রণবীর ভট্টাচার্য
আজ বিশ্ব রক্তদান দিবস। সারা পৃথিবীর মতো ভারতেও আজ বিভিন্ন জায়গায় রক্তদান দিবস পালিত হয়েছে। প্রচুর মানুষ স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসেছেন এই মহৎ কাজে। অনেকের প্রথম বার, অনেকের আবার ইতিমধ্যেই কয়েকবার দেওয়া হয়ে গিয়েছে। এই বছর এই বিশেষ দিনের থিম হল ‘Donating blood is an act of solidarity’- অর্থাৎ রক্তদানের মধ্যে দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়। সমাজে প্রচুর মানুষ রয়েছেন যারা বিরল রোগে আক্রান্ত এবং নিয়মিত রক্তের প্রয়োজন। কিছু কিছু রক্তের গ্রুপ আবার বিরলতম বটে। যেমন গোল্ডেন গ্রুপ, এবি নেগেটিভ, বোম্বাই ব্লাড গ্রুপ। যেই সমস্ত মানুষের এই ধরনের রক্তের গ্রুপ থাকে, তাদের কোন ধরনের অস্ত্রোপচার বা আপৎকালীন পরিস্থিতিতে রক্তের জোগানের আগাম ব্যবস্থা করে রাখা খুব দরকার।
বাংলার প্রত্যেক পাড়ার ক্লাবের সাথেই জড়িয়ে রয়েছে রক্তদানের প্রয়াস। বিপদে আপদে ছুটে পৌঁছে যাওয়া অনেক ছেলেমেয়েই দুইবার ভাবেন না রক্ত দিতে গিয়ে। তবে সবটাই যে দুর্দান্ত সুন্দর এমন নয়! অনেক মানুষই স্রেফ কি উপহার দেওয়া হচ্ছে দেখে রক্তদান উৎসবে যোগ দিতে যান, যা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। চরম দারিদ্রের মধ্যে অর্থের বিনিময়ে রক্ত দেওয়ার উদাহরণ দেখা গিয়েছে অনেক জায়গায়, যা সত্যিই খুব মর্মান্তিক। তবে রক্ত দেওয়া নিয়ে অনেকের কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। রক্ত দিলে রক্ত কোন সময়েই কমে যায় না, বরং তৈরি হয়। কোন মহিলা রজস্বলা অবস্থাতেই রক্ত দিতে পারেন। তবে যারা সদ্য সদ্য ট্যাটু করেছেন, তাদের ক্ষেত্রে বাধানিষেধ রয়েছে। অনেকটা এই কারণেই সকলের প্রিয় ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো কোন ট্যাটু করান না শরীরে। তবে রোজ রোজ রক্তদান করা যায় না। ডাক্তারি নিয়মকানুন মেনে চলা দরকার এই ক্ষেত্রে। বেশিরভাগ রক্তদান উৎসবেই ডাক্তাররা থাকেন রক্তচাপ ও পালস স্বাভাবিক আছে কি না দেখার জন্য।
কোভিডের সময়ে রক্তের জোগান নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। লকডাউনের মধ্যে স্বাভাবিক ভাবেই রক্তদান উৎসবের আয়োজন করা যায়নি। অনেক মুমূর্ষ রোগীর রক্তের বা প্লেটলেটের প্রয়োজন ছিল সেই সময়। দীর্ঘ দুই বছর ধরে ধাক্কা খেয়েছে এই প্রয়াস। তবে আশার কথা মানুষ এখন আবার সচেতনতার মধ্যেই পাড়ায় পাড়ায় শুরু করেছেন রক্তদান উৎসব। তাই আজকের এই মহান দিনকে মাথায় রেখে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অভিপ্রায় নিয়ে সমাজের সকল মানুষকে রক্তদানে এগিয়ে আসতে হবে। আর যাই হোক, ১৮ বছর হলে শুধু ভোট নয়, রক্তদান করা যায়!