অপচনশীল। পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর। অথচ প্রতিনিয়তই তা ছড়াচ্ছে আমাদের আশেপাশে। জিনিসটা হল সিগারেটের ফিল্টার। আর সেই অব্যবহারযোগ্য জিনিসটা নিয়েই লাভজনক ব্যবসা দুই ভাইয়ের।
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর! এই প্রচার সকলেই শুনেছেন। ক'জন মানেন না মানেন ভাবনার বিষয়। কিন্তু সিগারেট বর্জ্য সম্পর্কে কতটুকু জানি আমরা? চার বছর আগে, সিগারেটের বাট নিয়ে ভাবতে বসেন নমন গুপ্ত নামের এক যুবক। পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর। অপচনশীল। অথচ সেটাই রয়েছে বিপুল পরিমাণে। এটা দিয়ে কি কিছু করা যায় না?
'তখন কলেজে পড়তাম। আমার বন্ধুরা ধূমপান করত। আমি দেখতাম, সিগারেট তো খেল। তারপর সিগারেটের বাটটা পাবলিক প্লেসে, অ্যাশট্রে বা ট্র্যাশ বিনে ফেলে দিত। তখনই সিগারেটের বর্জ্য এবং পরিবেশের উপর এর প্রভাব সম্পর্কে জানার চেষ্টা শুরু করি,' বলেন নমন। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন তিনি।
একটি সিগারেটের বাট সম্পূর্ণ রূপে পচতে প্রায় ১২ বছর সময় নেয়। কারণ ফিল্টার ৯৫% প্লাস্টিক (সেলুলোজ অ্যাসিটেট) দিয়ে তৈরি।
'এটাই আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট ছিল। আমি তখনই বুঝতে পারি যে, বিশ্বের বৃহত্তম মানবসৃষ্ট দূষক সম্পর্কে কেউ সেভাবে ভাবছেই না,' বলে চলেন নমন।
সঙ্গে সঙ্গে দাদা বিপুল গুপ্তের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করেন। বিপুল একজন ইঞ্জিনিয়ার। সিগারেটের বাট পুনর্ব্যবহারের কোনও পরিবেশ-বান্ধব সমাধান খুঁজে বের করতে উঠেপড়ে লাগেন দুই ভাই।
২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮-তে, দুই ভাই মিলে সিগারেটের ফিল্টার আপসাইকেল করার এটি সংস্থা স্থাপন করেন। 'কোড এফর্ট' নামে একটি প্রাইভেট কোম্পানি শুরু করেন তাঁরা।
'আমার ভাইয়ের বিজ্ঞানের ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। ও পরিকাঠামো, যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিকের বিষয়ে সাহায্য করেছে,' বলেন নমন।
সিগারেটের প্রতিটি উপাদান যেমন, ফাইবার (সেলুলোজ অ্যাসিটেট) কাগজ, অবশিষ্ট তামাক আপসাইকেল করতে শুরু করেন তাঁরা। তাই দিয়ে ঘর সাজানোর জিনিস, সফট টয়জ, শিল্পকর্ম, বোতাম, ভাস্কর্য, মশা নিরোধক, কম্পোস্ট পাউডার উত্পাদনের উপায় বের করেন তাঁরা।
নমন জানান, ভারতে প্রায় ২৫ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী রয়েছেন। তাঁরা প্রতিদিন গড়ে ২-৩টি সিগারেট খান। ফলে হিসাব অনুযায়ী ভারতে প্রতি বছর প্রায় ১০,০০০ কোটি সিগারেট খাওয়া হয়। তার বাটের মোট পরিমাণ ২৬,৪৫৪ টন। ফলে কাঁচামাল যে অঢেল ও বিনামূল্যের, তা বলাই বাহুল্য।
কাপড় কুড়ানো ব্যক্তিদের সিগারেটের বাট সংগ্রহ করার কাজে লাগানো হয়। বর্তমানে ২৫০টিরও বেশি জেলা জুড়ে ২,০০০-এরও বেশি ব্যক্তি এই কাজ করছেন। প্রতিদিন ১,০০০ কেজি পর্যন্ত সিগারেটের বর্জ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
সিগারেট খাওয়ার শেষে সাধারণত তাতে কিছুটা তামাক লেগে থাকে। সেই তামাক দিয়ে প্রাকৃতিক কীটনাশত তৈরি হয়। কম্পোস্ট পাউডার বানিয়ে সেটা এলাকার বিভিন্ন নার্সারিতে পাঠানো হয়।
দ্বিতীয় উপাদান হল কাগজ। সেটা দিয়ে কাগজের শিটে গঠন করা হয়। কাগজ থেকে মশা নিরোধকও বানানো হয়।
তৃতীয় উপাদানটি হল ফাইবার, যাকে বৈজ্ঞানিকভাবে সেলুলোজ অ্যাসিটেট বলা হয়। ফাইবার পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার পরে, সেটা গিয়ে স্টাফিং কুশন, বালিশ, গদি, সফট টয়জ, আর্টিফ্যাক্ট এবং আরও অনেক কিছু বানানো হয়।
বর্তমানে ১০০-রও বেশি মহিলা কোড এফর্টে সিগারেটের ফাইবার থেকে বিভিন্ন পণ্য বানানোর কাজ করেন। ২০১৮ সাল থেকে, কোড এফর্ট সামগ্রিকভাবে প্রায় ৭৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছে।
বর্তমানে, কোড এফর্ট দুটি উদ্যোগ পুঁজিপতির সঙ্গে আলোচনা করছে।