আধুনিক জীবনযাপনের সঙ্গে অনেকটাই জড়িয়ে একাকিত্ব। ২০২১ সালের পরিসংখ্যান বলছে, আত্মহননকারীদের ৯ শতাংশের বয়স ৬০-এর বেশি। এই বয়সের সঙ্গেই বেশি করে জড়িয়ে একাকীত্ব শব্দটা। আত্মহননের পিছনে কতটা দায়ী এই পরিস্থিতি? হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে এ নিয়ে বিশদে জানালেন বিশিষ্ট মনোবিদ ডক্টর পুষ্পা মিশ্র।
‘এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েরা বাইরে থাকে। মেয়েদের বিয়ে হলে শ্বশুর বাড়ি। ছেলেদের বিয়ে হলে আলাদা বাড়ি। এর ফলে একাকিত্ব। তা থেকে ভীষণ অবসাদ। দম্পতির মধ্যে একজন মারা গেলে এটি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। অবসাদই আত্মহননের দিকে ঠেলে দেয়।’ একজন মারা গেলে কীভাবে অসহায়তা বেড়ে যায় তাও জানালেন তিনি। ‘দম্পতির মধ্যে মহিলাটি মারা গেলে পুরুষটি ভীষণ অসহায় বোধ করেন। রান্নাবান্না বা রোজকার কাজ করতে তিনি হয়তো অভ্যস্ত নন। ফলে দিশাহারা হয়ে পড়েন। অন্যদিকে পুরুষটি মারা গেলেও একই ভাবে সমস্যায় পড়েন মহিলাটি। এই সমস্যা বাড়িয়ে দেয় একাকীত্ব ও অবসাদ।’
একা না থাকলেও অনেকে পরিবারে প্রত্যাখ্যাত (রিজেক্টেড) হন। ‘হয়তো ছেলে-বউমা, নাতি-নাতনি এক বাড়িতেই রয়েছে। কিন্তু খাবার দেওয়া ছাড়া কোনও সম্পর্ক নেই। বয়স্ক ব্যক্তিকে সংসার থেকে যেন বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। এ কারণেও প্রচণ্ড অবসাদ ডুবে যায় মানুষ।’
অন্যদিকে আর্থিক সমস্যাও বড় কারণ বলে জানান মনোবিদ পুষ্পা মিশ্র। ভারতে অল্পবয়সি পুরুষ ও বয়স্কদের অনেকেই দারিদ্রের কারণে আত্মহননের সিদ্ধান্ত নেন। ‘ভারতে আত্মহননের পরিসংখ্যানে এটা ভীষণ প্রকট। পুরুষের পাশাপাশি মহিলাদের ক্ষেত্রেও এটা সত্যি। বয়স হলে রোগের হার বাড়ে। বাড়ে চিকিৎসার খরচ। একাকীত্বের সঙ্গে এ বড় উদ্বেগ হয়ে দাঁড়ায়।’
আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় এলে কোন কোন লক্ষণ দেখা দিতে পারে? অভিজ্ঞ মনোবিদের কথায়, ‘ ভুক্তভোগী এই সময় লোকের সঙ্গে কথা বলেন না, কাজকর্মে রুচি হারিয়ে ফেলেন, রাতে কম বা অনেক বেশি ঘুমোন, খাওয়ার ইচ্ছে থাকে না, আবার অনেক সময় খাওয়াদাওয়া অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে যায়। ছয় সপ্তাহের বেশি লক্ষণগুলি থাকলে তাকে ক্লিনিকাল ডিপ্রেশন বলা হয়। তখন অবশ্যই মানসিক স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। মূলত, আত্মহননের আগে ভীষণ অসহায় ও হতাশ বোধ করেন একজন। দুরারোগ্য ব্যাধি এই বয়সে বেশি হয়। সেই রোগের কারণেও এমন চিন্তা আসতে পারে।’
কথায় কথায় উঠল পরিবারের ভূমিকা। লক্ষণগুলি দেখা গেলে কী করণীয় বাড়ির সদস্যদের? পুষ্পা মিশ্র জানালেন, ‘প্রথমেই কথা বলার চেষ্টা করতে হবে। বাইরে ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে। তাঁকে সংসারের একটা অংশ করে নিতে হবে। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একটু কথা বলে নিলে তিনি প্রত্যাখ্যাত বোধ (রিজেক্টেড ফিল) করেন না। এর পাশাপাশি নাতি-নাতনিকে ছোটখাটো পড়াশোনা শেখানোর দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। অনেক সময় দীর্ঘদিন কথা না-বলার কারণে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। যা বড় আকার নিলে ডিমেনশিয়া হয়। সেক্ষেত্রে পড়াশোনা শেখানোর দায়িত্ব তাঁকে না দেওয়াই ভালো।’
বাড়ির সদস্যরা এগুলি যদি ঠিকমতো না করতে পারেন, তবে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়াই শ্রেয় বলে জানালেন মনোবিদ। ‘তিনি ওষুধ দেবেন। নানা কাজকর্ম করতে বলবেন।’ এই বয়সে সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিংয়ের পাশাপাশি ওষুধ দিয়ে চিকিৎসারও দরকার রয়েছে বলে জানান তিনি।
সুইসাইড প্রিভেনশনস ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন: 8047096367
লাইফলাইন ফাউন্ডেশন: 9088030303
আইকল: 9152987821
ওয়ানলাইফ ফাউন্ডেশন: 7893078930
স্যামারিটানস: 8422984528
শুশ্রূষা কাউন্সেলিং: 9422627571
মন টকস: 8686139139
স্নেহ ফাউন্ডেশন: +9144-24640050