বিজেপির সঙ্গে জোট মেনে নেবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন জনতা দল সেকুলারের কর্ণাটক প্রদেশ সভাপতি সিএম ইব্রাহিম। তাঁর সেই বিদ্রোহে দলে ভাঙন ধরার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। এই আবহে কড়া হাতে পরিস্থিতি সামাল দিতে ময়দনে নামলেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেবেগৌড়া। কর্ণাটকের রাজ্য ওয়ার্কিং কমিটি ভেঙে দিলেন দেবেগৌড়া। এই আবহে জেডিএস-এর রাজ্য সভাপতি পদ চলে যায় ইব্রাহিমের। আপাতত দলের রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব নিজের ছেলে তথা কর্ণাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এইচডি কুমারস্বামীর হাতে দিয়েছেন দেবেগৌড়া।
উল্লেখ্য, গত বিধানসভা নির্বাচনে 'কিং মেকার' হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল জেডিএস। এর আগে ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃতীয় বৃহত্তম দল হয়েও দর কষাকষিতে জয়ী হয়েছিল জেডিএস। 'বিজেপিকে ঠেকাতে' জেডিএস-কে সমর্থন জানিয়ে সরকার গঠন করেছিল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন এইচডি কুমারস্বামী। পরে অবশ্য ২০১৯ সালেই সেই সরকার পড়ে গিয়েছিল। ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি। এরপর থেকেই কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব ক্রমেই বেড়েছিল জেডিএস-এর। এরপর ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস একাই জয়ী হয় কর্ণাটকে। পায়ের তলার জমি আলগা হয় জেডিএস-এর। দেবেগৌড়ার দলকে 'বিজেপির বি টিম' বলে আক্রমণ শানাতে থাকে কংগ্রেস। পরে রাজ্য রাজনীতিতে অস্তিত্ব বজায় রাখতে বিজেপির সঙ্গে লোকসভা নির্বাচনে হত ধরার সিদ্ধান্ত নেন দেবেগৌড়া। আর তাতেই আপত্তি জানান দলের রাজ্য সভাপতি ইব্রাহিম।
এর আগে বিজেপি বিরোধী জোট গড়ার লক্ষ্যে কলকতায় এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে গিয়েছিলেন কুমারস্বামী। তবে নির্বাচনের ফলাফল বের হতেই অঙ্ক বদলে যায়। ক্রমেই বিজেপির ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করে জেডিএস। কর্ণাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিএস ইয়েদুরাপ্পার সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন কুমারস্বামী। এরপর রাজনৈতিক অঙ্ক কষে বিজেপির সঙ্গেই হাত মেলানোর সিদ্ধান্ত নেয় জেডিএস। আর এরপরই গত ১৬ অক্টোবর 'বিদ্রোহ' ঘোষণা করেন দলের রাজ্য সভাপতি।
১৬ অক্টোবর দলে 'সমমনা' ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন ইব্রাহিম। এরপরই জেডিএস-এ চিড় ধরার সম্ভাবনা দেখা দেয়। সেই বৈঠকে ইব্রাহিম দাবি করেন, তাঁর নেতৃত্বে থাকা দলই 'আসল'। এই আবহে তিনি একটি কোর কমিটি গঠনের ঘোষণা করেন। সেই কমিটির তরফ থেকে দেবেগৌড়ার কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়ার কথা ছিল বিজেপি জোটের বিরুদ্ধে। তবে এই বিদ্রোহ দমনে কড়া পদক্ষেপ করলেন দেবেগৌড়া। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, মহারাষ্ট্র, কেরল, তামিলনাড়ুর রাজ্য ইউনিটগুলি বিজেপির সঙ্গে জোট বাঁধার বিষয়ে সম্মতি প্রদান করেছে। উল্লেখ্য, কেরলে বাম সরকারের অংশ জেডিএস। সে রাজ্যে তাদের একমাত্র বিধায়ক রাজ্যের মন্ত্রী। এর আগে সাম্প্রতিককালে মহারাষ্ট্রে উদ্ধব ঠাকরে এবং শরদ পাওয়ারের দলে চিড় ধরেছে। তবে এই দুঁদে রাজনীতিবিদরা দলে ভাঙন রুখতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তবে দেবেগৌড়া দলকে অক্ষত রাখতে বদ্ধপরিকর।