রাজনৈতিক অস্থিরতা চরমে। কয়েকদিন আগেই সেনার ওপর হামলা চালিয়েছিল ইমরান খানের সমর্থকরা। এই সবের মাঝেই অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। এই অবস্থায় উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য ইউরোপে পাড়ি দিতে গিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন প্রায় ৩০০ পাক নাগরিক। দুর্ঘটনাটি ঘটেছে গ্রিস উপকূলের কাছে। অবৈধ ভাবে তুরস্ক হয়ে সমুদ্রপথে অনেকেই ইউরোপে প্রবেশ করার চেষ্টা করে থাকে। আফ্রিকা, এশিয়ার বহু মানুষ এভাবে নতুন জীবনের খোঁজে ঝুঁকি নেন। এর মধ্যে অনেকেই ডুবে যান অন্ধকারে। উত্তাল সমুদ্র তাদের প্রাণ কেড়ে নেয়। এই একই ঘটনা ঘটল এই ৩০০ পাকিস্তানির সঙ্গে।
জানা গিয়েছে, গত বুধবার গ্রিসের উপকূলের কাছেই একটি ট্রলার ডুবে যায় সমুদ্রে। সেই ট্রলারডুবিতেই মৃত্যু হয় প্রায় ৩০০ জান পাকিস্তানির। এই আবহে পাচার চক্রের হদিশ পেতে এবং ঘটনার তদন্ত করতে ৪ সদস্যের দল গঠন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে ১০ পাচারকারীকে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পাক তরুণদের ভাল চাকরির লোভ দেখিয়ে বেআইনিভাবে ইউরোপে পাচারের চেষ্টা চালিয়েছিল তারা। এই আবহে পাকিস্তানে শোক দিবস পালনের ঘোষণা করা হয়।
রিপোর্ট অনুযায়ী, সেই ট্রলারে পাকিস্তান, সিরিয়া, মিশর এবং ফিলিস্তিনের প্রায় ৭৫০ উদ্বাস্তু ছিল। তারা ইউরোপে প্রবেশ করার চেষ্টা করছিল। এই আবহে গত বুধবার গ্রিস উপকূলের কাছে ট্রলারটি ডুবে যায়। সেই সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্ধারকারী দল ১২ জন পাক নাগরিককে জীবিত উদ্ধার করতে সমর্থ হয়। তখনও সেই ট্রলারডুবি নিয়ে বিশদে জানা যাচ্ছিল না। তবে এবার জানা গেল যে সেই ট্রলারডুবির ঘটনায় অন্তত পক্ষে ৩০০ জন পাকিস্তানির মৃত্যু হয়েছে। এদিকে পাক প্রশাসনের তরফে জানা গিয়েছে, মৃতদের অধিকাংশই পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বাসিন্দা। এদিকে পাকিস্তানি তরুণদের এই মর্মান্তিক পরিণতির কারণ সেদেশের অর্থনীতির বেহাল দশা। চাকরি নেই, খাবার নেই, টাকা নেই। এই আবহে রোজগারের তাগিদে দেশ ছাড়ছেন তারা।
গত ২০২১-২২ অর্থবর্ষে পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ছিল বছরে ১৬১৩.৮ ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭১.৫৩ টাকা। এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে তা ১১ শতাংশ কমে গিয়েছে। এই আবহে গতবছর পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় গিয়ে ঠেকে ১৩৯৯.১ ডলারে। যা ভারতীয় মুদ্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৪৮.১০ টাকা। এদিকে গত একবছরে সর্বকালীন রেকর্ড ভেঙে পাকিস্তানের মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে ৩৭.৯৭ শতাংশ। সেদেশে রেশনের চাল পাওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি লাগে। তাতে পদপিষ্ট হয়ে মানুষ মারা যায়। তাই বাধ্য হয়েই উজ্জ্বল ভবিষ্যতের খোঁজে দেশ ছাড়ছেন তরুণরা। তবে তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই বেআইনি পথে ইউরোপ প্রবেশের চেষ্টা করছেন। গ্রিস উপকূলের এই দুর্ঘটনা এক জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ।