তিব্বত দখলের এত দশক পরও তিব্বতিদের পুরোপুরি বাগে আনতে পারেনি চিন। তার অন্যতম কারণ ভারতের ধর্মশলায় বসবাসরক ধর্মীয় গুরু দলাই লামা। এই আবহে সম্প্রতি, তিব্বতের ধর্মীয় নেতা দলাই লামার উত্তরসূরি বেছে নেওয়ার বিষয়ে চিন দাবি করে, তারাই তিব্বতের পরবর্তী ধর্মীয় গুরু বেছে নেবে। বেজিংয়ের এই দাবির বিরোধিতা করা হচ্ছে ভারতের অনেক শহরেই। লাদাখ থেকে হিমাচলপ্রদেশের ধর্মশলা পর্যন্ত ভারতীয় বৌদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা ১৪তম দলাই লামার উত্তরসূরি নিয়োগে চিনের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করেছেন। এ বিষয়ে বৌদ্ধ সংগঠনগুলো একটি প্রস্তাবনাও পাস করেছে। প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, দলাই লামার উত্তরসূরি বেছে নেওয়ার অধিকার শুধুমাত্র দলাই লামারই রয়েছে। লাদাখ বৌদ্ধ সমিতিও এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে। অন্যদিকে, চিনা কমিউনিস্ট পার্টির সরকার পরবর্তী দলাই লামাকে বেছে নেওয়ার অধিকারের দাবিতে অনড়।
প্রসঙ্গত, দলাই লামা নিয়ে নিয়ে চিনের এই দাবি মার্কিন-তিব্বত নীতির বিরুদ্ধে। সেই নীতি অনুযায়ী, তিব্বতিদের পরবর্তী ধর্মগুরু বেছে নেওয়ার অধিকার থাকবে দলাই লামার কাছে। বর্তমানে তিব্বতের দলাই লামা হলেন তেনজিন গ্যায়ৎসো। তাঁর বয়স যখন দুই বছর ছিল, তখনই তাঁকে দলাই লামা নির্বাচিত করা হয়েছিল। তবে চিনের তিব্বত দখলের পর তিব্বতিরা ভারতে নির্বাসিত জীবনযাপন করতে বাধ্য হন। দলাই লামা তাওয়াং হয়ে ভারতে আসেন। তখন থেকে তিনি ভারতেই বসবাস করছেন। বৌদ্ধ সংগঠনগুলো বলেছে, দলাই লামা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তিনি তাঁর পরবর্তী জন্ম চিন বা তিব্বতে নেবেন না। তিনি এই উভয় ভৌগোলিক সীমানার বাইরে জন্মগ্রহণ (পুনর্জন্ম) করবেন। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বলছেন, বর্তমান দলাই লামার দেহত্যাগের পর চিন যদি অন্য কোনও দলাই লামাকে লাসায় বসায়, তাহলে তাঁকে মেনে নেওয়া হবে না।
প্রসঙ্গত, দলাই লামা নির্বাচনের প্রশ্নের প্রেক্ষিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু তাওয়াং। কয়েক দশক আগে এই তাওয়াং দিয়েই ভারতে এসেছিলেন বর্তমান দলাই লামা। শুধু তাই নয়, তিব্বতের পঞ্চম দলাই লামার জন্ম হয়েছিল এই তাওয়াঙে। এই আবহে তাওয়াং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য খুব পবিত্র একটি জায়গা। এই আবহে তাওয়াঙে চিনের আগ্রাসন এবং দলাই লামা নির্বাচন নিয়ে এই টানাপোড়েন পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। এমনিতেই অরুণাচলপ্রদেশকে 'দক্ষিণ তিব্বত' হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকে চিন। এই আবহে অনেক বিশ্লেষকেরই মত, তাওয়াঙে হামলা চালিয়ে ভারতের পাশাপাশি দলাই লামাকেও বার্তা দিতে চাইছে বেজিং। এদিকে এই সবের মাঝেই শীঘ্রই বিহার সফরে আসছেন বৌদ্ধ ধর্মগুরু দলাই লামা। সেখানে তিনি একমাস থাকবেন বলে জানা গিয়েছে। বুদ্ধগয়ায় যে বোধিবৃক্ষের নীচে বসে গৌতম বুদ্ধ তাঁর বোধিসত্ত্ব লাভ করেছিলেন, সেখানেই আসবেন দলাই লামা।