মাসের শুরুতে মাসকাবারির খাতায় যাঁদের নিত্য কাটাকুটি চলে, আর মাসের শেষে পকেটে কী পড়ে থাকল, তা নিয়ে যাঁদের উদ্বেগ কাটেই না, সেই মধ্যবিত্তরা কী পেলেন নির্মলা সীতারামনের ২০২২ বাজেট থেকে? এমনকি দেশের দরিদ্র শ্রেণির মানুষের জন্যই বা কী থাকল এই বাজেটে? এই নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠেছে গত ২৪ ঘণ্টায়। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের দাবি, সামাজিক ক্ষেত্র, কল্যাণমূলক প্রকল্প ও স্বাস্থ্য খাতে খানিকটা উদাসীনতার বার্তা বহন করছে এই বাজেট।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২২-২৩ আর্থিক বছরের দিকে তাকিয়ে যে বাজেট পেশ করা হয়েছে, তাতে প্রবলভাবে ফোকাসে থেকেছে আর্থিক বৃদ্ধি। ফলে মূলধন ব্যয়ের ওপর এসেছে জোর। তাঁদের দাবি, স্বাস্থ্যখাতে খুব সামান্য আর্থিক বরাদ্দ দেখা গেলেও, কোভিডের অতিমারীর মধ্যে পরিকাঠামো উন্নয়নের দিকে সেভাবে জোর দেখা যায়নি। যে পরিকাঠামো জনস্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। উল্লেখ্য, মধ্যবিত্ত ও বিপিএল তালিকার নিচে থাকা বহু মানুষ কোভিড পরিস্থিতিতে টেস্টিং থেকে শুরু করে চিকিৎসার ক্ষেত্রে মুখাপেক্ষী হয়েছেন উন্নত পরিষেবার, তথা কম খরচে পরিষেবার। সেই দিক থেকে এই বাজেট কতটা তাৎপর্যপূর্ণ তা নিয়ে নানা তর্ক-বিতর্ক থেকে যাচ্ছে। অর্থনীতির সমীকরণ অনুযায়ী, বিনিয়োগেই বৃদ্ধির তত্ত্ব নিয়ে, মূলধন খাতে ব্যয় ৩৫ শতাংশ বাড়িয়ে তা ৭.৯ লাখ কোটি টাকা করা হয়েছে।
আর্থিক বিশ্লেষকদের দাবি, এই বাজেটে অনেকটাই বেশি জোর দেওয়া হয়েছে সরবরাহ ভিত্তিক অর্থনীতিতে। ফলে মধ্যবিত্তের আয়বৃদ্ধি খানিকটা উপেক্ষিত হয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। উল্লেখ্য, কোভিড পরিস্থিতিতে চাকরি হারিয়ে বহু মধ্যবিত্ত পরিবারেই নেমেছে বড় আর্থিক সংকট। বেকারত্বের কষ্ট মাথাচাড়া দিয়েছে বহু পরিবারে। সেই জায়গা থেকে আগামী ৫ বছরে ৬০ লক্ষের কর্মসংস্থানের বার্তা দিয়ে নয়া প্রস্তাব ঘোষণা করেছেন নির্মলা সীতারমন। তবে প্রশ্ন, তাতে কি সুরাহা হতে পারে বর্তমান পরিস্থিতির? পিএম কিষাণ প্রকল্পের আওতায় সামাজিক পেনশন বা নগদ ট্রান্সফারের ক্ষেত্রেও কোনও বড় ঘোষণা আসেনি। খাবারে ভর্তুকি কমানো হয়েছে ৭৯০০০ কোটি টাকার। সারে ভর্তুকি ৩৪৯০০ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। বাজেটে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যে ৮৬২০০.৭ কোটির কথা বলা হয়েছে তা বার্ষিক হিসাবে ০.২ শতাংশ বেশি। সেভাবে দেখতে গেলে স্বাস্থ্য খাতে বড় কোনও ঘোষণা আসেনি।
দিল্লির ইন্ডিয়ান স্ট্যাটেস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের অর্থনীতিবিদ গুরুবচন সিং বলছেন, 'পরিকাঠামোতে ব্যয় বাড়িয়েও একটি সমস্যা থেকে গিয়েছে, তা হল ক্যাপিটাল ইনটেনসিভ। যার থেকেই শ্রমিক সমস্যা দানা বাঁধে, কারণ শেষ পর্যন্ত কর্মসংস্থানই হল আসল ইস্যু।' উল্লেখ্য, ক্যাপিটাল ইনটেনসিভের অর্থ হল,রেলওয়ে বা যন্ত্রাংশ তৈরি, পণ্য তৈরির মতো ক্ষেত্রে পরিকাঠামোর জন্য পুঁজি। অর্থনীতিবিদের মতে, কর্মসংস্থানের জন্য আরও বেশি শ্রমিককেন্দ্রিক পুঁজি প্রয়োজন। আর্থিক বিশেষজ্ঞ এম গোবিন্দ রাও বলছেন, রাজ্যগুলিকে সুদ বিহীন ১ লাখ কোটি টাকার ঋণ ও রেল , রাস্তা টেলিকম ক্ষেত্র ছাড়া বিশেষভাবে সেরকম ব্যয় দেখা যায়নি বাজেটে। তিনি বলছেন কেন্দ্রের আওতাধীন প্রকল্প, 'হর নল জল', 'পিএম আওয়াস যোজনা'র মতো ক্ষেত্রে ব্যয় হল আসলে রাজস্ব ব্যায়, মূলধনী ব্যয় নয়। এদিকে, অর্থনীতিবিদ গুরুবচন সিংয়ের মতে, পিএলআই স্কিমের আওতায় যা ঘোষিত হয়েছে, তা বৃহত্তর কর্পোরেট সেক্টরকে সুবিধার রাস্তায় নিয়ে যাওয়া। যার হাত ধরে কর্মসংস্থা নের সুযোগ বাড়তে পারে, বলে ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।