পশ্চিমবঙ্গে প্রথম ট্রেনের জন্মদিন আর চারদিন পরেই। ১৮৫৪ সালের ১৫ অগস্ট পূর্ব রেলের (তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ে) অধীনে প্রথম ট্রেন ছুটেছিল হাওড়া থেকে হুগলির (চুঁচুড়ার) মধ্যে। আর সেই পরিষেবার জন্য ট্রায়াল রান হয়েছিল ১১ অগস্ট। পূর্ব রেলের তথ্য অনুযায়ী, ট্রায়াল রানে হাওড়া থেকে চুঁচুড়া পৌঁছাতে লেগেছিল ১ ঘণ্টা ৩১ মিনিট (৯১ মিনিট)। তবে ২৩ মাইলের দূরত্ব অতিক্রম করতে যা মোট সময় লেগেছিল, সেটার একটা বড় অংশ অতিক্রান্ত হয়েছিল বিভিন্ন স্টপেজে। যাত্রাপথে মোট তিনটি স্টেশনে (বালি, শ্রীরামপুর এবং চন্দননগর) দাঁড়িয়েছিল সেই ট্রেন। সেই ট্রায়াল রানের পরে ১৫ অগস্ট থেকে পরিষেবা শুরু হয়েছিল। ৯৩ বছর পরে যে দিনে স্বাধীনতা লাভ করে ভারত।
পূর্ব রেলের প্রথম ট্রেনের ট্রায়াল রানের ইতিবৃত্ত
১৮৫৪ সালের ১১ অগস্ট সেই ঐতিহাসিক ট্রায়াল রানের পর তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ের তরফে একটি সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট পেশ করা হয়েছিল। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, সকাল ৯ টা ৩০ মিনিটে হাওড়া থেকে ছেড়েছিল ট্রেন। চুঁচুড়ায় পৌঁছেছিল সকাল ১১ টা ১ মিনিটে। 'রেলওয়ের টাইম টেবিল' অনুযায়ী, চুঁচুড়া স্টেশনকেই ‘হুগলি’ হিসেবে দেখানো হয়েছিল।
পূর্ব রেলের ঐতিহাসিক দলিল অনুযায়ী, যাত্রাপথে বালি, শ্রীরামপুর এবং চন্দননগর স্টেশনে দাঁড়িয়েছিল। হাওড়া থেকে বালি পর্যন্ত ৫.৫ মাইল পথ অতিক্রম করতে লেগেছিল ১১ মিনিট। বালি থেকে শ্রীরামপুরে যেতে ১৪ মিনিট লেগেছিল। যে পথের দূরত্ব ছিল ৬.৫ মাইল। তারপর শ্রীরামপুর থেকে চন্দননগর যেতে লেগেছিল ২০ মিনিট। দূরত্ব ছিল ৮.৫ মাইল। আর চন্দননগর থেকে চুঁচুড়ায় পৌঁছাতে আট মিনিট লেগেছিল। যে পথের দূরত্ব ছিল তিন মাইল।
ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, হাওড়া থেকে চুঁচুড়ার মোট দূরত্ব ছিল ২৩ মাইলের মতো। সেই অতিক্রম করতে ৫৩ মিনিট লেগেছিল। ট্রেনের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৬.৩২ মাইল। তবে বিভিন্ন স্টেশনে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়েছিল সেই ট্রেন। বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড়িয়েই ৩৮ মিনিট কেটে গিয়েছিল। সার্বিকভাবে ৯১ মিনিটে হাওড়া থেকে চুঁচুড়ায় পৌঁছেছিল।
ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ‘পুরো যাত্রাপথ মসৃণ ছিল। তবে চিফ লোকোমেটিভ সুপারিটেনডেন্ট মিস্টার হজসন বলেছেন যে কয়েকদিন পর থেকে আরও (মসৃণভাবে) চলবে ট্রেন। লোকোমেটিভ সুপারিটেনডেন্ট এবং তাঁর কর্মীরা অত্যন্ত নম্র ও ভদ্র ছিলেন।’ সেইসঙ্গে ওই রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ‘এখন যে ট্রেন ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা সাময়িকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। তবে ট্রেনে পর্যাপ্ত জায়গা ছিল। আরামদায়কও ছিল।’
পুরো যাত্রাপথ কেমন ছিল এবং ট্রেনের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়েও রিপোর্ট জমা পড়েছিল। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ‘একেবারে সেরা (অভিজ্ঞতা) ছিল। ভারতের সমস্ত পরিবহণের মাধ্যমকে ছাপিয়ে যাবে পরিবহণের এই নয়া মাধ্যম। সবকিছু বিবেচনা করে বলা যায় যে এটা সবথেকে সস্তা পরিবহণের মাধ্যম। আদতে এটা যে কোনও মাধ্যমের থেকে সস্তা।’