অতিমারি নানা ভাবে আমাদের জীবন পাল্টে দিয়েছে। বদলে গিয়েছে খাওয়াদাওয়ার অভ্যাস, বদলে গিয়েছে কাজের ধরন, বদল গিয়েছে বিনোদনের মাধ্যমগুলোও। এই সব বদল যেমন শরীরের ওপর প্রভাব ফেলেছে, তেমনই প্রভাব ফেলেছে মনের ওপরও। বিশেষ করে কাজের ধরনে বদল মনের ওপর বিরাট প্রভাব ফেলেছে বলে জানাচ্ছেন মনোবিদরা। হালে আমেরিকার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিদ্যা বিভাগের গবেষণায় উঠে এল এমনই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
আমেরিকার আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিদ্যা বিভাগের তরফে একটি সমীক্ষা শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে। সেই সময় থেকেই কাজের ধরন, পড়াশোনার ধরন বদলে যেতে শুরু করে। বহু অফিস, কর্মক্ষেত্রই অনলাইন-নির্ভর হয়ে যায়। তেমন ভাবেই বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও পড়াশোনার পুরোটাই নিয়ে চলে আসে অনলাইনে। এর ফলে বহু মানুষের বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় কমে যায়। বাড়তে থাকে বসে থাকার সময়। আর এটাই মন খারাপ করার বড় কারণ। নিজেদের সমীক্ষা থেকে এমনই বলছেন মনোবিদরা।
‘বসে থাকার বিষয়টা নিয়ে আমরা অধিকাংশ সময়েই মাথা ঘামাই না। বসে আছি তো আছি। তাতে কী বা যায় আসে! এটা কোনও নেশা করার মতো বিষয় নয় যে, সেটা নিয়ে আলাদা করে সজাগ হব বা ভাবব, এর ফলে শরীরের ক্ষতি হচ্ছে। বসে থাকাটা একটা স্বাভাবিক আচরণের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু এটাই মারাত্মক ক্ষতিকারক।’ এমনই বলছেন গবেষক দলের প্রধান জেকব মেয়ার।
সমীক্ষাটি চালানোর জন্য শুধু আমরিকার ৩০০০ মানুষকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও ইউরোপ, আফ্রিকা এবং এশিয়ার বেশ কয়েক জন মানুষের ওপরেও সমীক্ষা চালানো হয়। দেখা গিয়েছে, যাঁদেরই বসে থাকার সময় বেড়ে গিয়েছে, তাঁদের প্রত্যেকের মধ্যে অবসাদের প্রবণতা বেড়েছে। শুধু তাই নয়, তাঁদের মধ্যে অনেকেই উদ্বেগ বা অ্যাংজাইটির সমস্যাতেও ভুগছেন।
গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, বাড়ি থেকে কাজের ফলে অনেকেরই অফিসে যাতায়াতের সময় বেঁচে যাচ্ছে। আগে এই সময়টা হাঁটাহাঁটি করে, রাস্তায় বেরিয়ে কেটে যেত। এখন সেই সময়টাই তাঁরা কাটাচ্ছেন বসে। এর ফলে মানসিক স্বাস্থ্যের তীব্র অবনতি হচ্ছে।
এক্সারসাইজ বা যোগাসন মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। যাঁরা সেগুলো করেন না, তাঁদের সকলের যে মানসিক স্বাস্থ্যের হাল খারাপ হয়, তাও নয়। কিন্তু শুধুমাত্র বসে থাকার ফলেই যে মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা খারাপ হচ্ছে, তা প্রমাণিত নতুন গবেষণাপত্রে।
এই পরিস্থিতি এড়াতে দিনের নির্দিষ্ট সময়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে কিছুটা হাঁটাহাঁটি, অন্যদের সঙ্গে কথা বলার অভ্যাস তৈরি করতে বলছেন মনোবিদরা। মাঠ ফাঁকা থাকলে সেখানে শিশুদের পাঠাতে বলছেন নিয়ম করে।