১৯৬৩ সালে এক প্রভাবশালী পরিবারে জন্ম হয়েছিল মুখতার আনসারির। পরবর্তীতে উত্তরপ্রদেশের অপরাধ ও রাজনীতির জগতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তাঁর নামে ১৪ টি খুন সহ ৬৩টি ফৌজদারি মামলা ছিল। এর মধ্যে আটটিতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন ও সাজা পেয়েছিলেন। বাকি আরও বহু মামলার বিচার চলাকালীনই বৃহস্পতিবার বান্দার একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান। (আরও পড়ুন: মোদী নাকি মমতা, কে বড় 'একনায়ক'? বাউন্সারের সামনে পড়ে যা বললেন PK)
আরও পড়ুন: 'এটা করা যায় না… ৬ মাসে…', এই রাজ্যের সরকারি কর্মীদের পক্ষে বড় রায় আদালতের
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের টিকিটে উত্তরপ্রদেশের মউ থেকে পাঁচবার বিধায়ক নির্বাচিত হওয়া গ্যাংস্টার মুখতারের পারিবারি কযোগ আছে ভারতের প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারির সঙ্গে। মুখতারের কাকা হন হামিদ। খুব অল্প বয়সেই অপরাধ জগতে প্রবেশ করেছিলেন মুখতার। (আরও পড়ুন: স্ত্রী 'খোঁচা' মারেন! অকপট রোম্যান্স নিয়ে, সংসারের অজানা কথা প্রশান্তের মুখে)
আরও পড়ুন: 'বিষ দেওয়া হয়েছে', মুখতার আনসারির মৃত্যু নিয়ে বিস্ফোরক ছেলে, জরুরি বৈঠকে যোগী
এদিকে মুখতারের দাদা সিবগতুল্লা আনসারি দু'বারের বিধায়ক। মুখতারের অপর ভাই আফজাল আনসারি পাঁচবারের বিধায়ক এবং বর্তমান সাংসদ। মুখতারের দাদু মহম্মদ উসমান ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ব্রিগেডিয়ার ছিলেন। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাক যুদ্ধে শহিদ হয়েছিলেন তিনি। পেয়েছিলেন মরণোত্তর মহাবীরচক্র সম্মান। আর মুখতারের ঠাকুরদার নামও ছিল মুখতার আহমেদ আনসারি। তিনি কংগ্রেস সভাপতি হয়েছিলেন। পরে মুসলিম লিগের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। তিনি জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও ছিলেন।
- মুখতার আনসারির বিরুদ্ধে প্রথম মামলা হয়েছিল ১৯৭৮ সালে। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর। গাজিপুরের সৈয়দপুর থানায় অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে সেই মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
- ১৯৮৬ সালের মধ্যে মুখতার আনসারি কন্ট্রাক্ট মাফিয়া সার্কেলে একটি সুপরিচিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন। ওই বছর তাঁর বিরুদ্ধে গাজিপুরের মহম্মদাবাদ থানায় আরও একটি খুনের মামলা দায়ের করা হয়।
- পরবর্তী এক দশকে মুখতার আনসারি অপরাধের সাধারণ মুখ হয়ে ওঠেন এবং তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগে কমপক্ষে আরও ১৪টি মামলা দায়ের করা হয়।
- মুখতার আনসারির বিরুদ্ধে ২০০৫ সাল থেকে খুন-সহ ২৮টি ফৌজদারি মামলা এবং উত্তরপ্রদেশের গ্যাংস্টার আইনে সাতটি মামলা রয়েছে।
- ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আটটি ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন গ্যাংস্টার-রাজনীতিবিদ মুখতার। বর্তমানে বিভিন্ন আদালতে ২১টি মামলার বিচার চলছিল মুখতারের বিরুদ্ধে।
- প্রায় ৩৭ বছর আগে জালিয়াতি করে অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার মামলায় মুখতার আনসারিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২.০২ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছিলেন বারাণসীর এমপি-এমএলএ আদালত।
- ১৯৯৭ সালের ২২ জানুয়ারি বিজেপি নেতা ও কয়লা ব্যবসায়ী নন্দ কিশোর রুংটাকে অপহরণ ও হত্যার মামলা না চালানোর জন্য মহাবীর প্রসাদ রুংটাকে হত্যার হুমকি দেওয়ার জন্য মুখতার আনসারিকে সাড়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয় বারাণসীর সাংসদ/এমএলএ আদালত।
- ২০১০ সালে দায়ের হওয়া গ্যাংস্টার আইনের মামলায় মুখতার আনসারিকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছিল গাজিপুরের একটি সাংসদ/এমএলএ আদালত।
- প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক তথা বর্তমান উত্তরপ্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অজয় রাইয়ের বড় ভাই অবদেশ রাই খুনের মামলায় মুখতার আনসারিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় বারাণসীর এক সাংসদ/বিধায়ক। ১৯৯১ সালের ৩ অগস্ট বারাণসীর লাহুরাবীর এলাকায় বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন অবদেশ রাই ও তাঁর ভাই অজয়।
- এদিকে ২০০৫ সালে তৎকালীন বিজেপি বিধায়ক কৃষ্ণানন্দ রাই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত ছিলেন মুখতার। গাজিপুরের সাংসদ/এমএলএ আদালত এই মামলায় আনসারিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়।
- ২০২০ সাল থেকে আনসারি গ্যাংয়ের ৬০৮ কোটি টাকার অবৈধ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত বা ভেঙে দেয় উত্তরপ্রদেশ পুলিশ।
- পূর্ব উত্তরপ্রদেশের মউ সদর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে পাঁচবার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন মুখতার আসনারি। দু'বার বহুজন সমাজ পার্টির প্রার্থী হিসাবে, দু'বার নির্দল হিসাবে এবং একবার কৌমি একতা দলের প্রার্থী হিসাবে।
- ২০২২ সালে মুখতার আনসারি তাঁর বড় ছেলে আব্বাস আনসারির হাতে মউ সদরের ব্যাটন হস্তান্তর করেছিলেন। তিনি ২০২২ সালে সুহেলদেব ভারতীয় সমাজ পার্টির প্রার্থী হিসেবে সমাজবাদী পার্টির সমর্থনে এই বিধানসভা আসন থেকে জিতেছিলেন।