প্রয়াত হলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রঘুবংশ প্রসাদ সিং। রবিবার দিল্লির এইমসে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৭৪।
করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সমস্যার জন্য সপ্তাহখানেক ধরে দিল্লির এইমসে ভরতি ছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তারইমধ্যে গত বৃহস্পতিবার লালুপ্রসাদ যাদবের আরজেডি থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। স্বভাবতই বিহার ভোটের আগে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে উঠেছিল। কিন্ত শুক্রবার রাতের দিকে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছিল। তাঁর এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি সংবাদসংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছিলেন, শুক্রবার রাতে ১১ টা ৫৬ মিনিটে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়েছে।
কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ ১-এর গ্রামীণ উন্নয়ন মন্ত্রীর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল বিহারের সীতামাঢ়ি জেলায় সংযুক্ত সোশালিস্ট পার্টির সচিব হিসেবে।১৯৭৭ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আঙিনায় প্রবেশ করেছিলেন। তারপর মন্ত্রী, ডেপুটি স্পিকারের মতো দায়িত্ব সামলে ১৯৯৬ সালে বৈশালী লোকসভা আসন থেকে জয়ী হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ১৯৯৮ সালের মধ্যে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী (স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত) ছিলেন। তারইমধ্যে আশির দশকের শেষভাগ থেকে লালুপ্রসাদ যাদবের বিশ্বস্ত সঙ্গী ছিলেন। যে সম্পর্ক মৃত্যুর কয়েকদিন আগেই ছিন্ন হয়েছিল।
ভারতের বৃহত্তম জনকল্যাণ কর্মসূচির (মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুবাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট বা মনরেগা) স্থপতি ছিলেন তিনিই। প্রাথমিকভাবে সেই প্রকল্পের খসড়া তৈরি করেছিল সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বাধীন জাতীয় উপদেষ্টা কাউন্সিল। তবে সেই প্রকল্পে গতি দিয়েছিলেন রঘুবংশ প্রসাদ সিং। কংগ্রেসের কমপক্ষে তিন হেভিওয়েট নেতা প্রকল্পের কার্যকারিতার বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলেন না। বরং জনগণের অর্থ খরচ হয়ে যাওয়ার প্রকল্প হিসেবে মনরেগাকে দেখেছিলেন তাঁরা।
তারইমধ্যে একদিন বিকেলে সংসদের সেন্ট্রাল হল দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন সোনিয়া। সেই সময় তাঁর কাছে আসেন রঘুবংশ প্রসাদ। প্রকল্প কাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে অত্যধিক বিলম্ব নিয়ে কথা বলেছিলেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে ডাক পড়েছিল তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। যিনি মনরেগার মন্ত্রী গোষ্ঠীর প্রধান ছিলেন এবং তাঁকে প্রকল্পে দ্রুততা আনতে বলেছিলেন সোনিয়া। তারপরই ফাইলের আদানপ্রদানে এসেছিল গতি। শেষপর্যন্ত ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ২০০ টি জেলায় ভারতের প্রথম নিশ্চিত চাকরির প্রকল্প শুরু হয়।
কেন্দ্রে শাসক দলের পরিবর্তনেও সেই প্রকল্প টিকে আছে এবং করোনায় ধুঁকতে থাকা অর্থনীতিতে লাখ লাখ পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছে লাইফলাইন হয়ে উঠেছে। চলতি অর্থবর্ষে সেই প্রকল্পে এক লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।