনকে একসঙ্গে বলা হয় পিতৃপক্ষ। তাই এই গোটা সময় ধরেই পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে জল দান করা হয়ে থাকে। এবং কোনও শুভ কাজ হয় না।
রামায়ণ অনুযায়ী: অকালে কোনও দেব বা দেবীর পুজো করতে হলে আগে ইষ্ট দেবতার পুজো এবং প্রয়াত পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করতে হয়। রাম সেটাই করেছিলেন। তিনি রাবণকে বধ করার জন্য দেবী দুর্গার আশীর্বাদ চেয়েছিলেন তাই তিনি অকালে দেবীর আবাহন করেছিলেন বলে এই সময় তিনি তর্পণ করেন। সেই থেকেই এই নিয়ম শুরু হয় বলে মনে করা হয়।